চট্টগ্রাম মেডিকেলে নামমাত্র মূল্যে ৩৫ ধরনের টেস্ট

চট্টগ্রাম নগরীর প্রাইভেট ল্যাবে যে সিবিসি পরীক্ষা করাতে লাগে ৬০০ টাকা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাবে সেটা করাতে খরচ মাত্র ২০০ টাকা।
কিডনির পরীক্ষা ক্রিয়েটিনিন বাইরে করাতে লাগে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। অথচ সেই একই পরীক্ষা চট্টগ্রাম মেডিকেলের ল্যাবে করালে খরচ পড়ে মাত্র ৫০ টাকা।
লিপিড প্রোফাইলে মেডিকেল ল্যাবে লাগে ৩০০ টাকা, আর প্রাইভেট ল্যাবে গেলেই সেই পরীক্ষায় লাগে ১ হাজার টাকা।
এভাবে অনেকটা নামমাত্র মূল্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাবে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি দিয়ে করানো হচ্ছে প্রায় সব ধরনের ডায়াগনোসিস পরীক্ষা। অথচ এর বিপরীতে চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি ল্যাবগুলোতে পরীক্ষার জন্য রীতিমতো রোগীদের গলাকাটা হচ্ছে।
সবরকম সুবিধা থাকলেও চট্টগ্রাম মেডিকেলের এই ল্যাব শুধুমাত্র প্রচারের অভাবে প্রায় আড়ালে থেকে গেছে। অথচ এটিই হতে পারে এই অঞ্চলের রোগীদের অল্প খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর নির্ভরযোগ্য জায়গা।
দেখা যায়, প্রাইভেট ল্যাবে উচ্চমূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে না পেরে গরিব রোগীদের অনেকে অর্থাভাবে শেষপর্যন্ত বাড়ি ফিরে যায়। মেডিকেলের এই ল্যাব তাদের জন্য হতে পারে ভরসার বড় জায়গা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন বিল্ডিংয়ের ৪ তলায় ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগে গড়ে উঠেছে এই প্যাথলজি ল্যাব।
নতুন বিল্ডিংয়ের নিচতলা থেকে শুরু করে তিনতলা পর্যন্ত বিভিন্ন রোগের বহির্বিভাগীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর চতুর্থ তলায় রয়েছে এই অত্যাধুনিক ল্যাব। সেখানে রয়েছে রোগ নির্ণয়ের জন্য দক্ষ জনবল। রয়েছে অত্যাধুনিক মেশিন।
প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগীর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০টি নানা রোগের টেষ্ট এখানে করা হয়ে থাকে। বর্হিবিভাগের রোগীদের জন্য ল্যাবটি দুপুর ১টা পর্যন্ত সেবা দিলেও ইনডোরের রোগীদের জন্য সেবা চালু থাকে রাত নয়টা পর্যন্ত।
⬛ কোন পরীক্ষার খরচ কতো?
চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্যাথলজি ল্যাবে রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করাতে খরচ ২০০ টাকা (বেসরকারি ল্যাবে ৬০০ টাকা),
পিবিএফ পরীক্ষা ১০০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ৪০০ টাকা),
এমপি পরীক্ষা ২০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা),
আরবিএস পরীক্ষা ৬০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা),
ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা ৫০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা),
লিপিড প্রোফাইল ৩০০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা),
ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা ২৫০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা),
এসজিপিটি পরীক্ষা ৭০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা),
ইউরিন আর/ই পরীক্ষা ২০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা),
স্টুল আর/ই পরীক্ষা ২০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা),
ইউরিক এসিড পরীক্ষা ১০০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা),
বিলিরুবিন পরীক্ষা ৬০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ২৫০ টাকা)।
এছাড়া মেডিকেলের ল্যাবে এসজিপিটি পরীক্ষা করাতে খরচ পড়ে ৭০ টাকা, পিসি পরীক্ষা ৫০ টাকা, এএসও টাইটর পরীক্ষা ১০০ টাকা, বিটি.সিটি পরীক্ষা ৩০ টাকা, টিজি পরীক্ষা ৫০ টাকা, এইচবি% পরীক্ষা ৩০ টাকা, কোলেস্টেরল পরীক্ষা ৫০ টাকা, এফবিএস পরীক্ষা ৬০ টাকা, আরএ পরীক্ষা ৬০ টাকা, এস ক্যালসিয়াম পরীক্ষা ৮০ টাকা, ওজিটিটি পরীক্ষা ১২০ টাকা, অ্যালক্যালাইন ফসফেট পরীক্ষা ৭০ টাকা, ইউপিটি পরীক্ষা ৮০ টাকা, এচবিএ ওয়ান সি পরীক্ষা ৩০০ টাকা, ডোপ টেস্ট ৯০০ টাকা, ইউরিয়া পরীক্ষা ৫০ টাকা, সিমেন অ্যানালাইসিস ৫০ টাকা, বিলিরুবিন পরীক্ষা ৬০ টাকা, এস অ্যালবুমিন পরীক্ষা ১৫০ টাকা, ইএসআর পরীক্ষা ৩০ টাকা, ভিডিআরএল পরীক্ষা ৫০ টাকা এবং সিআরপি পরীক্ষায় খরচ মাত্র ১৫০ টাকা।
জানা গেছে, নতুন করে চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্যাথলজি ল্যাবে যুক্ত হয়েছে বিআরটিএ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মোটরচালকদের ডেপ টেস্ট। এটি করা যাচ্ছে ৯০০ টাকায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্যাথলজি ল্যাবের ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া রাজু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘‘হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়ের নির্দেশে কোনো রোগী যাতে রোগ নির্ণয়ের সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, বাড়ি ফেরত না যায় তার জন্য আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকায় এখানে রোগ নির্ণয়ের সঠিকতা শতভাগ”।
তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চান রোগীরা রোগ নির্ণয়ের জন্য বেসরকারি ল্যাবে না গিয়ে এখানে আসুক। আমাদের লোকবল থেকে কয়েকজন আমরা সরেজমিন মনিটরিংয়ে থাকি। রোগীদের টিকেট কাটা, স্যাম্পল প্রদান, রিপোর্ট ডেলিভারি যাতে সুশৃঙ্খলভাবে হয় সেই চেষ্টাই করে থাকি”।