কোরআন-হাদিসের আলোকে মসজিদের কিছু আদব

কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করে, যারা ঈমান আনে, আল্লাহ ও আখেরাতে এবং নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ -সূরা তওবা: ১৮

মুসলমান হিসেবে মসজিদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রতিদিন আমাদেরকে পাঁচ পাঁচবার মসজিদে নামাজের উদ্দেশ্যে যেতে হয়। তাই মসজিদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানা থাকা দরকার। প্রয়োজন একটু সচেতনতা। তাই এখানে কোরআন-হাদিসের আলোকে মসজিদের কিছু আদব উল্লেখ করা হলো।

মসজিদ নির্মাণের ফজিলত
ইসলাম মুসলমানদেরকে ব্যাপকভাবে মসজিদ নির্মাণে উৎসাহিত করেছে। তার জন্য বিশেষ সওয়াব ঘোষণা করেছে। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশে মসজিদ তৈরি করলো; আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতে মসজিদের মতো একটি ঘর তৈরি করে দেবেন।’ –তিরমিজি: ২৯২

যথাযথ নিয়তে মসজিদ নির্মাণ করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে- বর্ণিত হাদিসটি প্রকারান্তরে এই সুসংবাদই বহন করছে।

তবে ইসলাম মনে করে, বস্তুগতভাবে মসজিদ নির্মাণ ও আবাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে; অর্থগতভাবে তা আবাদ করা। মসজিদ আবাদের অর্থ হলো- মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়, জিকির-আজকার ও কোরআন তেলাওয়াত করা। মসজিদ আবাদকারীর জন্য ইসলামে অনেক পুরস্কারের কথা এসেছে। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে সকাল-বিকাল মসজিদে যায়, প্রত্যেকবার যাতায়াতের বিনিময়ে জান্নাতে তার জন্য এক একটি ঠিকানা তৈরি করা হয়।’

আজান শুনে নামাজ পড়ার আগে মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়
আজান হওয়ার পর বৈধ ওজর ব্যতীত মসজিদ থেকে বাইরে যাওয়া জায়েজ নয়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আজান শোনার পর যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে বিনা প্রয়োজনে বের হয় এবং পুনরায় মসজিদে ফিরে আসার তার ইচ্ছাও নাই সে মুনাফিক।’ -ইবনে মাজা

মসজিদ পরিষ্কার রাখা খুবই মর্যাদাপূর্ণ কাজ
ইসলামি শরিয়ত মসজিদকে পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা মসজিদে নববী পরিষ্কারের কাজ করত। কয়েক দিন থেকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে দেখতে না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মহিলাটির কি হয়েছে? বলা হলো- সে মারা গেছে। অতঃপর তাকে দাফন করা হয়েছে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে সংবাদ দিলে না কেন? কোথায় তার কবর? অতঃপর তিনি তার কবরের কাছে গিয়ে তার জানাজা পড়লেন। -সহিহ বোখারি

উল্লেখ্য যে, কবরে গিয়ে মহিলার জন্য রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজ পড়ার ব্যাপারটি শুধু তার (নবী) জন্যই খাস। অন্য কারও জন্য প্রযোজ্য নয়।

মসজিদের ভেতর কফ-থুথু ও ময়লা ফেলা নাজায়েজ
একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদের সামনের দিকে এক লোককে কফ ফেলতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন, কি ব্যাপার? তোমাদের মধ্যে কোনো কোনো লোক তার প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে তার সামনে থুথু নিক্ষেপ করে। সে কি এটা পছন্দ করে যে তার সামনে এসে তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করা হোক? যদি থুথু নিক্ষেপ করতেই হয় তবে বাম পায়ের নিচে ফেলবে অথবা এভাবে কাপড়ে তা নিক্ষেপ করবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি দেখলাম, (শিক্ষা দেওয়ার জন্য) তিনি কাপড়ের এক অংশে থুথু ফেলে অন্য অংশ দিয়ে তা ডলে দিলেন।) –সহিহ মুসলিম

মসজিদে বেচা-কেনা ও হারানো বস্তু খোঁজ কিংবা ঘোষণা দেওয়া বৈধ নয়

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তোমরা কোনো ব্যক্তিকে মসজিদে কেনা-বেচা করতে দেখবে তখন তার জন্য বদদোয়া করে বলবে; আল্লাহ তোমার ব্যবসায় লোকসান দিক। আর কাউকে যদি হারানো বস্তু মসজিদে এসে খুঁজতে দেখো বা সে সম্পর্কে ঘোষণা দিতে দেখো- তবে বলবে আল্লাহ করুন বস্তুটি তুমি যেন খুঁজে না পাও। -সুনানে তিরমিজি

মসজিদে বসে থাকার সময় এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করিয়ে বসা নিষেধ
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ বাড়িতে অজু করে মসজিদে এলে বাড়ি ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সে যেন নামাজরত থাকলো। তারপর তিনি বললেন, কেউ মসজিদে এসে যেন এরূপ করে না বসে। তারপর তিনি তার এক হাতের আঙ্গুলগুলো অন্য হাতের আঙ্গুলগুলোর ফাঁকে প্রবেশ করিয়ে দেখালেন।’ -ইবনে খুজাইমা

কাঁচা পিয়াজ-রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ নিষেধ
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কাঁচা পিয়াজ বা কাঁচা রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা বনী আদম যে বিষয়ে কষ্ট অনুভব করে ফেরেশতারা তা থেকে কষ্ট অনুভব করেন।

হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, দুর্গন্ধময় এই দু’টি সবজি (কাঁচা পেয়াজ ও কাঁচা রসূন) খেয়ে তোমরা মসজিদে প্রবেশ করা থেকে সাবধান। যদি খেতেই হয়, তবে আগুনের সাহায্যে এগুলোর দুর্গন্ধ ধ্বংস করে নেবে। -তাবারানি