কর্ণফুলী রক্ষায় চট্টগ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে

মির্জা ইমতিয়াজ শাওন:: বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে কর্ণফুলী নদী রক্ষা করতে চট্টগ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে মন্তব্য করেছে হিউম্যান রাউটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এ সময় তিনি ৭ দিনের মধ্যে কর্ণফুলীর তীরে পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আল্টিমেটাম দেন। অভিযান শুরু না করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলায় ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে মনজলি মোরসেদ আরও বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়টি আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে অবহিত হয়েছি। হাইকোর্টের রায়ে কর্ণফুলীর তীরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও ৫ দিনের মাথায় সেটি স্থগিত হয়ে যায়। কেনো স্থগিত হলো- সে বিষয়ে জানতেই এখানে এসেছি। কর্ণফুলী নদী ও নদী তীরের জায়গা ঘুরে দেখেছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কয়েকটি জটিলতার কথা জানিয়েছেন। আশা করছি কর্ণফূলী নদীর দখল করে রাখা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।’ আদালত ষ্পষ্ট বলেছে নদীর জায়গা কোনভাবেই লীজ দেয়া যাবে না। বন্দরের জায়গায় যে অবৈধ স্থাপনাগুলো গড়ে তোলা হয়েছে, সেসব স্থপনা উচ্ছেদ করতে গেলে বন্দরের সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু বন্দরের উপর হাইকোর্টের কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে উচ্ছেদ অভিযানে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বন্দর এবং জেলা প্রশাসন মিলে যদি উচ্ছেদ অভিযান চালায় তাহলে তা ফলপ্রসূ হবে। এ নিয়ে কাজ করতে জেলা প্রশাসন অনুরোধ জানিয়েছে।

মনজিল মোরশেদ সাংবাদিকর বলেন,উচ্ছেদের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন- তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা নিরাপত্তাহীনতাই ভুগছেন। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি- নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন যদি থাকে অবশ্যই তা আদালতের নজরে আনা হবে। কারণ এ ধরনের হুমকি আমাদের উপরেও আসে। হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। বাসায় কাফনের কাপড় পাঠানো হয়। কাজ করতে গেলে এমন হতেই পারে এতে পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সারা দেশের অনেক নদী রক্ষায় পরিবেশবাদীদের উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। নদী রক্ষা কমিশন যাতে নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে, সেজন্য আইন সংশোধন করে ‘কঠিন শাস্তির’ ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে সরকারকে।
তিনি বলেন, নদীর তীরে কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকতে পারবে না। এজন্য যেভাবেই হউক আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। তা থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই।
লালদিয়ার চর এলাকায় ইনকনট্রেন্ড টার্মিনালের পেছনের জায়গায় আগে যেখানে নদী ছিল সেখানে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট মানজিল মোরশেদ বলেন, পাঁচ বছর আগে আমি যখন এই এলাকা পরিদর্শন করি তখন ইনকনট্রেন্ড টার্মিনালের পেছনের জায়গা নদী ছিল। আজ সেখানে গিয়ে দেখলাম উঁচু করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। এভাবে নদীর ভেতরের জায়গা ভরাট করা যায় না।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তর কি কাজ করে? সংস্থাটি যদি ঠিকভাবে নদী, জলাশয়, পাহাড়সহ পরিবেশ রক্ষায় সঠিকভাবে কাজ করতো তাহলে এভাবে কেউ ভরাট করতে পারতো না। তারা এতোদিন এই ভরাট কার্যক্রম দেখেনি কেন? পরিবেশ অধিদপ্তর একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠান।
নদীর জায়গা উচ্ছেদ করে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অ্যাডভোকেট মানজিল মোরশেদ বলেন, নদীর জায়গা উচ্ছেদ করে সরকারি সংস্থার তার নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে। কিন’ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লিজ দিয়ে তা থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবে না।
এসময় ইনকনট্রেন্ড কনটেইনার টার্মিনালকে নদীর জায়গা বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটিকে ২০১৫ সালে তালিকা তৈরির আগে দেয়া হয়েছে। সেসময় নদীর ভেতরের কিছু জায়গা তাদের টার্মিনালের ভেতরে ছিল। তবে বর্তমানে আর এধরনের কোনো জায়গা সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে বরাদ্দ দেয়া যাবে না।
তিনি জানান, নতুন ভাবে দখলকারী ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের তালিকা প্রকাশ, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডিজিটাল ডেটাবেইজ তৈরি ও নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টকে নদী দখলের বিরুদ্ধে নির্দেশনা দিতে হয়েছে। কিন্তু এখনো দখলমুক্ত হয়নি সে জায়গা। এভাবে দেশের প্রায় সব নদীর তীর দখলে চলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের।

পরিবেশ আন্দোলনের নেতা ও হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি এডভোকেট মনজিল মোরসেদ আরো বলেন, আদালতের আদেশ দিয়ে নদী রক্ষা করা যাবে না। আন্তরিক হতে হবে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থাকে। দূষণমুক্ত করার জন্য শিল্পবর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আর নদীর তীর রক্ষায় দখলমুক্ত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান এবং স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।