রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, রমজান উপলক্ষে ভোগ্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সাপ্লাই চেনে ঘাটতিজনিত অস্বস্তিকর বাজার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ভোক্তাসাধারণ যাতে সহনীয় এবং ন্যায্যমূল্যে দ্রব্যমূল্য কিনতে পারে এ ব্যাপারে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে যে কেউ পণ্য আমদানি করতে পারে। তবে দেশি পণ্যের সুরক্ষা এবং কর কাঠামোর মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করে দেশের উন্নয়নের জন্যও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে কাজ করতে হয়।

দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শনিবার (৯ এপ্রিল) আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মহাপরিচালক চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস হ্রাসকরণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে আইপি ইস্যু/নবায়নের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান।

চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইন্যান্স) মো. ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু রায়হান দোলন, সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল ওয়ারিশ, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, চেম্বার পরিচালক একেএম আক্তার হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ ও মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ, সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বিএসএম গ্রুপ চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী, মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, আখতারুজ্জামান সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ, ক্যাব’র সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার সাবেরী, পুলিশ প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সায়েম বক্তব্য দেন।

মাহবুবুল আলম বলেন, কোভিড অতিমারির ২ বছর ও সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য পৃথিবীব্যাপি বেড়েছে। চীন নতুন করে লকডাউন দেওয়ার কারণে তৈরিপোশাক খাতের অনেক কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকিমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রদানে প্রায় ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। চিটাগাং চেম্বারও প্রতি বছরের ন্যায় ভর্তুকিমূল্যে চাল, চিনি ইত্যাদি বিক্রয় করছে। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মিলার, পাইকার ও খুচরা পর্যায়ে সাপ্লাই চেন ঠিক রাখা জরুরি। টিসিবির মাধ্যমে ফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানি করা যায়। এছাড়া ডিউটি স্তর সামঞ্জস্য করা হলে আমদানি বৃদ্ধি পাবে এবং বর্তমান সংকট কেটে যাবে। ১৩ টন ওজন বাধ্যবাধকতার কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে মহাসড়কে কোনো ধরনের হয়রানি যাতে না হয় সেই লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যেকোনো অভিযোগ পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু রায়হান দোলন বলেন, চট্টগ্রামে প্রায় ৫ লাখ ৩৫ হাজার ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ১৮টি এবং মহানগরে ৬টি মনিটরিং টিম কাজ করছে।

সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল ওয়ারিশ বলেন, ব্যবসায় নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুুলিশ কাজ করছে। যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া রাস্তায় কোনো পণ্যবাহী পরিবহন থামানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বক্তারা ফিনিশড প্রোডাক্ট ও আনফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানির ক্ষেত্রে ডিউটি স্ট্রাকচার যৌক্তিকহারে নির্ধারণ, পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা, অতীতের আইনগুলো যুগোপযোগী করা, চাহিদার পূর্বাভাস প্রাক্কলন, বেশি বেশি আমদানি উৎসাহিত করা, মিল থেকে মেমো অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা, যানজট নিরসন ও অস্থায়ী দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ, আমদানিকারকদের তালিকা প্রস্তুত করা, চাহিদার সঠিক তথ্য সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব প্রদান, তিন মাস আগে শুল্ক সমন্বয় করা, লোকাল এলসি’র ক্ষেত্রে ২ শতাংশ কর প্রত্যাহার করা, নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে সারা বছর ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখা ইত্যাদি দাবি তুলে ধরেন।