সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার স্পেকট্রাম বিক্রি করলো বিটিআরসি

মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর কাছে ১৫ বছর মেয়াদে ৭ হাজার ৬৩৪ দশমিক ২৭ কোটি টাকার স্পেকট্রাম বিক্রি করেছে বিটিআরসি।

সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিন্টোলে অনুষ্ঠিত নিলামে সর্বমোট ২৭ দশমিক ৪ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম বিকিকিনি হয়। এরমধ্যে ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে ৭ দশমিক ৪ এবং ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে ২০ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম ছিলো।

এতে ৫ বছর ৭ মাস সময়ের হিসাবে সবমিলে ৩ হাজার ৯৩ দশমিক ৮৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে বিটিআরসি। যেখানে স্পেকট্রামের দাম ২ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা এবং ভ্যাট ২১৫ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।

আর ১৫ বছরের হিসাবে এই অংক ৭ হাজার ৬৩৪ দশমিক ২৭ কোটি টাকা।

অপারেটরগুলো নিলামে এই স্পেকট্রাম পেয়েছে ১৫ বছরের জন্য। কিন্তু প্রাথমিকভাবে তাদের ১৫ বছরের জন্য দেয়া হচ্ছে না এই বরাদ্দ। কারণ তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ হিসেবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত তারা তা পাবে। পরে লাইসেন্স রিনিউ হলে বাকি সময়ের জন্য এই স্পেকট্রম বরাদ্দ মিলবে আজকের নিলামের দামেই।

এরমধ্যে প্রথম মেয়াদকালের জন্য বরাদ্দকৃত স্পেকট্রামের মূল্য ভ্যাটসহ ২৫ শতাংশ ২২ মার্চের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। অর্থ পরিশোধের পর সাময়িক স্পেকট্রাম বরাদ্দপত্র জারি করবে বিটিআরসি।

এ হিসেবেও এখন ৭৭৩ কোটি ৪৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাবে বিটিআরসি। অপারেটররা স্পেকট্রাম বরাদ্দপত্র জারির তারিখ হতে প্রতি এক বছর পর বছরে ১৫ শতাংশ হারে বাকি ৭৫ শতাংশ মূল্য পাঁচটি কিস্তিতে পাঁচ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে পারবে।

বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার এ.কে.এম. শহীদুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রায় ১২ ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ নিলামে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং টেলিযোগাযোগ সচিব মো: আফজাল হোসেন ।

সোমবার সকাল ১১ টায় দেশের চার মোবাইল অপারেটরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শুরু হয় টেলিযোগাযোগ খাতের বহুল আলোচিত এ নিলাম। এবারের নিলামে ভিত্তিমূল্য ধরা হয় সরকারের ২০১৮ সালের নিলামের বিক্রয়মূল্য অনুযায়ী, অর্থাৎ ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডের ১ মেগাহার্জ স্পেকট্রামের মূল্য ১৫ বছরের জন্য ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হারে এবং ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডের ১ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম মূল্য ১৫ বছরের জন্য ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হারে। ২০১৮ সালের নিলামের স্পেকট্রাম অপারেটরদের চাহিদা অনুযায়ী ২জি বা ৩জি অথবা ৪জি লাইসেন্সের মেয়াদে বরাদ্দ গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছিল।

কে কতো স্পেকট্রাম কী দামে কিনেছে ?

গ্রামীণফোন :

অপারেটরটি ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড হতে প্রতি মেগাহার্জ ৩১ মিলিয়ন ডলার দামে ০ দশমিক ৪ মেগাহার্জ এবং ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড হতে প্রতি মেগাহার্জ ২৯ মিলিয়ন ডলার দামে ৫ মেগাহার্জ এবং প্রতি মেগাহার্জ ৪৬ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ৫ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম কিনেছে।

ফলে গ্রামীণফোনের বর্তমান স্পেকট্রাম ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে ১৯ দশমিক ৬ মেগাহার্জ হতে ২০ দশমিক ০ মেগাহার্জে এবং ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে ১০ মেগাহার্জ হতে ২০ মেগাহার্জ উন্নীত হলো।

রবি :

রবি ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড হতে প্রতি মেগাহার্জ ৩১ মিলিয়র ডলার দামে ২ দশমিক ৬ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম কিনেছে। ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড হতে ২৯ মিলিয়ন ডলার দামে ৫ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম কেনে।

ফলে ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে রবির বর্তমান স্পেকট্রাম ১৭ দশমিক ৪ মেগাহার্জ হতে ২০ দশমিক ০ মেগাহার্জে এবং ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে বর্তমান ১০ মেগাহার্জ হতে ১৫ মেগাহার্জ বেড়েছে।

বাংলালিংক :

বাংলালিংক ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড হতে ৪ দশমিক ৪ মেগাহার্জ এবং ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড হতে ৫ দশমিক ০ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম কিনেছে।

এতে ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে বাংলালিংকের বর্তমান স্পেকট্রাম ১৫ দশমিক ৬ মেগাহার্জ হতে ২০ দশমিক ০ মেগাহার্জে এবং ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে ১০ মেগাহার্জ হতে ১৫ দশমিক ০ মেগাহার্জ হলো।

টেলিটক :

টেলিটক ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক নিলামে অংশগ্রহণ করেও শেষ পর্যন্ত কোনো স্পেকট্রাম কিনতে পারেনি। সুতরাং ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে টেলিটকের বর্তমান স্পেকট্রাম ১০ মেগাহার্জ ব্যবহার করেই সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

অপারেটরগুলো তাদের বরাদ্দকৃত স্পেকট্রামে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল হতে অপারেটরগণ সেবা দিতে পারবে।

বিটিআরসি বলছে, তরঙ্গ বরাদ্দ করায় অপারেটরগুলোর সেবায় গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।