হজ্ব উমরাহ্ পালন একজন মুমিনের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি

আনাস বিন আব্বাস:: হজ্ব উমরাহ্ একজন মুমিনের জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা। আল্লাহ তায়ালার সাথে গভীর ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ার এই এক সুবর্ন সুযোগ। কাবার সুশীতল ছায়ায় বান্দা তার রবের সাথে মতবিনিময় করবে আবার মদিনার সবুজ গম্বুজের নিচে শুয়ে থাকা আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর দরবারে সালাম ও সালাত পেশ করবে। ইসলামের মৌলিক ও ভিত্তি পাঁচ স্তম্ভের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত হলো “হজ্ব”। আল্লাহ তায়ালা কেবলমাত্র সামর্থবান মুমিন নর-নারীর উপর তা জীবনে একবার ফরজ করেছেন। সামর্থ না থাকলে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দূর আরবে গিয়ে হজ্ব করা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। সামর্থবানদের জন্য এই বিধান রাখা বান্দার প্রতি আল্লাহর বড় দয়া। হজ্বের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করার জন্য ভূপৃষ্ঠে সর্বপ্রথম দুজন নবীর হাত ধরে যে পবিত্র ঘর নির্মিত হয়েছে তা হলো ” কাবা” কাবা ঘর নির্মানের পর আল্লাহ তায়ালার আদেশে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম মানবসমাজের মাঝে হজ্বের প্রথম ঘোষণা দেন। কুরআনে যা বর্ণিত হয়েছে و أذن فى الناس بالحج يأتوك رجالا وعلى كل ضامر يأتين من كل فج عميق. (٢٧) আর (হে ইবরাহীম) আপনি মানুষের মাঝে হজ্বের ঘোষণা দিন, তখন তারা আপনার কাছে উপস্থিত হবে পায়ে হেঁটে এবং প্রত্যেক শীর্ণ উটে চড়ে, যে উটগুলো দূরের পথ অতিক্রম করে এসে পৌছবে। (আল-হজ্ব, ২২ : ২৭) যে ব্যক্তি হজ্বের প্রতিটি আহকাম ও বিধান অনুসরণ করবে এবং কুরআন এবং হাদিসে বর্ণিত সকল মন্দ ও গর্হিত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে, বাঁচিয়ে রাখবে, সে হজ্ব থেকে এমন নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে যেমন আজ মাত্র সে মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- من حج لله، فلم يرفث و لم يفسق رجع كيوم ولدته أمه. যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য হজ্ব করে, আর কোনরূপ অশ্লীলতা ও পাপাচারে লিপ্ত না হয়, তাহলে সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে যেদিন তার মা তাকে জন্মদান করেছে। একজন মুমিনের জন্য এটি কত বড় নেয়ামত ও সৌভাগ্যের বিষয়! সুবহানাল্লাহ!! আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাকে একজন মাসুম নিষ্পাপ বাচ্চার মতো পুত পবিত্র করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এ সকল নেয়ামত আমি তখনই অর্জন করবো যখন আমার ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য হবে। লোকদেখানো, সুনাম- খ্যাতি অর্জন যদি হয় আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাহলে আমার জন্য কেবল হালাকি আর বরবাদি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন। হজ্বের প্রস্তুতি কেমন হবে! হজ্বের প্রস্তুতি বলতে আমরা বুঝি পাসপোর্ট বানানো,টাকা জমানো ইত্যাদি। এগুলোও প্রস্তুতি ঠিক আছে তবে আমাদের মূল প্রস্তুতি হলে আল্লাহর সামনে বান্দা হিসেবে আমার উপস্থিত হওয়া এবং আল্লাহর কাছ প্রকৃত নেয়ামত ও সৌভাগ্য অর্জন করা। হজ্বের এই পুরা সফরে আমি আমার মূল্যবান সময়গুলো কীভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করে পরিপূর্ণ কাজে লাগাবো এবং নিজের জীবনকে পরিশুদ্ধ করবো সেই চিন্তা ও ভাবনা আমার মধ্যে সদা জাগ্রত থাকা চাই। শুধু ভ্রমণ ও উপভোগের যাত্রা এটি নয়! মানুষের জীবনে ভ্রমণ হলো একটি প্রিয় ও উপভোগ্য বিষয়। নিজের মতো করে ঘুরতে ফিরতে মানুষ পছন্দ করে, স্বাচ্ছন্দবোদ করে কিন্তু আমার হজ্বের সফর ঘুরার জন্য না,দুনিয়াবি অন্য কোনো কাজের জন্যও না। জীবনে একবারই যেহেতু আমি আমার ফরজ হজ্ব আদায় করতে এসেছি,আমি আমার সময়-সম্পদ সবকিছু আল্লাহর জন্য ওয়াকফ করবো। -এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা। রাহবর বা পথপ্রদর্শক এর তত্ত্বাবধানে থাকা! দীনের গুরুত্বপূর্ণ একটি আহকাম পালন করার ক্ষেত্রে শরীয়তের জ্ঞান রাখে এমন বিজ্ঞ ও মুখলিস আলিমের সাহাচর্যে থাকাটাই নিরাপদ ও যুক্তিসঙ্গত। কেননা এখানে প্রত্যেক বিধিবিধান আদায়ে তিনিই আমাকে সহযোগিতা করতে পারেন।এভাবে যদি হয় আমাদের হজ্ব পালান, আশা করা যায় আল্লাহর কাছে তা “হজ্জে মাবরুর” বা মাকবুল হজ্ব। হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত অন্য এক হাদীসে এসেছে – নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- الحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة নবীজি বলেন: মাকবুল হজ্বের বিনিময় জান্নাতই হয়। (বোখারী, ১৭৭৩ মুসলিম, ১৩৪৯) আরাফার দিনের ফজিলত! জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত অনেক। হাদিসে এসেছে যে, একেক দিনের ইবাদতের সাওয়াব এক এক হাজার বছরের ইবাদতের সমান আর আরাফার দিনের ইবাদত দশ হাজার বছর ইবাদতের সমান। হজ্বের তাওফিক হলে তো সেখানে গিয়ে দিনটি অতিবাহিত করবো। আর হজ্বের তাওফিক না হলেও প্রতিটি মুমিনের কাজ হলো এই দিনগুলোর যথাযত মূল্যায়ন ও সদ্ব্যবহার করা। হজ্ব না করার ক্ষতি ও পরিণতি! ফরজ হজ্ব আদায় করার যেমন নেয়ামত ও ফজিলত রয়েছে, ফরজ হজ্ব আদায় না করার বিষয়ে ঠিক তেমনই কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর ঘর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য যার সম্পদ ও পাথেয় আছে সে যদি হজ্ব আদায় না করে তাহলে সে ইহুদি হয়ে মরলো নাকি নাসারা হয়ে মরলো তাতে আমার কিছু আসে যায় না। (ভাবার্থ) হজ্ব পরবর্তী দিনগুলো আমার কেমন হওয়া প্রয়োজন! আল্লাহর সাথে আগে হয়তো আমার তেমন গভীর সম্পর্ক ছিল না, যথাযত ইবাদতের মাধ্যামে আমি হয়তো তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারিনি। হজ্বের মাধ্যমে আমি আমার রবের সাথে আমাদের সম্পর্ককে নবায়ন করেছি। নিবিড়ভাবে প্রতিটি ইবাদতে আত্মনিবেদনের জন্য প্রতিজ্ঞা করছি। এভাবে চলতে পারলে, চলতে থাকলে আমার হজ্ব আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার আশা রাখতে পারি এবং বাকি জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে পারি।

Open photo

আনাস বিন আব্বাস শিক্ষার্থী : আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম।