দুঃসাহসিক উদ্ধার : আফগান মেয়ে ফুটবলার দল যুক্তরাজ্যে

তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর এক দুঃসাহসিক উদ্ধার প্রচেষ্টার মাধ্যমে আফগান মেয়ে ফুটবলারদের একটি দল বিমানে করে যুক্তরাজ্যে গেছে। ব্যয়বহুল ওই অপারেশন মুসলিম খেলোয়াড়, গুপ্তচর, দানবীর, ইহুদী সমাজসেবক সহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষকে এক ছাতার নীচে নিয়ে আসে। যার ফলে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েরা রাতারাতি পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যে পৌঁছে। তাদের ফ্লাইটটি একটি ইহুদি সাহায্য সংস্থা দ্বারা ভাড়া করা হয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের তারকা কিম কার্দাশিয়ান-ওয়েস্ট ভাড়ার ওই অর্থ শোধ করেন।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উদ্ধারকাজের বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে।

 

ডেনমার্ক থেকে মেয়েদের উদ্ধার কাজের সমন্বয় করা আফগানিস্তানের জাতীয় মহিলা দলের প্রাক্তন ম্যানেজার খালিদা পোপাল বলেছেন, “মিশন সম্পন্ন হয়েছে। আমি মেয়েদের নিয়ে খুব খুশি এবং গর্বিত। তারা ছিল বিধ্বস্ত।

জম্মু-কাশ্মীরে ভারতের সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, আহত ২ পাইলট
তারা অনেক কিছু দেখেছে এবং তারপরও শক্ত থাকতে পেরেছে। এখন তারা নতুন জীবন শুরু করতে পারে, স্বাধীনতার শ্বাস নিতে পারে।”

 

ইহুদি সাহায্য সংস্থা, জেডেক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা রাব্বি মোশে মার্গারেটেন স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, “হলোকাস্টের (ইহুদি গণহত্যা) সময় অ-ইহুদি লোকেরা এত বেশি ইহুদি লোককে বাঁচাতে সাহায্য করেছিল যে আমি মনে করি, অন্যদের প্রয়োজনের সময় আমাদের অবশ্যই তাদের সাথে থাকতে হবে যখন তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকে।”

ওই কিশোরীরা আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের অধিবাসী ছিল। তালেবানরা যখন তাদের শহরগুলো দখল করে তখন সবাই জীবনের ভয় পেয়েছিল। তাদের পরিবারের কেউ কেউ প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন। মিসেস পোপাল বিবিসিকে বলেন, “লোকেরা তাদের বাড়িতে গিয়ে খুঁজছিল।”

 

আতঙ্কিত হয়ে তারা রাজধানী কাবুলে চলে যায় এবং আগস্টের শেষে তাদের কাতারে সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। নিরাপত্তা সতর্কতার কারণে যখন তাদের বাস থেকে নামানো হয় তখন তারা বিমানবন্দরের প্রায় দৃষ্টিসীমার মধ্যেই ছিল। দুই ঘণ্টা পর, বিমানবন্দরে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয় যাতে ১৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। ফলে, তারা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়।

১০ দিন বাদে তাদের পক্ষে তীব্র তদবিরের পর, তাদের সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ব্যক্তিগত অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের কাছে শুধু অস্থায়ী পাকিস্তানি ভিসা ছিল। সাথে সাথেই তাদের স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে বের করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা শুরু করা হয়।

 

মেয়েদের প্রতি লিডস ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের চেয়ারম্যান আন্দ্রে রাদ্রিজানির সমর্থন ছিল। প্রভাবশালী বৃটিশ সামরিক অফিসারদের সাবেক দোভাষীদের মাধ্যমে- তাদের প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারেরও নজর ছিল। গত মাসে তাদের ভিসা দেয়া হয়।

কিন্তু তাদের ফ্লাইটের জন্য তহবিলের প্রয়োজন ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মডেল-অভিনেত্রী কিম কার্দাশিয়ান-ওয়েস্ট এবং তার শেইপওয়্যার কোম্পানি SKIMS ওই খরচ বহন করতে সম্মত হয়। একটি চার্টার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয় যা বুধবার রাতে ১৩০ জনের দলটিকে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। তাদের আগামী ১০ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

 

আমরা আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন করেছি, মন্তব্য করে খালিদা পোপাল বিবিসিকে বলেন, “পরবর্তী লক্ষ্য হল ফুটবল সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করা যাতে তারা ওদের ফুটবলে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করতে সহায়তা করে। তাদের উদ্ধারে অনেক লোক জড়িত ছিল। এটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ।”

উল্লেখ্য, পৃথক আরেকটি উদ্ধার অভিযানে, এর আগে জাতীয় নারী দলের সদস্যদের অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। আর আফগানিস্তানের মেয়েদের দলের সদস্যদের পর্তুগালে আশ্রয় দেয়া হয়। কিন্তু কয়েক ডজন আফগান তরুণী ফুটবলার কোনো একটি উপায় বের হওয়ার আশায় এখনো আফগানিস্তানে আটকে আছে।