যে আইনে সাজা স্থগিত করা হয়েছে, সেই আইনেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাটানো সম্ভব

চট্টগ্রামে ছাত্রদলের কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে ডা. শাহাদাত হোসেন

যে আইনে সাজা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে, সেই আইনেই বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকার অনুমতি দিতে পারে বলে দাবী করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। মেডিকেল টিম বলছে- বেগম জিয়ার যে অসুস্থতা সেটার চিকিৎসা বাংলাদেশে করার কোনো সুযোগ নেই, এশিয়া মহাদেশেও করার সুযোগ নেই। তাই বেগম জিয়াকে অনতিবিলম্বে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য নানা শর্ত দিচ্ছেন। আমরা পরিস্কারভাবে বলতে চাই, বেগম জিয়াকে বিদেশে নিতে আইনের কোনো বাধা নেই। বাধা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী। সরকারই একমাত্র বাধা।

তিনি আজ শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

ডা. শাহাদাত বলেন, সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার প্রধানের প্রতিহিংসার কারণেই বানোয়াট মামলায় সাজা দিয়ে বেগম জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়। পরে সাজা অস্থায়ীভাবে স্থগিত করে বাড়িতে রাখা হয়। সাজা স্থগিতের বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে শর্ত দিয়েছেন। শর্ত হচ্ছে- বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করতে পারবেন না। এই শর্ত হচ্ছে মানবাধিকার বিরোধী, মানুষের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করার শর্ত।
তাই দেশের গণতন্ত্রপ্রিয়, দেশপ্রেমিক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কারণ এই সরকারের কোনো ভিত্তি নেই। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বাধা দূর করে মুক্তি দিন। না হয় চট্টগ্রাম থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করা হবে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সভাপতি আশরাফুল আলম ফকির লিংকন বলেন, কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন, এটাই নাকি উনি বেশি করেছেন। তার অর্থ হচ্ছে, একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তার কারণে বানোয়াট মামলায় তারই নির্দেশে সাজা দেওয়া হয়েছে। এদেশের মানুষের দাবির চাপে তিনি বেগম জিয়াকে সাময়িক কারাদণ্ড স্থগিত করে বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। এর অর্থ সবকিছুই প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতে হচ্ছে।
আওয়ামীলীগের সবাই এখন ডাক্তার হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী এমপিরা বলছেন খালেদা জিয়া বিদেশে যাবেন, এটা আইনে নেই, প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেন। প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদনের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো নেতার কাছ পরামর্শ নিতে হবে না। আবেদন করবে কি করবে না সেটা বিএনপির বিষয়। কারণ খালেদা জিয়া কোনো দোষ করেননি, তিনি দোষী নন। তাই আবেদনের প্রশ্নই আসে না।

বিশেষ  অতিথির বক্তব্যে সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়াকে গায়ের জোরে সরকারের নির্দেশে একটি ভূয়া মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। বেগম জিয়া নাকি এতিমের কোটি কোটি টাকা মেরে খেয়েছেন, অথচ ওই দুই কোটি টাকা এখনো ব্যাংকে। সেই টাকা এখন বেড়ে আট কোটি টাকার বেশি হয়েছে। যদি ব্যাংক থেকে একটি টাকাও উত্তোলন না হয়ে থাকে, তাহলে তিনি কীভাবে এতিমের টাকা মেরে খেলেন? অর্থাৎ এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান আওয়ামীলীগের ওবাইদুল কাদেরের “খালেদা জিয়ার জন্য বিএনপির একটি মিছিলও দেখা যায়নি” মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন,  ওবাইদুল কাদের সাহেব চোখে কালো চশমা পড়ে থাকেন, সেজন্য তিনি বিএনপির মিছিল দেখেন না। তিনি তো সারাদিন বাসায় বসে থাকেন, বাসা থেকে বের হন না। তিনি কি করে বিএনপির মিছিল দেখবেন? বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে সারাদেশ এখন উত্তাল। তিনি বেগম জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলার আহবান জানান।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার। বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শহীদুল আলম শহীদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহিদুল আফসার জুয়েল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি খোরশেদ আলম, উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম জনি, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আসিফ চৌধুরী লিমন, সালাউদ্দিন সাহেদ, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক কে এম আব্বাস, উত্তর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক তকিবুল হাসান চৌধুরী তকি, কাজী সেলিম উদ্দীন, উত্তর জেলা সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সুজা উদ্দৌলা সজীব প্রমূখ।