৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ আজ

বিশ্ব অর্থনীতির অস্থির পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতির মত চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করবেন। এটি দেশের ৫১তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৩তম বাজেট। এ বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকছে মহামারীর অভিঘাত পেরিয়ে বাংলাদেশকে আবার উন্নয়নের মহাসড়কে ফিরিয়ে নেওয়া। ‘জীবন ও জীবিকা বাঁচানোর’ বাজেটের পর ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের’ পথরেখা আঁকতে গিয়ে বরাবরের মতই এবার বাজেট সাজাতে হয়েছে বড় ঘাটতি রেখে। প্রস্তাবিত বাজেটে চলতি অর্থবছরের কোভিডকালীন বাজেটের চেয়ে ঘাটতি (৬ দশমিক ২ শতাংশ) কমিয়ে জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ হিসাব করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগ হিসাব করে দেখেছে, আগামী অর্থবছরে বাজেটে সরকার ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার মত রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে। এতে বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে থাকতে পারে। শতকরা হিসাবে তা মোট বাজেটের ৩৬ শতাংশের কিছুটা বেশি। চলমান বাজেটে টাকার অঙ্কে তা ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল ঘাটতির এক-তৃতীয়াংশের বেশি আসবে ঋণ থেকে। এর মধ্যে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেই বেশি ঋণ নেওয়ার ছক আঁকছে সরকার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেট আরও বেশি ঋণনির্ভর হতে যাচ্ছে। খবর বিডিনিউজ ও বাসসের।

গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এবারের বাজেটে প্রাধিকার পাবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামের এবারের বাজেট প্রস্তুত হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশ কিছু খাত।

বৈশ্বিক ঝুঁকি কাটিয়ে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানো এবারের বাজেটের প্রধানতম লক্ষ্য। ইতোমধ্যে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থাকবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে কর বাবদ আয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটের ঘাটতি পূরণে সরকারকে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে। যে কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। যেখানে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।

বাজেটের অগ্রাধিকার খাত : কোভিড মহামারীর দুই বছর পেরিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিয়ে আসার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের অগ্রাধিকার জানাল অর্থ মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার বাজেটের আগের দিন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সঙ্গত কারণেই এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ‘আগামী বাজেটে প্রাধিকার পাবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।’

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামের এবারের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভুত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের পর অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে বাজেটের সব তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল আপলোড করা হবে। বাজেট উপস্থাপনের পরের দিন শুক্রবার বেলা ৩টায় ওসমানী মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থমন্ত্রী।