আবাসন সমস্যা দূর হচ্ছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের

অবশেষে দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যা দূর হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। স্বাস্থ্যকর্মীদের এ আবাসন সমস্যা দূরীকরণে সাড়া মিলেছে মন্ত্রণালয়েরও। ইতোমধ্যে তাঁদের জন্য গণপূর্ত বিভাগের বহুতল ভবনে মোট জনবলের ২০ শতাংশ বাসা বরাদ্দের জন্যও চিঠিও দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফলে এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হবে বলে মত চমেক হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

এর আগে গত ৩ আগস্ট দৈনিক পূর্বকোণে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ৬৭ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ ভবনে চমেক হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিনাতিপাতের চিত্র তুলে ধরা হয়। এসব ভবনে একপ্রকার মানবেতর জীবন-যাপন করে যাচ্ছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা।

শুধু তাই নয়, স্বল্প সংখ্যক বাসা থাকলেও হাসপাতালে নিয়োজিত কর্মচারীদের প্রায় ৯০ শতাংশই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার তথ্যও তুলে ধরা হয়। যদিও একই সময়ে এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসন সমস্যা দূর করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন। আর প্রতিবেদন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চিঠির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণপূর্ত বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি প্রেরণ করেন।

গত ৪ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব মো. আবদুছ সালাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক চট্টগ্রাম শহরে নির্মাণাধীন বহুতল আবাসিক ভবনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণী সরকারি কর্মচারীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিবারিক বাসা বরাদ্দ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ৩৪১ জন চিকিৎসক, ১ হাজার ২১৩ জন ২য় শ্রেণির কর্মকর্তা (সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ), ১০৪ জন তৃতীয় শ্রেণি ও ৩০৮ জন ৪র্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী কর্মরত আছেন।

বর্ণিত হাসপাতালের আবাসিক এলাকায় ৬০’র দশকে নির্মিত বাসস্থানে অল্প সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীগণ বসবাস করেন। বর্তমানে বাসাস্থানসমূহ পুরাতন, জরাজীর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে উক্ত হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। চমেক হাসপাতাল নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অবস্থিত। এ এলাকায় মানসম্মত বাসার ভাড়া অত্যাধিক।

এ কারণে অধিকাংশ চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে দূর দূরান্ত থেকে এসে প্রতিদিন অফিস করতে হয়। এতে করে দৈনিক কয়েক ঘণ্টা সময় অপচয় হওয়ায় রোগী সেবা ব্যাহত হয়।

এমতাবস্থায় গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক চট্টগ্রাম শহরে পাঁচলাইশসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে অথবা উপযুক্ত স্থানে/আবাসিক ভবনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও ৩য়-৪র্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাসা বরাদ্দ রাখার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. অং সুই প্রু মারমা বলেন, চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করি। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা যায়, ১৯৫৫ সালে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আগেই চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ শুরু করা হয়। যেখানে বর্তমানে ২১টি ভবন রয়েছে। পদভেদে এসব ভবনে প্রায় দেড়শ’ চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবার বসবাস করছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ভবনই এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে ওঠেছে। কিছুদিন পরপর মেরামত করা হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এ কারণে প্রায় অভিযোগ থাকে বসবাসকারীদের।