উইকেটে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ

ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচ হেরে বাংলাদেশের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি টাইগারদের। তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বরূপেই ফিরলো মাশরাফির দল। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দাপটের সঙ্গেই হারালো। তামিম-সৌম্য-সাকিবের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ক্যারিবীয়দের ৮ উইকেটে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ।

ডাবলিনের ক্যাস্টেল অ্যাভিনিউয়ে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শাই হোপের সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটে ২৬১ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩০ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় টাইগাররা।

২৬২ রানে টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার খুব সাবধানেই ইনিংস শুরু করে। তবে সময় গড়নোর সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসেন তামিম-সৌম্য। ক্যারিবীয় বোলাদের শাসন করতে থাকেন তারা।

উদ্বোধনী জুটিতে  ১৪৪ রান আসে তামিম-সৌম্যের ব্যাট থেকে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম অর্ধ-শতক তুলে নেন সৌম্য সরকার। ৬৮ বলে ৭৩ রান করে রোস্টন চেজের বলে পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ড্যারেন ব্রাভোর দুর্দান্ত কাচে আউট হন সৌম্য। সাকিবের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৫২ রান যোগ করেন তামিম। ৪৫তম ওয়ানডে অর্ধ-শতক তুলে নেন এই বাঁওপেনার। তবে সেঞ্চুরি তুলে নিতে ব্যর্থ হন তিনি। ৮০ রান করে দলীয় ১৯৬ রানে গ্যাব্রিয়ালের বলে হোল্ডারের হাতে ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরত যান তামিম।

এরপর জয়ের বাকি কাজ টুকু সাড়েন সাকিব ও মুশফিক। ক্যারিবীয় বোলাদের কোনো ধরনের সুযোগ দেননি তারা। তামিম সৌম্যের মতো অর্ধ শতক তুলে নেন সাকিবও। মুশফিকের সঙ্গে ৬৮ রানে জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন থেকে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৫ ওভার হাতে রেখে সহজ জয় তুলে নেয় টাইগারা। সাকিব ৬১ ও মুশফিক ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যাব্রিয়েল ও চেজ একটি করে উইকেট নেন।

এর আগে ত্রিদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেন উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। ব্যাটিংয়ে শুরুটা দারুণ করেন ক্যারিবীয় ওপেনার হোপ ও সুনীল অ্যামব্রিস। দু’জনে মিলে তুলেন ৮৯ রান।

ইনিংসের ১৭তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই অ্যামব্রিসকে (৩৮) ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন টাইগার অফ-স্পিনার মিরাজ। পরের ওভারে ড্যারেন ব্র্যাভোকে (১) উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিতে দিতে বাধ্য করেন সাকিব আল হাসান।

৯২ রানে ২ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন হোপ। তাকে সঙ্গ দেন রোস্টন চেজ। দু’জনে মিলে যোগ করেন ১১৫ রান। ১২৬ বলে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরির দেখা পান হোপ। সেঞ্চুরিটি ১০ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো।

সেঞ্চুরি করার পথে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের ২০০০ রান পূর্ণ করেন শাই হোপ। ৫১তম ম্যাচ আর ৪৭তম ইনিংসেই এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন এই ওপেনার। উইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে এই কীর্তি গড়ার পথে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ক্যারিবীয় গ্রেট ভিভ রিচার্ডসকেও (৪৮ ইনিংস)।

দারুণ এক ফিফটি করে মোস্তাফিজুরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন চেজ। ২ রান যোগ হতেই মাশরাফির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে ফেরেন সেঞ্চুরিয়ান হোপ। দু’জনকে মাত্র ৩ বলের ব্যবধানে ফেরান মাশরাফি। পরে তার তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন উইন্ডিজ অধিনায়ক হোল্ডারও। এরপর বলার মতো রান আসে শুধু অ্যাশলে নার্সের (অপরাজিত ১৯ রান) ব্যাট থেকে। শেষ ৫৫ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন টাইগার বোলাররা। অবশেষে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সামনে ২৬২ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছে উইন্ডিজ।

বল হাতে ১০ ওভারে ৪৯ রান খরচে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন মাশরাফি। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজ। তবে রান খরচে অকৃপণ (৮৪) ছিলেন কাটার মাস্টার। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব ও মিরাজ। রান হাতে দু’জনেই ছিলেন বেশ কৃপণ। সাকিব ১০ ওভারে খরচ করেছেন ৩৩ রান আর মিরাজ সমান ওভারে দিয়েছেন ৩৮ রান।

দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করায় ম্যাচ সেরা হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শাই হোপ।