কেউ শুনুক না শুনুক, প্রেসক্লাবই ভরসা

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় চলছে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের কর্মসূচি। তাদের দাবি মাদরাসার জাতীয়করণ। পাশেই লাউডস্পিকারে শোনা যাচ্ছে হকার সমিতির স্লোগান। হকারদের উচ্ছেদ না করে পুনর্বাসনের দাবি তাদের। অন্যপাশে তখন প্রেসক্লাবের সামনের গেট আটকে মানববন্ধন করছেন জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরের অনুসারী নেতাকর্মীরা।
এই তিনটি কর্মসূচি ছাড়াও সেই মুহূর্তে তেল, গ্যাসসহ জাতীয় সম্পদ রক্ষার দাবিতে চলছিল বিক্ষোভ। সেটা ছিল গণসংহতি আন্দোলন নামে বামপন্থী একটি দলের কর্মসূচি।
গত বুধবার (৩ এপ্রিল) বেলা ১১টার সময় প্রেসক্লাবের সামনের চিত্র ছিলো এগুলো। ওই সব কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন বড়জোর শ’দুয়েক মানুষ। কিন্তু মাইক বসানো হয়েছিল প্রায় আটটি। ফলে দাবি আদায়ের সবগুলো স্লোগান মিলেমিশে পরিণত হয় শব্দ দূষণে।
তবে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজক বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, ঢাকা শহরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আর কোনোখানে কথা বলার জায়গা নেই। আগে মুক্তাঙ্গন ছিল, সেখানে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করা যেত। সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে বিক্ষোভও করা যেত। কিন্তু এখন সেই জায়গাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে কথা বলার জন্য প্রেসক্লাবের এই সামনের জায়গাটুকুই একমাত্র ভরসা।

আন্দোলনরত বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির দফতর সম্পাদক ইনতাজ বিন হাকিম বলেন, ‘দাবি আদায়ের জন্য আর কোনো রাস্তা অবশিষ্ট নেই। আমরা শিক্ষক। ফলে সহিংস আন্দোলনের পথে আমরা যাবো না। তাই প্রেসক্লাবে এসে স্লোগান দিতে হয়, না খেয়ে থাকতে হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এখানে ভিড় আছে তা ঠিক, কিন্তু আর কোথায় যাবো?’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৫৪ সালের অক্টোবরে প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই আন্দোলনকারীরা নানা দাবি নিয়ে এখানে সভা-সমাবেশ শুরু করেন। গণমাধ্যমে বেশি প্রচার পাওয়ার আশায় আন্দোলকারীরা আন্দোলনের তীর্থ হিসেবে বিবেচনা করে জায়গাটিকে। ফলে বছরের প্রায় সব দিনেই প্রতিবাদের নতুন কোনো স্লোগান নিয়ে কেউ না কেউ এসে এখানে দাঁড়ায়।

প্রেসক্লাবের উল্টোদিকে নোটারি ও অনুবাদের কাজ করেন হালিম মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে বিশ বছর ধরে আছি। বলা যায় দাবি শুনতে শুনতে একরকম অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু যারা নতুন বা এই এলাকার নিয়মিত বাসিন্দা তাদের জন্য বিষয়টি খারাপ। কারণ বছর জুড়েই মাইকের বিরক্তিকর শব্দ শুনতে হয় তাদের।’

আন্দোলন-সমাবেশের বিষয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, কথা বলার অধিকার প্রত্যেকেরই আছে। সবাই মনে করে সাংবাদিকদের কাছে গেলে তাদের দাবি-দাওয়া পূরণ হবে। রাস্তায় সাধারণ মানুষের চোখে পড়বে। তাই সাধারণত প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীরা বেশি আসেন।’

ঢাকায় আন্দোলন করা যায় এমন জায়গাও কম উল্লেখ করে এই সাংবাদিক নেতা আরও বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের ভেতরে যেতে পারে না। আবার ঢাকা শহরে আন্দোলন করার মতো যথেষ্ট জায়গাও নেই। ফলে তারা পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে এসে নিজেদের দরকারের কথা বলে। সেখানে আমরা চাইলেও না করতে পারি না। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবে সবার কথা শোনার প্রয়োজন আছে বলেও আমি মনে করি।’

প্রেসক্লাবের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাশার বলেন, ‘বিক্ষোভ, আন্দোলন, সমাবেশ এখানকার নিয়মিত ঘটনা। তবে বাজেট এবং নির্বাচনের আগে চাপ বেশি যায়। তখন সবারই কোনো না কোনো দাবি তৈরি হয়। তাদের দাবি হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে পূরণও করা হয়। তবে এই এলাকায় যারা বাস করে বা চলাচল করে তাদের স্বাভাবিক জীবনেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে।’

সারাবাংলা/টিএস/এমও/জেডএফ