খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি নেই। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। দু’দিন ধরে অক্সিজেনেরও প্রয়োজন হচ্ছে তার। মাঝেমধ্যে দুই থেকে তিন লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। অবশ্য সব সময় অক্সিজেন লাগছে না।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার শরীরে নতুন করে একটি ‘জটিল রোগ’ দেখা দিয়েছে। যদিও চিকিৎসকরা রোগটির নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না। তারা বলছেন, এই চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। আধুনিক বহুমুখী রোগের চিকিৎসা দেওয়ার মতো হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

এদিকে, বুধবার খালেদা জিয়া লাইফ সাপোর্টে চলে গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। লাইফ সাপোর্টে থাকা এক নারীর ছবিকে খালেদা জিয়ার ছবি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে এ খবরটিকে ‘ভুয়া’ হিসেবে দাবি করা হয়।

দলের নেতারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খালেদা জিয়ার নামে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে- সেটা তার ছবি নয়। বিএনপির এক নেত্রীর মায়ের মৃত্যুর আগমুহূর্তের ছবিকে খালেদা জিয়ার ছবি হিসেবে গুজব সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের হীন তৎপরতায় জড়িতদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলটির নেতারা।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, একাধিক রোগ ভর করেছে ৭৭ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার। তার দেহে খনিজ অসমতা চরম আকার ধারণ করেছে। প্রধান ইলেকট্রোলাইট, অর্থাৎ সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্লোরিন উপাদানের পরিমাণ কমে গেছে।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পরও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার আবেদন সরকার কার্যত নাকচ করে দেওয়ায় হতাশ তার পরিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আইনি জটিলতার কথাই বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে অনেকটা হতাশ খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, সবাই বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারছে; কিন্তু যত আইন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে। আমরা তো সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এখন আর কী-ই বা করার আছে। যদিও সরকারকে নমনীয় করতে প্রভাবশালী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, চিকিৎসার জন্য আমেরিকা নিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে দলটির।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে একজন চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়াকে মূলতে সিসিইউর আদলে আইসিউর সেবা দেওয়া হচ্ছে। তার প্রথম বায়োপসি করার পর যে ছোট্ট একটি জীবাণু পাওয়া যায়, তা নির্মূল করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। কিডনির ক্রিয়েটিনিন হু-হু করে বাড়ছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও ডায়াবেটিস একেবারে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। তাই ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার শরীরে প্রচণ্ড দুর্বলতা। এ জন্য তিনি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেন না। রক্তে হিমোগ্লোবিনও অনেক কমে গেছে। রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে এরই মধ্যে দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, পরিবারের সদস্যদের বাইরে হাসপাতালে এখন বিএনপির পক্ষ থেকে শুধু মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস যাচ্ছেন। বুধবারও প্রায় তিন ঘণ্টা হাসপাতালে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। অন্য কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে তারাও সিসিইউর বাইরের গ্লাস দিয়ে শুধু সালাম বিনিময় করেন। খালেদা জিয়াও ইশারায় জবাব দেন। খালেদা জিয়ার প্রয়োজনমাফিক তরল জাতীয় খাবার বাসা থেকে রান্না করে হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে। তার ছোট পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান সিঁথি দুপুর থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করে খাবারের বিষয়ে খোঁজখবর নেন বলে জানা গেছে।

বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিয়ে টানাপোড়েনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে (একাংশ) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে (একাংশ) নেতারা।

বুধবার বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন এবং ডিইউজে সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম যুক্ত বিবৃতিতে সংকীর্ণ দল ও ব্যক্তিস্বার্থ পরিহার করে মানবিক কারণে যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এ দেশের আপামর জনগণ মেনে নেবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতারা। সংগঠনের আহ্বায়ক শওকত মাহমুদ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে এসব বলেন। বিবৃতিতে তারা খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনে সাড়া দিয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে জামিন মঞ্জুর করে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিদেশে প্রেরণের সব ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন।