প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়ে প্রহসণ কেন? একচিলতে ভালোবাসা হিসেবে ওদের ন্যায্য দাবী পূরণ করুন !

রশীদ এনাম::
ভালোবাসা দিয়ে নাকি পৃথিবী জয় করা যায়। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক লেখক হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন, “বাস্তবতা এতই কঠিন যে কখনও কখনও বুকের ভেতর গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু ভালোবাসাও অসহায় হয়ে পড়ে”। গত দু চারদিন ধরে পত্র-পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ঝর উঠেছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্মানী ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা করার জন্য। এটা ওদের ন্যায্য দাবী ওদের অধিকার। প্রতিবন্ধী মানুষের বেচে থাকার জন্য মাসিক খরচ দুই হাজার টাকা খুব বেশিও নয়।
প্রতিবন্ধীরাও এদেশের মানুষ। সৃষ্টিকর্তা ফুল করিতে ভুল করেছে। আমরাও কেন ভুল করব কিংবা ওদের ভাতা নিয়ে সুযোগসুবিধা নিয়ে কেন ওদের বঞ্চিত করব। কেউ জন্মের পর থেকে প্রকৃতিগতভাবে প্রতিবন্ধী কেউ বা অসুস্থ কিংবা কেউ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধী। ওরা কারও বাবা-মা কারও বা সন্তান কারও বা ভাই-বোন। সবচেয়ে বড় কথা ওরা জয় বাংলার স্বাধীন দেশের মানুষ। ওরাও সুযোগ চাই অন্যদশজনের মতো মানুষ হতে,একটু ভালোবাসা চাই।চারটা ডাল-ভাত খেয়ে একটু বাঁচতে চাই। ওদের চাহিদা নেই বললে চলে। সমাজকল্যাণমন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ভাতা নির্ধারন করেছে মাসিক ৭৫০ টাকা। দৈনিক গড়ে ২৫ টাকা। যা দেড় লিটার পানি কিংবা ২৫০গ্রাম তরল দুধের দাম। আমার প্রশ্ন প্রতিবন্ধী মানুষরা বেঁচে থাকার জন্য বাকীগুলো কি দিয়ে ওরা ব্যয় নির্বাহ করবে।
আহা প্রতিবন্ধী মানুষের জীবন! আহা সম্মানীভাতা ৭৫০টাকা! এই অল্প টাকা দিয়ে প্রতিবন্ধীমানুষের নিবিড় তদারকী হয়েছে। এটা নাকি সমাজসেবা,সমাজকল্যাণমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বড় সাফল্য। আজও দেশের অনেক মানুষ যথাযথভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা ঠিকমতো পায় না। বরিশালের গৌরনদী এলাকার মঈনউদ্দিন আহমেদ নামে এক শ্রবণ প্রতিবন্ধী (বৈধ ভাতাভোগী) নগদ থেকে পিন নম্বরসহ ভাতা বই সমাজসেবা অফিসে জমা দেন হিসাবখোলার জন্য। কিন্তু সে গত ২০২১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ বার যোগাযোগ করে কোনো ভাতা পাইনি এটা শুধু দুঃখজনক নয়।একজন প্রতিবন্ধীকে অবহেলা ও হয়রানি করা হচ্ছে। সে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও সচিবের কাছে আবেদন করেছেন। (সুত্র- দৈনিক প্রথম আলো ৪ এপ্রিল ২০২২)।
সরকারি অফিসের কথা কি বলব, আকাশের যত তারা ওদের তত ধারা, সরকারি অফিসের চতুর্থশ্রেণীর কর্মচারীরাও আজকাল নিজেদের বড় কর্মকর্তার বেশ ধরে চলে। কোন এক সাংসদ বলেছিলেন, সচিবালয়ের পিয়নরাও সাংসদদের কে পাত্তা দেয় না। আহা কথায় আছে, খায় ধায় জব্বার মোটা হয় আকবর। সরকারি দপ্তরে গেলে এটা লাগবে ওটা লাগবে আইনের শেষ নেই। আজ এই টেবিলে কাল ঐ টেবিলে। এটা অমুক জানে এটা তমুকের কাছে। এযেন দেবতার গ্রাস। এমনও ঘটেছে এক নেতা নিজের নামে প্রতিবন্ধী কার্ড বানিয়ে প্রতিবন্ধীভাতা তুলে খেয়েছে। সরকারি অফিসের কর্মচারী মৃত মানুষের নামে সরকারী পেনশন বই বানিয়ে টাকা তুলে খাওয়ার রেকর্ডও আছে। ছি লজ্জা! ডিজিটাল দেশে ডিজিটাল হয়রানির যেন শেষ নেই। এটা কবে বন্ধ হবে একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানে। প্রতিবন্ধীমানুষের করুণ আর্তনাধ সৃষ্টিকর্তার দরবারে বোধহয় পৌঁছে না।
আমাদের মানবতার মা বঙ্গবন্ধুর শেখমুজিবুর রহমানের তনয়া মাননীয় প্রধান মন্ত্রীমহোদয় বার বার বলছেন, দেশের মানুষ যাতে অফিস আদালতে হয়রানির শিকার না হয়। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই সম্প্রতি তিনি ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতা চালু করেছেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও বাড়িয়েছেন, ওদের জন্য বাড়ি খামার করেদিয়েছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরের এটাও একটা মাইলফলক। সবকিছু একদিন কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের সুযোগ্য তনয়া সাইমা ওয়াজেদ পুতুল নিবেদিত প্রাণ হয়ে ভালোবাসার হাত বাড়িয়েছেন প্রতিবন্ধীমানুষের জন্য। নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন অটিজম/অটিষ্টিকদের নিয়ে। অথচ দেশে প্রতিবন্ধীরা সবসময় অবহেলার শিকার হচ্ছেন। চাকুরী কোটা থাকা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা চাকুরী কোটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিবন্ধীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে গিয়ে অবহেলার শিকার হয়। পাবলিক প্লাসে, সমাজে, পরিবারে সবজায়গা অবহেলার শিকার হয় করুনা চোখে দেখে প্রতিবন্ধীদের। সম্প্রতি সমজাকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধীব্যক্তির মাসি ভাতা ৭৫০টা করে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা বর্তমান সময়ের জন্য অতিনগন্য। না এটা কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। এটা নিবিড় তদারকির নামে প্রহসণ এক ধরনের উপহাসের মতো। প্রতিবন্ধীদের প্রতি এতো বৈষম্য আচরণ কেন ? এত অল্প ভাতায় কিভাবে চলবে ওরা ? বাসাভাড়া, খাবার খরচ, বাজার খরচ, যাতায়ত, ব্যক্তিগত সহায়তাকারী বেতন, শিক্ষা, বস্ত্র, শ্রুতিলেখক নিয়োগ, চিকিৎসা এসব কি মাসিক ৭৫০ টাকা দিয়ে চলে ? ভিক্ষা বা করুণা নয় প্রতিবন্ধী মানুষের সংগঠন, ই-ঝঈঅঘ ইধহমষধফবংয ঝড়পরবঃু ভড়ৎ ঃযব ঈযধহমব ধহফ অফাড়পধপু ঘবীঁং, এবং উচঙ – উরংধনষবফ ঢ়বৎংড়হং’ ড়ৎমধহরুধঃরড়হ একটাই দাবী প্রতিবন্ধী মানুষের মাসিক ভাতা দুই হাজার টাকা করে প্রদান করুন। প্রতিবন্ধীরাও মানুষ ওদের মাঝেও আছে সম্ভাবনময়ী জীবন। আছে মেধা, সৃজনশীলতা,উদ্যেমী হয়ে কাজ করার শক্তি, ওরাও এক চিলতে ভালোবাসা পেলে এগিয়ে যাবে। লেখক প্রিয়জন সিদ্দিকভাই সবসময় বলতেন, “ভালোবাসা মানে নার্সিং”। আসুন শুধু অর্থ দিয়ে নয় প্রতিবন্ধীদেরকে ভালোবাসা দিয়ে নার্সিং করতে হবে। ওদেরকে সমাজের বুঝা না ভেবে ওদের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসার হাত প্রসারিত করি। ওদের চলার পথ সুগোম করে দেয়, বিশেষ করে যারা হুইল চেয়ার ব্যবহার করে তাদের জন্য স্থায়ী র‌্যাম্প, কিংবা হাটবাজারে, ফুটপাতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, স্টেডিয়ামে কাঠের তৈরী অস্থায়ী র‌্যাম্পের ব্যবহার নিশ্চিত করা, দালানকোঠায় সর্বজননীন প্রবেশগম্যতা, হুইল চেয়ার এক্সেসিবল টয়লেট, প্রতিবন্ধী কোঠায় চাকুরীবহালসহ, ওদের এবং আমাদের সবার একটাই দাবী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ভাতা মাসিক দুই হাজার টাকা করুন। করুণা, ভিক্ষা নয়, ভালোবাসা দিয়ে প্রবিন্ধী মানুষদের জন্য মায়া ছড়াই। ওদের ন্যায্য দাবী ও অধিকার আদায়ে সবাই ওদের পাশে থাকি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের নিকট সবিনয় নিবেদন, আপনি দেশের উন্নয়নের পাশপাশি অবহেলিত নিষ্পেষিত মানুষদের প্রতি যেভাবে ভালোবাসার হাত প্রসারিত করেছেন। আপনি মানবতার মা! আপনি অসম্ভব কে সম্ভভ করতে পারেন। আপনি গুন গুন করে গাইতে ভালোবাসেন “মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ? ও বন্ধু মানুষ মানুষকে পণ্য করে মানুষ মানুষকে জীবিকা করে পুরানো ইতিহাস ফিরে এলে লজ্জা কি তুমি পাবে না ? ও বন্ধু” ! প্রতিবন্ধী মানুষের আবেদন আপনার কানে নিশ্চয় পৌঁছেগেছে। প্রত্যাশা আপনি ওদের সম্মানী ভাতা মাসিক ৭৫০ টাকা নয় মাসিক দুই হাজার টাকায় উন্নীত করে প্রতিবন্ধী মানুষের বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিবেন।

রশীদ এনাম, লেখক ও প্রাবন্ধিক।