চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনালের জমির মূল্য নিয়ে জটিলতা

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে ছয় বছরেও দেশের বহু কাঙ্খিত বে-টার্মিনালের জমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পায়নি। ভূমি মন্ত্রণালয় গত বছরের জুন মাসে এক নির্দেশনায় প্রতীকী মূল্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তরের বিষয়ে বললেও ছয় মাস পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুরো মূল্য পরিশোধ করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে পুরো পরিশোধ তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ও উত্পাদনশীলতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছার প্রেক্ষিতে এবং দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধিজনিত কারণে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ দীর্ঘদিন ধরে বে-টার্মিনাল নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সমুদ্র উপকূলে প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনাপত্তি পত্র চেয়ে আবেদন করে। দীর্ঘ ১৮ মাস পর সিডিএ বে-টার্মিনাল নির্মাণের অনাপত্তি প্রদান করে।

জানা যায়, সিডিএ ওই এলাকায় আবাসিক নির্মাণের জন্য প্রথমদিকে চেষ্টা চালায়। ফলে সিডিএ অনাপত্তি প্রদানে সময়ক্ষেপণ করে বলে সিডিএ থেকে জানা যায়। বন্দরের চাহিদা এবং ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বে-টার্মিনালের জন্য ৮৫০ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি প্রদান করে। প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল এলাকার জমির কিছু অংশ ব্যক্তি মালিকানায় এবং বেশির ভাগ অংশ সরকারি খাস জমি। বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুত কাজ শেষ করতে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি নিজেদের অর্থে অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৯ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৪ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনকে ৪০০ কোটি টাকা প্রদান করে। বন্দর কতৃ‌র্পক্ষ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি নিজেদের অধীনে নিলেও জমির মালিকগণ এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে জানা যায়।

এদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বে-টার্মিনালের নির্ধারিত জমির সরকারি অংশ প্রতীকী মূল্যে হস্তান্তরের জন্য আবেদন করে। সরকারি প্রকল্পের অগ্রাধিকার অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন।

সরকারি খাস জমি প্রতীকী মূল্যে প্রদানে ব্যাপক প্রচেষ্টার পর ২০২১ সালের জুন মাসে ভূমি মন্ত্রণালয় উক্ত প্রায় ৮০৩ একর জমি সরকারের সম্পত্তি অধিগ্রহণ ম্যানুয়াল ১৯৯৭ এর ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নিকট হস্তান্তরের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস পর গত রবিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উক্ত জমি বাবদ সরকারের স্হাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন-২০১৭ এর ৮(৪) বিধান অনুযায়ী ১২০ দিনের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে পরদিন গত সোমবার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানায়, তাদের পক্ষে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা প্রদানে সামর্থ্য নাই। জেলা প্রশাসকের জমির প্রাক্কলিত ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে শতকরা ২ ভাগ হিসেবে প্রায় ৭১ কোটি টাকা প্রশাসনিক ব্যয় রয়েছে। বন্দর সূত্রে জানা যায়, ইতিপূর্বে তারা বিভিন্ন জমি অধিগ্রহণের সময় প্রশাসনিক ব্যয় বাবদ যে টাকা দিয়েছে তা নিয়ে অডিট আপত্তি দেয়া হয়েছে।

বন্দরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খাস জমি স্হাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ম্যানুয়াল ১৯৯৭ এর ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৌ পরিবহন সচিবের নিকট হস্তান্তরের জন্য বলা হলেও জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ এর ৮(৪) ধারার বিধান অনুযায়ী প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা প্রদান করতে বলে।

ডিসেম্বর ক্লোজিং সম্পন্ন হয়নি অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেরডিসেম্বর ক্লোজিং সম্পন্ন হয়নি অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্দর তহবিল থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে এবং ৫০০ কোটি টাকা পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ বরাবর হস্তান্তর করা হয়। তাই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কর্তৃক যাচিত উক্ত প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পরিশোধের সামর্থ্য বন্দর কর্তৃপক্ষের নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষ ভূমি মন্ত্রণালয়ের পত্র অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ৭ জানুয়ারি নামমাত্র বা প্রতিকী মূল্যে হস্তান্তরের কথা বলা হয়।

নৌ পরিবহন মন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে একাধিকবার বলেছেন ২০২৪ সালের মধ্যে বে-টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মো. শাহজাহান ইত্তেফাককে জানান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিকী মূল্যে জমি হস্তান্তরের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। কারণ জমি কেনার জন্য বন্দরের সামর্থ্য নাই। তাছাড়া উক্ত জমির বেশির ভাগ পানির নিচে রয়েছে।

সূত্র: ইত্তেফাক