চালের দাম কেন কমে না

দেশের বাজারে এখনো চালের দাম চড়া। বছরজুড়েই কারণে অকারণে দফায় দফায় বেড়েছে চালের দাম। দেশে বোরো ধানের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও কেন কমছে না চালের দাম? তা নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই ক্রেতামহলে। তাদের অভিযোগ, চালের যথেষ্ট সরবারহ থাকলেও কোনো অদৃশ্য কারণে ব্যবসায়ীরা চালের দাম কমান না আর খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, মিলারদের সিন্ডিকেটই দাম না কমার জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে সরকারের কোনো উদ্যোগও কাজে আসছে না। এমনকি বিদেশ থেকে আমদানি করেও চালের দাম কমানো যায়নি। সরকার দর নির্ধারণ করে দিলেও পাত্তা দেন না ব্যবসায়ীরা। তার মানে এখানে বড় কোনো সিন্ডিকেট আছে।

তারাই চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে।

খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে মিনিকেট চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ভরা মৌসুমে এই চালের দাম হওয়ার কথা ৫০-৫২ টাকা। বাজারে নাজির শাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। অন্যদিকে পাইজাম মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৮ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ৪৬-৫৬ টাকা আর গত বছর একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৮ টাকায়। এছাড়া মোটা চাল ৪৫-৫০ টাকা। যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩৮ থেকে ৪৮ টাকা। টিসিবির হিসেবেও এ মাসের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া মোটা চালে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

ঢাকা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. সায়েম বলেন, চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। কোরবানির ঈদের পর আরো বাড়বে। তিনি বলেন, চালের ব্যবসা চলে গেছে পুরোটাই মিলারদের হাতে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তারা যে রেট ধরে দেয় আড়তদাররা সেই দরেই বিক্রি করে। তাদের সিন্ডিকেটের কাছে আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা অসহায়। সরকারও তাদের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারে না। তারা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী। তা না হলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না কেন। তারা কোটি কোটি টাকার কারবার করে। বাজারের সমস্ত ধান একবারে কিনে নেয়। বাজারে তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। তারা সরকাকে বোঝাতে চায় যে, আপনি ভারত থেকে চাল আনেন। আমরা ৬০ টাকা রেট দিয়ে চুপচাপ বসে থাকি। যারা দেশি খাবে তারা ৬০ টাকা ৬৫ টাকা দিয়ে কিনে খাবে এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তারা সরকারকে এটাই বোঝাতে চায় আর কি। গতবারও তো তাই হলো। তারা ৬২ টাকা রেট দিয়ে বসে থাকলো। আর সরকার ভারত থেকে চাল আনলো। তার মানে চালের ব্যবসা সম্পূর্ণ তাদের হাতে।
তিনি বলেন, সরকার শুধু খুচরা বাজারে তদাকরি না করে যদি মিলারদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতো, তাহলে অনেক উপকার হতো। সরকার তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে যে তোমাদের হাতে কি পরিমান ধান-চাল আছে। এখন সরকারতো সেটা করে না। তারা কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করে বাজারের সব ধান কিনে গুদামজাত করে এরপর বলে চালের দাম বেড়ে গেছে। সরকারকে দেখতে হবে মিলাররা ব্যাংক থেকে কত কোটি টাকা লোন নিয়ে কত টন ধান কিনেছে এবং সেই ধানগুলো এখন কোথায়। কিন্ত সেই হিসেব সরকারের কাছে নেই। মিলাররা যার যার গুদাম ভরে রেখেছে। সরকারও ব্যাংক থেকে মাসে মাসে ইন্টারেস্ট পাচ্ছে। তারা এগুলো করে ভারত থেকে চাল আমদানির চিন্তা করছে। আর এভাবেই চালের দাম বেড়েই চলেছে। এখন ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়ে গেল। যে মিনিকেট হওয়ার কথা ৫৫ টাকা ৫৮ টাকা। সেই চাল এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা। কোরবানির পর আরো বাড়বে। আর বাজারে তো এখন মোটা চাল পাওয়াই যাচ্ছে না। উধাও হয়ে গেছে।

ওদিকে, জুনের মধ্যে মিল মালিকদের কাছ থেকে চুক্তি মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে বোরো সংগ্রহ করতে খাদ্য বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। অন্যথায় মিল মালিকদের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন তিনি। গত সোমবার এক সভায় তিনি বলেন, আগামী ৩০শে জুনের মধ্যে ৭৫ শতাংশ বোরো সংগ্রহ নিশ্চিত করে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে ধান ও চাল সংগ্রহের যে নির্দেশনা জারি হয়েছে সে মোতাবেক সংগ্রহ অভিযান সফল করতে হবে। এ সময় চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। চৈত্র-বৈশাখ মাসে দেশে চালের দাম বাড়েনি, দেশে বোরো ধানের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও এখন চালের দাম কেন বাড়ছে তা খতিয়ে দেখতে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী।