আয়ারল্যান্ডের ২৯২ রান

ত্রিদেশীয় সিরিজে আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ২৯২ রান তুলেছে আয়ারল্যান্ড।

বাংলাদেশ ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে আগেই। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এ ম্যাচটা তাই স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার। বড়জোর ফাইনালের প্রস্তুতি নেওয়ার ম্যাচ। সেই প্রস্তুতিতে বোলিংটা মোটামুটি হলো বাংলাদেশের। সেটি রান দেওয়ার বিচারে। আগের দুটি ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭০ রানের ওপাশে যেতে দেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু আজ রানটা একটু বেশি হয়ে গেল। আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৯২ রান তুলেছে আয়ারল্যান্ড।

পল স্টার্লিংয়ের দুটি ক্যাচ মিস এই রানে বেশ ভালো অবদান রেখেছে। মোসাদ্দেকের করা ২১তম ওভারের শেষ বলে তাঁর ক্যাচ ধরতে পারেননি সাব্বির রহমান। সাকিবের করা পরের ওভারের প্রথম বলে আবারও স্টার্লিংয়ের ক্যাচ মিস করেন সাইফউদ্দীন। দুই বলে দুটি ‘জীবন’ পাওয়া স্টার্লিং পরে খেলেছেন ১৪১ বলে ১৩০ রানের ইনিংস। আর আইরিশ অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড মাত্র ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি। দুজনের এ দুটি ইনিংসে ভর করে তিন শ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ পেয়েছে আয়ারল্যান্ড। তবে এই রানেও বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির উপকরণ আছে।

২০ ওভার পেরিয়ে গেছে, সাকিব আল হাসান তখনো আক্রমণে নেই! ২৮ ওভার পেরিয়ে গেল, দেখা নেই মাশরাফি বিন মুর্তজার! আজ ক্লনটার্ফে দলের সবচেয়ে সিনিয়র দুই বোলার নিজেদের আড়ালে রেখেছিলেন। শাবকদের ছেড়ে দিয়ে যেন অলক্ষ্যে পাহারা দিয়েছে দুই সিংহনেতা। তাতে লাভ কতটা হলো, তা শুধু স্কোরবোর্ড দেখে বোঝা কঠিন। আয়ারল্যান্ড বিশাল লক্ষ্য দিল, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের তিন শ তাড়ার পরীক্ষার সুযোগ। মাশরাফি শেষ পর্যন্ত খুব বেশি রান না দিলেও সাকিব করলেন খরুচে বোলিং। উইকেটশূন্য থাকলেন দুজনই। দুজনের জন্যই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নতুন দুই অভিজ্ঞতা যোগ হলো আজ।

চার পেসার নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা শুধু উইকেট পাননি। মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন ৪৩ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট আর রুবেল হোসেন নেন ৪১ রানে ১ উইকেট। তবে পেসারদের মধ্যে ম্যাচসংখ্যায় সর্বকনিষ্ঠ আবু জায়েদ ছাপিয়ে গেছেন সবাইকে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই ৫ উইকেটের দেখা পেয়েছেন এ পেসার। ৯ ওভারে ৫৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন জায়েদ। ২০১৫ সালে মোস্তাফিজুর রহমানের পর এই প্রথম কোনো পেসারের কাছ থেকে ৫ উইকেট শিকারের দৃশ্য দেখলেন বাংলাদেশের সমর্থকেরা। আবার সাকিব আল হাসানের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ওভারও দেখা গেছে। ৪৬তম ওভারে ২৩ রান দেন এ অলরাউন্ডার। বল হাতে আজ দিনটা তাঁর ভালো যায়নি। সতীর্থরা ক্যাচ ছেড়েছে আর সাকিবও ছিলেন বেশ খরুচে। ৯ ওভারে ৬৫ রান দিয়েছেন সাকিব।

এর আগে ইনিংসের চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলেই আঘাত হানেন পেসার রুবেল হোসেন। তাঁর বলটি জেসন ম্যাককুলামের ব্যাট ছুঁয়ে সোজা জমা পরে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা লিটন দাসের হাতে। ২৩ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। অ্যান্ডি বালবার্নিও দলীয় ৫৯ রানের মধ্যে ফিরলে কিছুটা বিপদে পরেছিল স্বাগতিকেরা। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে পোর্টারফিল্ড-স্টার্লিং ১৭৪ রানের জুটি গড়ে ভিত শক্ত করেন। শেষ ১০ ওভারে ভালোই রান তুলেছে আয়ারল্যান্ড। এই ৬০ বলে ৯৩ রান তুলেছে পোর্টারফিল্ডের দল। স্টার্লিং ও পোর্টারফিল্ড—এ দুই ব্যাটসম্যানকেই ফিরিয়েছেন আবু জায়েদ। বলব্রাইনসহ প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে চারজনই তাঁর শিকার। শেষ দিকে গ্যারি উইলসনকেও তুলে নেন এ পেসার।

জেতার লক্ষ্যে খেলছে বাংলাদেশ। তিন শ তাড়া করে জেতার শক্তিটারও পরীক্ষা হয়ে যাক! তিন শর বেশি রান তাড়া করে বাংলাদেশে জিতেছে মাত্র তিনবার। সত্যি বলতে, ২৫০-এর বেশি তাড়া করে জেতার কীর্তিই আছে মোটে ১০টি। প্রায় সমান্তরালে চলা ইংল্যান্ড-পাকিস্তান সিরিজের সম্পন্ন দুই ম্যাচে ৪ ইনিংসে ১৪৫১ রান উঠেছে! দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩৭৩ রান করেও ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতেছে মাত্র ১২ রানে। তৃতীয় ম্যাচে ৩৫৮ রান করেও পাকিস্তান রক্ষা পায়নি। ইংল্যান্ড জিতেছে ৬ উইকেট আর ৩১ বল হাতে রেখে! বিশ্বকাপে তিন শ যে করতেই হবে, তার বার্তা দিয়ে রাখছে ডাবলিন থেকে বিমানে খুব কাছের দূরত্বে চলতে থাকা সেই সিরিজ।