বর্ষা এলেই বুড়িগঙ্গায় কিছুটা স্বচ্ছ রূপ ফিরে আসে

খরস্রোতা বুড়িগঙ্গা। শহরের যাবতীয় নোংরা আবর্জনায় পানির রং থাকে কালো কুচকুচে। কিন্তু বর্ষা এলেই বুড়িগঙ্গায় কিছুটা হলেও তার আগের রূপ ফিরে আসে। পানি বাড়তে থাকে। ফলে পানির রং বদলে স্বচ্ছতে রূপান্তরিত হতে থাকে। এবারও বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে বুড়িগঙ্গায় একই দৃশ্য বিরাজ করছে। পানির থইথই শব্দ, বাতাসে হালকা ঢেউ, ডিঙ্গি নৌকায় যাত্রী পারাপারের দৃশ্য সে এক অন্যরকম পরিবেশ। বিকেল হলে কেউ কেউ শহরের চার দেওয়াল থেকে বুড়িগঙ্গার মনোরম দৃশ্য দেখতে ভিড় করেন।

সদরঘাটের বুড়িগঙ্গার বিভিন্ন ঘাট থেকে ঘণ্টা হিসেবে নৌকা ভ্রমণ করা যায়। বিকেল হলে বুড়িগঙ্গার মনোরম দৃশ্য আরো বেড়ে যায়।
এ সময় বুড়িগঙ্গায় ঢেউয়ের উপরে ঢেউ আছড়ে পড়ে। যেন যৌবন ফিরে পেয়েছে। স্বচ্ছ জলে কখনো কখনো পাল তোলা নৌকার দেখা মিলে। এমন মনকাড়া দৃশ্য দেখে নদীর দুপাড়ের মানুষ আনন্দে আটখানা। এতদিন বুড়িগঙ্গার পানি ছিল ঘোলা কালো আর দুর্গন্ধযুক্ত। আকস্মিক পানির স্বচ্ছতা বুড়িগঙ্গার সব কিছুকেই পাল্টে দিয়েছে। মুক্ত হাওয়া বইছে এখন বুড়িগঙ্গার দুপাড়ে। মাঝি-মাল্লাদের কণ্ঠেও এখন সুমধুর গান।
বিকাল হলেই দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসছেন বুড়িগঙ্গার পাড়ে।

নদী পাড়ের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারি স্থানান্তরের পর বুড়িগঙ্গা কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তবে বর্ষা মৌসুমে এবার বুড়িগঙ্গা পেয়েছে ভরা যৌবন। বাতাস ছাড়লেই নদীতে ঢেউ তুলে। সেই ঢেউয়ে নৌকা দোল খায়। তার সঙ্গে দোলে যাত্রীরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান জোবায়ের বলেন, বুড়িগঙ্গা নদী একটি জীবন্ত ইতিহাস। বর্ষা মৌসুমের আগে নদীটি মৃতপ্রায় অবস্থায় থাকে। বর্ষা মৌসুমে পাল্টে যেতে শুরু করে বুড়িগঙ্গা। রূপ আর রঙে বদলে গেছে বুড়িগঙ্গা। বদলে গেছে বুড়িগঙ্গার পানি এবং পানির রঙে ফিরেছে স্বচ্ছতা।
নদী ভ্রমণে আসা সবুজ অরণ্য বলেন, পড়ন্ত বিকেলের সূর্যালোকে মনে হচ্ছে বুড়িগঙ্গা যেন হাসছে। কিন্তু তার এ হাসি ক্ষণস্থায়ী। সারা বছর তার এ হাসি ধরে রাখতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সমাজের সর্বস্তরের বিবেকবান মানুষজনকে।
বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী বসবাসকারীরা জানান, এবার বর্ষা আসার আগেই নদীর পানির রং বদলাতে শুরু করেছে। এটাকে তারা ভালো লক্ষণ হিসেবে মনে করছেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শেষ হতে না হতেই বুড়িগঙ্গার পানি কালো রং ধারণ করে। তখন গোসল করাতো দূরের কথা বুড়িগঙ্গার পানি হাতে নেয়াই মুশকিল হয়ে যায়। পচা পানির গন্ধে দুই তীরের বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দেয় পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি। কলেজছাত্রী ফাতেমা মোল্লা বলেন, স্বচ্ছ পানি। মৃদু ঢেউ। মাঝির পাল তোলা নৌকা। বুড়িগঙ্গায় এমন দৃশ্য দেখে অবাক মনে হয়। যে নদীর কাছে যাওয়া মুশকিল হতো। নাকে রুমাল চেপে পারাপার হতে হতো। পানি স্পর্শ করাতো দূরের কথা। অথচ সেই নদীতেই প্রতিদিন আসতে শুরু করেছে বহু দূরদূরান্তের ভ্রমণপিয়াসীরা। ২৫ বছর ধরে তৈল ঘাটে নদী পারাপার করছেন আবদুর রাজ্জাক মাঝি।
তিনি বলেন, আমরা এখন মনের সুখে নৌকা চালাই। শান্তিতে নদী পারাপার করি। বিকেল হলে বহু লোকজন ঘুরতে আসে। ঘণ্টা হিসেবে ভ্রমণ করে। অনেকে শখ করে নৌকা চালায়। আনন্দে তাদের সন্ধ্যা গড়ায়। তবে রাত হওয়ার আগেই সবাই ফিরে যায়। সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সভাপতি ড. কবিরুল বাশার মানবজমিনকে বলেন, বিআইডব্লিইটিএ-র গবেষণায় দেখা গেছে বুড়িগঙ্গার তলদেশে প্রায় ১০ ফুট পলিথিনের স্তূপ জমে গেছে। ওই গবেষণার পর কিছু পলিথিন অপসারণ করা হয়। এই স্বচ্ছ পানির প্রবাহ ধরে রাখতে হলে তলদেশে জমে থাকা অবশিষ্ট পলিথিনও দ্রুত অপসারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে বুড়িগঙ্গায় যাতে ময়লা আবর্জনা ফেলতে না পেরে সেদিকেও কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।