ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র পৃথিবীতে দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে

আপনারা জানেন, করোনার ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র পৃথিবীতে দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে। ইউরোপে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য রুটির মূল্য ৮০ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে ইউপরোপের প্রধান খাবার রুটি। আমাদের দেশেও আমদানি নির্ভর দ্রব্যের দাম বেড়েছে। এ দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতির করণে দেশের মানুষের যাতে কোন কষ্ট না হয়, সে জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দিয়েছেন। কমদামে কিনতে পেরে দেশের মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরার সাথে সাথে বিএনপি এবং কিছু কিছু নামধারি বুদ্ধিজীবির মনে অস্বস্তি বেড়ে গেছে।

আজ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এলজিইডি ভবনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি সত্তার উন্মেষ ঘটেছিল পাঁচ হাজার বছর আগে, কিন্তু বাঙালির জন্য কখনো স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে কিছু কিছু অঞ্চলে কিছু স্বাধীন রাজা ছিলেন। ইতিহাসে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন চেষ্টা করেছিল স্বাধীনতার জন্য। তিতুমীর বাশের কেল্লা তৈরি করে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিল স্বাধীনতা আসেনি। মাস্টাদা সূর্যসেন ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের অস্ত্রগার লুণ্ঠন করে স্বাধীনতার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম অঞ্চল এগারো দিন স্বাধীন ছিল কিন্তু স্বাধীনতা আসেনি। ১৯৪৪ সালে নেতাজী সুভাষ বসু ইন্ডিয়ান লিবারেশন আর্মির সামনে বক্তৃতায় বলেছিলেন তোরা রক্ত দে আমি স্বাধীনতার দিবো। স্বাধীনতা আসেনি।

মন্ত্রী বলেন, যিনি হাজার বছরের ঘুমান্ত বাঙালিকে ছলে, বলে, কৌশলে আন্দোলিত করে অধিকার আদায়ের আন্দোলনের পথ বেয়ে, স্বাধীনতা সংগ্রামে উজ্জীবিত করেছিলেন। ¯েøাগান শিখিয়েছিলেন, “বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো , বাংলাদেশ স্বাধীন করো। তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা। তুমি কে, আমি কে, বাঙালি, বাঙালি।” তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন ছিল শুধু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নয়, বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধি রাষ্ট্র রচনা করা। সে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু পূরণ করে যেতে পারেনি। যে বাংলাদেশকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ¦ালিয়ে দিয়েছিল। এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরে আরো দুই কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। ঠিক তখন বিধ্বস্ত বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষকে পুনর্বাসিত করে এবং ধ্বংসস্তুপ থেকে বাংলাদেশকে পূনর্ঘটিত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।

মন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন বাংলাদেশের আর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি হার ছিল ৯.৫৯% শতাংশ। যে অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধির রেকর্ড আমরা এখনো ছুতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ৮% শতাংশের বেশি জিডিপি আর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা জানেন বঙ্গবন্ধু জাতিকে আহবান জানিয়ে ছিলেন দেশে এক ইঞ্চি মাটিও যেন ফাঁকা না থাকে। তার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশে খাদ্যশস্যে বিপ্লব ঘটেছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় সে বছর ১০ হাজার মেট্রিকটন অতিরিক্ত চাল উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেটি ঘোষণা করেননি কারণ বাংলাদেশ ঝড় বন্যা জলোচ্ছাসের দেশ। যে কোন একটি ফসল নষ্ট হলে ১০ হাজার মেট্রিকটন খাদ্য যতেষ্ট নয়। বঙ্গবন্ধুকে যদি হত্যা করা না হতো স্বাধীনতার পনেরো থেকে বিশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ হতো একটি উন্নত রাষ্ট্র। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৬ শত ডলারের কাছাকাছি। যেটি ভারতকেও ছাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ২৫শে মার্চ রাতের নির্মম গণহত্যার আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা পাওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছি। সে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি যৌক্তিক। কিন্তু যখন একটি দলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে আসলে ৩০ লক্ষ লোক মারা যায়নি। তখন আন্তর্জাতিক মহল স্বীকৃতি বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেই পারেন। বিএনপি কর্তৃক ৩০ লক্ষ শহীদ নিয়ে এ সন্দেহ পোষণ স্বীকৃতি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। না হয় আমরা গণহত্যার স্বীকৃতি সহজেই পেতাম।

তিনি আরো বলেন, সমস্ত পৃথিবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন, জাতিসংঘের মহাসচিব প্রশংসা করে, বিশ^ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট প্রশংসা করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদায়ী এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রশংসা করে, ভারতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এসে প্রশংসা করেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা প্রশংসা করেন। কিন্তু একটি পক্ষ প্রশংসা করতে পারে না। সেটি হচ্ছে বিএনপি জামাত আর কিছু কিছু ব্যক্তি যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবি বলে দাবি করেন তারা এটি শিকার করতে পারে না।

মন্ত্রী বলেন, টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি। আমরা যাখন টিকা কার্যক্রম শুরু করি তখন আমেরিকা এবং ইউরোপ থেকে এসে টিকা নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে করোনার প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউ সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এ সময় বিএমপি ও তাদের মিত্ররা এবং কিছু কিছু নামধারি বুদ্ধিজীবি যারা রাত ১২ ঘটিকার পরে বিভিন্ন টেলিভিশনের পর্দায় স্বক্রিয় হয় তারা এ সফলতা শিকার করতে পারে না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়েছে কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি দেশে এখনো সক্রিয়। এদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তার খুঁশি নয়। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির প্রধান রক্ষাকবজ হচ্ছে বিএনপি। এই অপশক্তির অপপ্রচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।

আলোচানা সভায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম এর সভাপতিত্বে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আতাউর রহমান, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান সজন কুমার তালুকদার, শাহজাহান সিকদার, আবুল কালাম আজদ, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, আলতাফ উদ্দিন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার আবুল কাশেম চিস্তি, বেদারুল আলম বেদার, তানভীর হোসেন চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।