শফিউল আলম, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ দেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত এই দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আজ থেকে শতশত বছর আগের দৃষ্টিনন্দন অনেক ধর্মীয় স্থাপনা ও মসজিদ। প্রাচীন এসব স্থাপনা দেখলে আমাদের মন জুড়িয়ে যায় মুহুর্তে। এই ১২ অলিয়ার দেশে মোগল আমলে প্রতিষ্ঠা হয়েছে সুন্দর সুন্দর অসংখ্যা মসজিদ। চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলায় আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩’শ বছর আগে নির্মিত হয় এই ঐতিহাসিক মৈস্যা বিবি জামে মসজিদ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিশিষ্ট শাসন আমল শুরু হওয়া প্রায় ২৫ বছর আগে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা হয়। মৈস্যা বিবি জামে মসজিদ নির্মিত করেন সেই সময়ের জমিদার বংশের এক কন্যা মৈস্যা বিবি নিজেই। রাউজানে ঐতিহ্যবাহী দুটি মসজিদের মধ্যে সাহেব বিবি জামে মসজিদ ও মৈস্যা বিবি জামে মসজিদ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্ব-মহিমায়। এই রাউজানে অসংখ্যা অলি বুজুর্গও রয়েছে। তাদের মধ্যে এই মসজিদে রয়েছে হযরত রুস্তম শাহ নামের এক অলির মাজার। মসজিদের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, পশ্চিম রাউজানের পৌর এলাকায় হাঁড়ি মিয়া চৌধুরী বাড়িতে অবস্থতি এই শত বছরে পুরানো মৈস্যা বিবি জামে মসজিদ। সেই সময়ে এই এলাকাটি ছিল গহীন-জঙ্গল ময় এলাকা। এই গ্রামে ধর্ম প্রচারে এক মহান সুফী স্বাধক হযরত রুস্তম শাহ আসেন ধর্ম প্রচার করতে। এই মহান আল্লাহ্র প্রিয় অলি হযরত রুস্তম শাহ এই এলাকায় তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারে স্বাধনা করতেন। জানা যায়, হযরত রুস্তম শাহ অনুরোধে এই রাউজানের কন্যা মৈস্যা বিবি এই মসজিদ নির্মাণ করেন। মৈস্যা বিবি মোগল আমলে এই রাউজানের এক জমিদার বংশের কন্যা ছিলেন। এই সুন্দর মসজিদের পাশে রয়েছে হযরত রুস্তম শাহ মাজার শরিফ। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩’শ বছর আগে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা হয় বলে ইতিহাস সূত্রে জানা যায়। তবে নির্দিষ্ট কোন দিনকন জানা নেই আজাও কারো। ঐতিহ্যবাহী রাউজানের মৈস্যা বিবি জামে মসজিদ ১ গম্বুজ বিশিষ্ট হলেও বড় গম্বুজসহ আরও ছোট ছোট ৮টি গম্বুজ ও মিনার রয়েছে। মসজটি মোগল আমলে ডিমের আটা চুন-চুরকির মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের ৩ কাতার বিশিষ্ট প্রতি কাতারে ১০ জন করে মোট ৩০ থেকে ৪০ জন পর্যন্ত নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে বর্তমানে মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মসজিদের পূর্ব পাশে কিছু অংশে আলাদা করে বাড়ানো হয়েছে। ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে মৈস্যা বিবি ও আল্লাহ্র প্রিয় অলি রুস্তম শাহ যে মসজিদ নির্মিত করে গিয়েছেন এখানে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। মসজিদের উত্তর পাশে মৈস্যা বিবির দীঘি নামে প্রাচীনকালের একটি বড় দীঘিও রয়েছে। আগের কার মানুষ এই দীঘির পানি খাওয়ার জন্য ব্যবহার করতেন। দূর-দূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা দেখতে আসেন এই মসজিদকে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক হয়ে রাউজানের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদ এখনো কালের সাক্ষী।