দুর্দশা পিছু ছাড়ছে না কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রডোর

কিছুতেই দুর্দশা পিছু ছাড়ছে না কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রডোর। তার সরকারের সিনিয়র দু’জন ব্যক্তির গোপন টেলিফোন সংলাপ ফাঁস হওয়ার পর নতুন করে পদত্যাগ দাবির মুখে পড়তে পারেন ট্রুডো। ১৭ মিনিটের ওই টেলিফোন কলে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এসএসি-লাভালিনকে ফৌজদারি বিচার থেকে রক্ষার কথা রয়েছে। বলা হয়েছে, ট্রুডো ওই কোম্পানিকে বিচার থেকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন গার্ডিয়ান।
গত ডিসেম্বরে ট্রুডো সরকারের শীর্ষ স্থানীয় দু’জন ব্যক্তির মধ্যে ওই ফোনালাপ হয়েছিল। তারা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী জোডি উইলসন-রেবোল্ড এবং কানাডার তখনকার সবচেয়ে সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা মাইকেল ওয়েরনিক। উল্লেখ্য, লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির সময়ে সেখানকার নির্মাণ কাজ পাওয়ার জন্য কানাডার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এসএনসি-লাভালিন ঘুষ দিয়েছিল বলে অভিযোগ আছে।
এ বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর এসএনসি-লাভালিনের বিরুদ্ধে মামলা হয় কানাডায়। কিন্তু সেই বিচারে ট্রুডো সরকার হস্তক্ষেপ করেছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে অভিযোগ। এসএনসি-লাভালিনকে বিচার থেকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো তার আইনমন্ত্রী জোডি উইলসন রেবোল্ডকে চাপ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে পুরো কানাডায়। এ অবস্থায় আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করে বসেন জোরি উইলসন রেবোল্ড। তার পর পর পদত্যাগ করেন মাইকেল ওয়েরনিক। ফলে প্রচ- চাপে পড়েন ট্রুডো।
এবার তার ওপর যোগ হয়েছে ১৭ মিনিটের ওই অডিও। তাতে উইলসন-রেবোল্ডকে উদ্দেশ্য করে মাইকেল ওয়েরনিককে বলতে শোনা যায়, এসএনসি লাভালিন ঘুষ দিয়েছিল এমন বিচার থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মনস্থির করেছেন। তার ভাষায়, আমার মনে হচ্ছে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানকে যেকোনোভাবেই হোক রক্ষা করতে চাইছেন। তার মধ্যে এখন এমনই মুড কাজ করছে। আমি আপনাকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলছি।
জবাবে উইলসন রেবোল্ড সতর্কতা উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, এই সংলাপ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের পর্যায়ে চলে যায়। এতে তার বিচার ব্যবস্থায় যে স্বাধীনতা আছে তা লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। তাই তিনি বিচার থেকে ওই কোম্পানিকে রক্ষার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।
এই ফোনকলের এক মাস পরেই জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেন উইলসন রেবোল্ড। সর্বশেষ ওই অডিওটি ফাঁস করেছেন উইলসন-রেবোল্ড। এর সঙ্গে প্রকাশ করেছেন ৪০ পৃষ্ঠারও বেশি ডকুমেন্ট, যা তার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি বলেছেন, অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু ঘটতে পারে বলে উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি। তাই তিনি গোপনে ওইসব কথোপকথন রেকর্ড করেছিলেন। বিষয়টি তিনি মাইকেল ওয়েরনিককে বুঝতে দেন নি।
ওদিকে একই ঘটনায় প্রাইভি কাউন্সিল থেকে মার্চের প্রথম দিকে পদত্যাগ করেন মাইকেল ওয়েরনিক। এসব কেলেঙ্কারিতে জাস্টিন ট্রুডোর নতুন করে নির্বাচিত হওয়ার আশাকে সংশয়ে ফেলেছে। আগামী অক্টোবরে সেখানে জাতীয় নির্বাচন। সেখানে বিরোধী কনজার্ভেটিভ পার্টির থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে ট্রুডোর লিবারেল পার্টি। ২০১৫ সালে তিনি নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তার দলটি সব সময়ই জনমত জরিপে শীর্ষে ছিল। কিন্তু কেলেঙ্কারি তাতে ক্ষয় ধরিয়েছে।