মির্জা ইমতিয়াজ শাওন:
হজ ইসলামের মৌলিক পাঁচ ভিত্তির অন্যতম। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর হজ ফরজ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে (সুরা আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)।’
২০২২ সালের পবিত্র হজ পালিত হবে আগামী ৮ জুলাই। সৌদি আরব এমনটি ঘোষণা করেছে।
গত বুধবার (২৯ জুন) সৌদি আরবে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে ৩০ জুন জিলহজ মাস গণনা শুরু হয়। এ হিসেবে আগামী ৮ জুলাই শুক্রবার হজের মূল কার্যক্রম ‘ইয়াওমে আরাফা’ অনুষ্ঠিত হবে।
হিজরি জিলহজ মাসের ৯ তারিখ হজের নির্ধারিত দিন। এ দিন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত মিলনস্থল আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হন।
হজের প্রকারভেদ
সম্পাদন পদ্ধতি অনুসারে হজ তিন প্রকার: (১) ইফরাদ, (২) কিরান ও (৩) তামাত্তু। শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পন্ন করলে একে ‘ইফরাদ হজ’ বা একক হজ বলা হয়। ইফরাদ হজ পালনের জন্য ঢাকা থেকে শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ ও সায়ি করে ইহরাম না ছেড়ে ১০ জিলহজ হজ সম্পাদন হওয়ার পর ইহরাম ছাড়তে হবে।
একই ইহরামে হজ ও ওমরাহ একত্রে সম্পন্ন করলে তাকে ‘কিরান হজ’ বা যৌথ হজ বলা হয়। একত্রে ইহরামের নিয়ত করে মক্কায় পৌঁছার পর প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ি করে ইহরাম না ছেড়ে সেই ইহরামেই হজ সম্পাদন করে ১০ জিলহজ ইহরাম ছাড়তে হবে।
একই সফরে প্রথমে ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্নপূর্বক হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পাদন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বা সুবিধাজনক হজ বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ করে থাকেন। তামাত্তু হজের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে শুধু ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফ পৌঁছে তাওয়াফ ও সায়ি করে চুল কেটে বা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম সমাপ্ত করতে হবে। এরপর ৭ জিলহজ হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে ১০ জিলহজ তা সমাপ্ত করতে হবে।
কিরান ও তামাত্তু হজে দমে শোকর বা কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। অন্যথা ১০টি রোজা পালন করতে হবে, এর মধ্যে অন্তত তিনটি রাখতে হবে হজকালীন মক্কায়, তবে হজের বা আরাফাতের দিন ও কোরবানির ঈদের দিন ব্যতীত অন্য দিনগুলোতে।
হজ এর ১ম দিন: মিনার উদ্দেশে যাত্রা-

৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত এই পাঁচ দিনকে হজের দিন বলা হয়। আপনি যদি তামাত্তু হজ পালনকারী হয়ে থাকেন তাহলে এ দিন আগের মতো আবার ইহরাম বেঁধে নিন। তারপর এভাবে ইহরামের নিয়ত করুন : ‘হে আল্লাহ আমি তামাত্তু হজ করতে ইচ্ছা করেছি, আপনি এ হজ আমার জন্য সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তিনবার তালবিয়া একটু উচ্চস্বরে পড়ুন। (মহিলারা নীরবে পড়ুন)। যারা কিরান বা ইফরাদ হজ পালন করার নিয়ত করেছেন, তারা তো আগে থেকেই ইহরামের অবস্থায় আছেন, কাজেই নতুন করে ইহরাম বাঁধতে হবে না। ৮ জিলহজ সকালে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন। জোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং ৯ জিলহজের ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করা এবং রাতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নাত।
মিনা :
তাবুর শহর হিসেবে পরিচিত মিনা হল সৌদি আরবের মক্কা প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত মক্কা শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকা। মক্কা থেকে এর দূরত্ব ৫ কিমি এবং এটি মক্কা থেকে আরাফাতের দিকে যাওয়ার সড়কের পাশে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ২০ বর্গকিমি।হজ্জের অংশ হিসেবে মিনায় অবস্থান করতে হয় বলে মিনা অধিক পরিচিত। ১,০০,০০০ এর চেয়েও বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাবুতে হাজিদের সাময়িক অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। তিন দিন অবস্থানকারী হজ্জযাত্রীদের জন্য আরামদায়ক থাকার পরিবেশ প্রদানের জন্য সৌদি আরব ধারাবাহিকভাবে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে মিনায় বিশ্বের বৃহত্তম তাবুর শহর নির্মাণ করেছে। দামি উপকরণ টেফলন ও ফাইবার গ্লাসে তৈরি তাবুর ব্যবহার শুরু হয়। এর খরচ বাড়ি নির্মাণের চেয়েও বেশি। কিন্তু এরকম তাবু আগুণ ও বাতাস প্রতিরোধক এবং কমপক্ষে ৫০ বছর ব্যবহার করা যায়। সুতরাং এ শহরটি দেখতে খুবই সুন্দর। পাশাপাশি হজ্জযাত্রীদের জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক জায়গা। শয়তানের প্রতীক স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ করার হজ্জের রীতি মিনায় সম্পাদন করা হয়।
চলবে
লেখক : মির্জা ইমতিয়াজ শাওন, সাংবাদিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক- বা’বুল কাবা হজ কাফেলা











