জানুয়ারিতেই দেশে আসে করোনার বিলাতি ধরন

দেশে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এরমধ্যেই বৃটেনে শনাক্ত হওয়া নতুন ধরনটি বাংলাদেশেও ধরা পড়েছে। গত জানুয়ারিতেই তা বাংলাদেশে আসে। যদিও করোনা এই ভেরিয়েন্ট ধরা পড়ার তথ্য প্রকাশ হয়েছে বুধবার। করোনার নতুন এই ধরনের কতোটুকু ছড়িয়েছে তা নিয়ে এখনো বিস্তৃত কোনো গবেষণা হয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। বৃটেনে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের নাম ‘এন৫০১ওয়াই’। এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন গতকাল মানবজমিনকে বলেন, আমরা জানুয়ারির প্রথম দিকে পাঁচ বা ছয় জনের নমুনায় যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনের করোনাভাইরাস খুঁজে পেয়েছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, এই ভাইরাস দেশে কতটা ছড়িয়েছে তার বিস্তারিত জানতে কন্টাক্ট ট্রেসিং চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত ৫ই জানুয়ারি প্রথম এই ভাইরাস পাওয়া যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি বৃটেন থেকে দেশে ফিরেছিলেন। ঢাকা ও সিলেটেও এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। বৃটেন থেকে যারা দেশে ফিরছেন তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখার বিষয়ে জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। অন্যথায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পরবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

আইইডিসিআর’র সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, এই নতুন স্ট্রেইনের কারণে শনাক্তের হার বাড়ছে কি না, তা এখনই বলা কঠিন। এর জন্য জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে হবে। ব্যয়বহুল হলেও ভাইরাসটির রূপ পরিবর্তন হচ্ছে কি না, তা জানতে সরকারের নিয়মিতভাবে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা উচিত। এর জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, ব্রিটেনের কাছে নতুন ভেরিয়েন্টের চরিত্র আমরা যা পাচ্ছি ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগের ভাইরাসের সঙ্গে অন্য কোনো পার্থক্য নেই। যে সকল ভেরিয়েন্ট বেরিয়েছে পৃথিবীতে এগুলোর কোনোটিই ভ্যাকসিনের জন্য হুমকি স্বরূপ নয়। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের ভ্যাকসিন পুরোপুরি কার্যকর। নতুন ভেরিয়েন্ট হলেই আমরা সতর্ক হই। হয় সে (ভাইরাস) দুর্বল হবে। অথবা সেটা বেশি বেশি ছড়াবে। মানুষ বেশি অসুস্থ হবে। ভাইরাসের চরিত্র যেগুলো বদল হয়েছে এগুলোর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। একটিই পার্থক্য এটা অন্য ভাইরাসের চেয়ে একটু বেশি তাড়াতাড়ি ছড়ায়।

তিনি বলেন, নতুন ভেরিয়েন্ট বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে। এবং বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটবে। সেদিক দিয়ে বিপদ। এই ভেরিয়েন্ট থেকে যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য টিকা দিতে হবে। টিকা দেয়ার ফলে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগটা কমে যায়। টিকার সঙ্গে লড়াই করে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়ে। ইউকে ভেরিয়েন্ট নির্ণয়ে সবকিছুই আমাদের জানা আছে। কিন্তু এতে অনেক খরচ হয়।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, এই ভাইরাসটির শনাক্ত ব্যয়বহুল। অনেকের কন্ট্যাক্ট ফলোআপ করতে হয়েছে। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করে তাদের মধ্যে থেকে নতুন করে শনাক্ত হয়নি। বর্তমানে আক্রান্তদের মধ্যে ইউকে ভেরিয়েন্ট নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৮৩টি দেশে করোনার নতুন এই স্ট্রেইনের সংক্রমণ হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, বৃটেনে পাওয়া করোনাভাইরাসের এই নতুন স্ট্রেইন আরো বেশি সংক্রামক।

গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন স্ট্রেইন বিষয়ে বৃটেন সরকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, নতুন এই স্ট্রেইন আগের স্ট্রেইনের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক হতে পারে। গত সেপ্টেম্বরে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর করোনার নতুন ধরনটি অত্যন্ত দ্রুত বৃটেনে ছড়িয়ে পড়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটিশ সরকারের বিজ্ঞানীরা অন্যসব স্ট্রেইনের তুলনায় বৃটেনের নতুন স্ট্রেইনটিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন। এতে আরও বলা হয়েছে, বৃটেনের এই নতুন স্ট্রেইন হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে।