বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাই সহজ আবার কঠিনও!

হঠাৎই দেশের ফুটবলে খুশির হাওয়া। এই মার্চ মাসটা বেশ পয়মন্ত হয়েই ফিরেছে লাল-সবুজের জন্য। ৯ মার্চ কম্বোডিয়া জয়ের পর এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবল মিশনের সুখস্মৃতি উপভোগ করছে সবাই। কাল উপভোগের এক সংবাদ সম্মেলনে হুট করেই ঢুকে পড়েছে বিশ্বকাপ ও এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের গরল হাওয়া। আগামী জুনে সেটা যে একটু কঠিনই হতে পারে।

এই লড়াই হবে সিনিয়র জাতীয় দলের। এএফসি র‌্যাংকিংয়ে আছে এশিয়ার ৪৬টি দেশ, র‌্যাংকিংয়ের শেষ ১২ দল খেলবে বাছাই পর্বের প্রথম রাউন্ডে। এটাকে সহজ-সরলভাবে বলা যায় প্রাক-বাছাই। র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১ নম্বরে, সুতরাং প্রাক-বাছাই খেলা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই। তবে এই ১২ দলের মধ্যে আছে মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওসের মতো দল; তাদের যে কেউ প্রতিপক্ষ হলে প্রাক-বাছাই পর্বটা কঠিন হয়ে যেতে পারে। জাতীয় দলের কোচ জেমি ডের চোখে এটা কঠিন, আবার সহজও বটে, ‘বাংলাদেশ এমন দল, তাদের জন্য সহজ বলে কোনো জিনিস নেই। আমাদের এক নম্বর পটে (ড্রয়ে) থাকা উচিত, তবে যেকোনো প্রতিপক্ষকে সামলাতে পারব, ভুটান-লাওসের মতো দলকে আমরা হারিয়েছি। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর হলে ব্যাপারটা কঠিন হবে। আমি মনে করি, আমার অনূর্ধ্ব-২৩ দল এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী।’ বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচের আত্মবিশ্বাসের উৎস অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাই পর্বে তারা বাহরাইন ও ফিলিস্তিনের কাছে হারলেও দারুণ লড়াই করেছে এবং গোলের সুযোগ তৈরি করেছে। এরপর শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে ২-০ গোলে। এই টুর্নামেন্টের আগে আবার সিনিয়র জাতীয় দল কম্বোডিয়ার মাটিতে হারিয়েছে ওদেরকে। দুইয়ে মিলে ফুটবলের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে।

এই অবস্থাটাই জেমি ডে’কে যেন আশ্বস্ত করছে আসন্ন বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ ফুটবল বাছাইয়ে। অনূর্ধ্ব-২৩ দলই একরকম সিনিয়র দল, তার সঙ্গে দু-তিনজন সিনিয়র ফুটবলার যোগ হবে আর কি। বাছাইয়ের প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত হবে আগামী ১৭ এপ্রিলের ড্রয়ে। এরপর ৬ ও ১১ জুন হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচে বাংলাদেশ ফুটবলের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। উতরে গেলে পা রাখবে বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে, হারলে বাংলাদেশের ফুটবল পৃথিবী অনেক সংকুচিত হয়ে যাবে। আগামী চার বছর এএফসি-ফিফার ম্যাচ খেলার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। কারণ ওই ম্যাচ দিয়েই শুরু হয়ে যাচ্ছে একই সঙ্গে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব। তখন প্রীতি ম্যাচ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। তবে বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচ আশাবাদী জুনের ওই প্রাক-বাছাই নিয়ে। এ জন্য তিনি অত প্র্যাকটিস ক্যাম্পেরও প্রয়োজন দেখেন না, ‘কাতার বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের জন্য খেলোয়াড়দের তৈরি করতে আলাদা ক্যাম্পের দরকার নেই। দশ দিনের প্র্যাকটিসই যথেষ্ট, দীর্ঘদিনের ক্যাম্প নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্র্যাকটিসের সঙ্গে কয়েকটি প্রীতি ম্যাচ হলেই হয়ে যাবে। কারণ এই খেলোয়াড়রা সবাই খেলার মধ্যে থাকবে, ফিটনেসও ভালো থাকবে।’

লিগের মাঝেই দীর্ঘকালীন ক্যাম্প ছাড়া এই অনূর্ধ্ব-২৩ দল খেলেছে এএফসির বাছাই পর্ব। বাহরাইন-ফিলিস্তিন শারীরিকভাবে এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশিরা লড়াই করেছে। এই লড়াইয়ে স্টুয়ার্ট ওয়াটকিস ইতিবাচক দেখছেন তাঁদের ফিটনেস ও লড়াকু মনোভাব। বাংলাদেশ দলের এই সহকারী কোচ শুধু খামতি দেখছেন গোলের জায়গায়, ‘আমরা খুব ভালো খেলেছি। লড়াই করেছি কিন্তু গোল করেছি মাত্র দুটি (তিন ম্যাচে)। গোল করার সামর্থ্য নেই। আমার মনে হয়, ঘরোয়া ফুটবলে স্ট্রাইকাররা ঠিকঠাক খেলার সুযোগ পেলে গোলের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারতাম আমরা। তারা লিগে খেলার সুযোগ পায় না সেভাবে, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’ ঘরোয়া ফুটবলে চার বিদেশির অনুমোদন দিয়েই বাফুফে জাতীয় দলের শেষ সর্বনাশটা করেছেন। তিন বিদেশির সময়ও স্ট্রাইকারদের সুযোগ মিলত কম, এখন সেটা কমে গেছে আরো। তাই বাংলাদেশের গোল ভাগ্যে বরাবরই রাহুর অবস্থান। এই দশা কাটিয়ে উঠতে পারলে কিন্তু আসন্ন বাছাই অনেক সহজ হয়ে যায় বাংলাদেশের।

তাহলে খেলোয়াড়রা লড়াই করেছে, ভালো খেলেছে। এক মাস বিরতির পর আবার লিগ শুরু হয়ে যাচ্ছে আগামী ৬ এপ্রিল থেকে।