‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও ঐক্যফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে কিনা এ নিয়ে বিরোধী শিবির প্রচার চালাচ্ছিল।
তবে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন গতকাল সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্বাচনে দুই নম্বরি কেন ১০ নম্বরি হলেও ঐক্যফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকবে।
ড. কামালের এ ঘোষণায় এ ধারণা জাতীয়তাবাদী ও ঐক্যফ্রন্ট সমর্থকদের মধ্যে দৃঢ় হল যে, নির্বাচন থেকে কোনো অবস্থাতেই সরে দাঁড়াবে না তারা।
এদিকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও দাখিলের সময় ঘনিয়ে আসছে। প্রধান প্রধান দলগুলো ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা নেয়ার কাজ। এখন শুরু হয়েছে দলীয় মনোনয়ন নির্ধারণ করার কাজ।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত পাঁচ দলের মধ্যে জেএসডি, নাগরিক ঐক্য নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। নাগরিক ঐক্য ৩৫ আসনে দলীয় প্রার্থী ঠিক করেছে। আর আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি ১৩০টিরও বেশি আসনে দলীয় প্রার্থী ঠিক করেছে।
জানা গেছে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামও প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। আজ-কালের মধ্যেই সেটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
ঐক্যফ্রন্ট কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগও প্রার্থী ঠিক করে রেখেছে। তারা অন্তত পাঁচ আসনে প্রার্থী দিতে চায়।
আর ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপি সারা দেশে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেয়ার কাজ শেষ করেছে। বিভিন্ন জনমত জরিপ চালিয়ে তারা প্রার্থী বাছাই করছে।
পাঁচ দলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি বসবে। সেখানেই ঠিক হবে কোন দল কতটি আসনে প্রার্থী দিচ্ছে। তাদের সবার প্রতীক হবে ধানের শীষ।
এই পাঁচ দলের বাইরেও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকেও বেশ কয়েকজন মনোনয়ন পাবেন। সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর নির্বাচন করবেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে।
এ ছাড়া ২০-২৫ আসন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট নাগরিকদের দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন। ওই সব আসনে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের প্রার্থী করা হবে। এ ছাড়া কিছু চমকও থাকবে।
ভিন্নমতাদর্শের রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সফল ব্যক্তিদের ওই ২০ থেকে ২৫টি আসনে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।
এর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি ইতিমধ্যে গণফোরাম থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
সুপ্রিমকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিকও ঐক্যফ্রন্টের হয়ে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাকে সিলেট-১ আসন কিংবা ঢাকার একটি আসনে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।
গণফোরামের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, নবগঠিত রাজনৈতিক মোর্চা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরাম নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির কাছে ৪০-৫০ আসন চাইবে।
এর মধ্যে প্রায় ২০-২৫টি আসনে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হবে। এরা সবাই গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও ঐক্যফ্রন্ট শীর্ষ নেতাদের কাছে পছন্দনীয় প্রার্থী।
এসব ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন আইনজীবী শাহদীন মালিক, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, সুপ্রিমকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল ইসলাম। তবে কৌশলগত কারণেই এখনই তাদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কিছুই জানাতে চাইছেন না গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণফোরামের একজন নেতা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত দলের ১৫০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছেন তারা। যাদের কথা ভাবা হচ্ছে, তারা মনোনয়ন কিনেছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।
ড. কামাল হোসেন দলের নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন, দেশের বিশিষ্ট ২৫ নাগরিককে এবার নির্বাচনে নির্বাচিত করে সংসদে নেয়া হবে। যাতে করে সংসদে গঠনমূলক আলোচনা হয়। জনগণের কথা সংসদে গিয়ে পৌঁছে। এ লক্ষ্যে দলের অন্য নেতাকর্মীদের মনোনয়নপত্র নেয়া ও চাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যেই বিবেচনা করতে বলেছেন তিনি।
জানা গেছে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহকে দিয়েও একটি আসনে নির্বাচন করার কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি নির্বাচন করবেন না।
সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টা মঈনুল হোসেনেরও নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু একাধিক মামলায় কারাগারে থাকায় তার নির্বাচন করা অনিশ্চিত।