চিরচেনা পাটুরিয়া ঘাটের অচেনা রূপ

এ যেন এক অচেনা দৃশ্য। পাল্টে গেছে পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌ-রুটের সেই চিরচেনা রূপ। যেখানে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা যানজটে নাকাল থাকতো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রধান প্রবেশপথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই যানবাহন এবং যাত্রী ভোগান্তি নেই পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া ঘাটে। ট্রাক টার্মিনালে সারি সারি ট্রাকের জট নেই। ছোট গাড়ি এবং যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ কমে গেছে অনেকাংশে। সরজমিন সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, কোলাহলমুক্ত পাটুরিয়া ঘাটের অচেনা এক দৃশ্য। নেই বাসের লম্বা সারি, নেই ট্রাকের জট, ছোট গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের বিশাল বহর চোখে পড়েনি সকাল থেকেই। আঠারোটি ফেরির মধ্যে বেশির ভাগ ফেরি ঘাটে অলস সময় পার করছে। হকারদের দৌড়ঝাঁপ তেমন ছিল না।

যানবাহন ও যাত্রী না থাকায় ঘাট এলাকায় ছোট ছোট পান এবং চায়ের দোকানের ব্যবসায়ীদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। পাটুরিয়া ৩, ৪ ও ৫ নং ফেরিঘাটগুলো পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনেও যানবাহন ও যাত্রীর চাপ ছিল। সেতু উদ্বোধনের পর পাল্টে গেছে সেই চিরচেনা দৃশ্য। সোমবার সকাল ৯টায় তিনটি ঘাটের কোনো ঘাটেই যানবাহনের এবং যাত্রীর চাপ ছিল না একেবারেই। ফেরিগুলোকে দেখা গেছে অলস সময় পার করতে।
বেলা ১১টার পর কিছু যাত্রীবাহী বাসের দেখা মিলে পাটুরিয়া ঘাটে। তাও সংখ্যায় খুবই কম। ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি পার হতে দেখা গেছে এক ঘণ্টায়। পাটুরিয়া বাসের ট্রাকের টিকিট কাউন্টার থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত একেবারেই ফাঁকা। দু’ একটি করে গাড়ি আসছে আর সেই গাড়িগুলো অনায়াসেই ফেরিতে উঠে পদ্মা পাড়ি দিয়ে দৌলতদিয়া প্রান্তে যাচ্ছে। বিন্দু পরিমাণ দুর্ভোগ আর ভোগান্তি গায়ে লাগেনি যাত্রী কিংবা যানবাহন চালকদের। বাসচালক, যাত্রী এবং ট্রাকচালকদের সঙ্গে কথা হলে তারা মানবজমিনকে জানান, ১৯৯২ সালে পাটুরিয়া ঘাট চালু হওয়ার পর থেকে দুর্ভোগ-ভোগান্তি মাথায় নিয়েই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের। গোল্ডেন লাইন পরিবহনের যাত্রী রেহেনা আক্তার বলেন, পরিবার নিয়ে বোয়ালমারী যাচ্ছি। পাটুরিয়া ঘাটে এসে মনে হচ্ছে এ যেন এক অচেনা ঘাটে এসে পৌঁছালাম। গাড়ির চাপ নেই। ঘাটে এসে ১০ মিনিটেই ফেরিতে উঠতে পেরেছি। অথচ আগে এত স্বাভাবিক ঘাট দেখি নাই। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে আজ শান্তিতে ফেরিতে উঠে বাড়ি যেতে পারছি। ফেরির মাস্টাররা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌ-রুটে যানবাহনের চাপ কমে যাওয়ায় অনেকটাই ফেরিগুলোকে নিয়ে অলস সময় পার করতে হচ্ছে। তবে পদ্মায় স্রোত থাকার কারণে পারাপারে সময় বেশি লাগছে বলে তারা জানান।


বিআইডব্লিউটিসি’র ডিজিএম শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ মানবজমিনকে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে ঠিকই কিন্তু আগামী সাতদিন না যাওয়া পর্যন্ত বোঝা যাবে না পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌ-রুটে যানবাহন পারাপার কতোটা কমবে কি বাড়বে। তবে ছোট গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের চাপ অধিকাংশেই কমে গেছে। তবে ২০ শতাংশ যাত্রীবাহী বাস এই রুটে আসছে না। তাছাড়া ট্রাক পারাপার আগের মতোই আছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুটে মোট ২১টি ফেরির মধ্যে আঠারোটি ফেরি চলাচল করছে। তিনটি ফেরি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। যানবাহনের চাপ কমে গেলেও ফেরি কমানোর সিদ্ধান্ত আপাতত নেই বলে তিনি জানান।