নারী উদ্যোক্তাদের কর মুক্ত আয়সীমা ৭০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব ইতিবাচক

চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী

নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক আয়সীমা ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০ লাখ টাকা করা প্রস্তাবিত বাজেটের ইতিবাচক দিক বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা জানান।
মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, বৈশ্বিক মহামারীর এই কঠিন সময়ে প্রস্তাবিত বাজেট অত্যন্ত সাহসী এবং সময়োপযোগী। এসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা- বাজেটের ইতিবাচক দিক। নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বাজেটে নানামুখী প্রস্তাবনাসমূহের সঠিক বাস্তবায়ন হলে দেশের নারীর অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এছাড়া মহামারী করোনায় সবচাইতে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত নারী উদ্যোক্তারা পুনরুজ্জ্বীবিত হবেন। অন্যদিকে দরিদ্র নারীদের ক্ষুদ্র বীমার আওতায় আনার প্রস্তাব তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের ক্ষমতায়নে সহায়ক হবে। এছাড়াও নারী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন, জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং নারীর মানবিক সক্ষমতা, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুবিধা বৃদ্ধি, নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারীদের জন্য অবকাঠামো ও যোগাযোগ পরিষেবা বৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করার প্রস্তাব নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব নারীদের জন্য প্রস্তাবিত বিষয় সমূহ বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। স্বল্প শিক্ষিত দরিদ্র ও অসহায় নারীদের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ ও আইটি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ অবশ্যই প্রসংশনীয়। মহিলাদের জন্য ঢাকায় কমিউনিটি নার্সিং ডিগ্রি কলেজ স্থাপন, তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পিছিয়ে পড়া নারীর উন্নয়ন হবে বলে আশা করছি। তবে নারী উদ্যোক্তাদের একটি বড় খাত হচ্চে বিউটি পার্লার ব্যবসা। যেখানে উদ্যোক্তা, কর্মী ও সেবাগ্রহীতা প্রায় সকলেই নারী। এছাড়াও পিছিয়ে পড়া আদিবাসী নারীরাও এই ব্যবসায় সরাসরি সম্পৃক্ত। এই খাতে সেবার মূল্য বৃদ্ধির ফলে মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত নারী উদ্যোক্তারা পুনরায় হুমকির মুখে পড়বেন।
তিনি আরো বলেন, পর পর দুই ধাপে মহামারীর কারণে দেশের সর্বস্তরের মানুষ যখন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল ঠিক সেই মুহূর্তে বর্তমান সরকারের ঘোষিত বাজেট দেশের মানুষকে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখিয়েছে। মহামারী মোকাবেলায় ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন ছিল তবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার বাইরের জেলাসমূহে শিশু ও নবজাতক, নারী ও মাতৃস্বাস্থ্য, অনকোলজি, ওয়েল্ডিং ও প্রিভেনটিভ মেডিসিন ইউনিট থাকা সাপেক্ষে ন্যূনতম ২৫০ শয্যার সাধারণ হাসপাতাল এবং ২০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনে ১০ বছর পর্যন্ত কর অব্যহতির প্রস্তাব দেশের স্বাস্থ্যখাতকে তৃণমূল পর্যায়ে পুনর্গঠন করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি মহামারীতে ভেঙেপড়া শিক্ষাখাতকে পুনরুজ্জ্বীবিত করবে। কৃষি-পল্লী উন্নয়ন এবং কৃষিখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ফলে মহামারীর এই দুঃসময়ে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি কমবে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা খাত, যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ফলে সাধারণ জনগণের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটবে এবং মানুষের জীবন থেকে অনিশ্চয়তা লাঘব হবে।
মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটবে। বাজেটে চাল, ডাল, চিনি, লবণ, গরুর দুধ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পাট ও তাঁত পণ্য, বোতলজাত পানি ইত্যাদির মূল্য কমানোর প্রস্তাব সাধারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের নিশ্চয়তায় এক ধাপ এগিয়ে যাবে। বিড়ি সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি দেশের সাধারণ জনগণকে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করবে। প্লাস্টিক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ জনগণের উপর কিছুটা চাপ বাড়বে। বাজেটে আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের জীবন-মান উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্র শিল্পে তাদের চলমান অংশগ্রহণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আলাদাভাবে প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করছি। যার ফলে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষ্টি ও ঐহিত্য ধরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।