গত ৪ মাসে এলো ২ হাজার ৭১৭ কেজি সোনা

মাত্র দু’টি স্বর্ণের বার আনার সুযোগে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে গত ৪ মাসে এলো ২ হাজার ৭১৭ কেজি সোনা। যা গত এক বছরে আসা মোট স্বর্ণের পরিমাণের চেয়েও ২০ গুণ বেশি। আর দিন দিন বাড়ছে এই স্বর্ণের বার আনা।

বিমানবন্দরে কর্মরত কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মুছা খান শনিবার সকালে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, করোনাকালীন সময়ে বন্ধ থাকার পর বিমান চলাচল শুরু হলে বৈধ ও অবৈধভাবে সোনা আনা শুরু করে যাত্রীরা। এরমধ্যে গত অক্টোবর মাসে ২২২৪ পিস, নভেম্বর মাসে ৯৩৬৭ পিস এবং ডিসেম্বর ১১২৬০ পিস স্বর্ণের বার যাত্রীরা এনেছেন ঘোষণা দিয়ে। এর আগে সবচেয়ে কম স্বর্ণের বার আসে গত সেপ্টেম্বর। এ মাসে আসে মাত্র ৩০ পিস।

অন্যদিকে, ৩৪৫টি স্বর্ণের বার ছিল ঘোষণা বহির্ভুত। যা কাস্টমস কর্মকর্তারা তল্লাশি করে যাত্রীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে। সেগুলোও রাজস্ব দিয়ে ছাড়িয়ে (ডিটেকশন মেমো) নিয়েছেন যাত্রীরা। সবমিলিয়ে স্বর্ণের বার এসেছে মোট ২৩ হাজার ২২৬টি। যার ওজন ২৭১৭ কেজি। যেখান থেকে বৈধভাবে ৬৭ কোটি ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৩৮ টাকা রাজস্ব আয় করেছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমস।

এর আগে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে দুটি স্বর্ণের বার নিয়ে আসা যাবে বলে ঘোষণা দেয়। এই সুযোগে চার মাসে দেশে এসেছে ২ হাজার ৭১৭ কেজি সোনা। তবে বৈধ ও অবৈধ পথে আসা এতো স্বর্ণ যাচ্ছে কোথায় তা জানেন না কাস্টমস কর্মকর্তারা।

কাস্টমসের তথ্যমতে, স্বর্ণ পাচারের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এ বন্দর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ওমান থেকে অবাধে স্বর্ণ পাচার হয়ে আসছিল একসময়। কিন্তু সম্প্রতি সরকার স্বর্ণের দুটি বার আনার সুবিধা দেয়ায় এখন বৈধ পথেই নিয়ে আসা হচ্ছে স্বর্ণগুলো।

দেশের ভেতরে এতো স্বর্ণ ঢুকলেও শেষপর্যন্ত সেগুলো আর দেশে থাকছে না বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তারা বলছেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহরের পাচারকারীদের হাতবদল হয়ে এসব স্বর্ণ চলে যাচ্ছে ভারতে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, যাত্রীদের আনা স্বর্ণ কিভাবে ব্যবহার হচ্ছে তা আমাদের জানা নেই। তবে এখান থেকে অন্য পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের খবরও আমরা মাঝে মাঝে পত্রপত্রিকায় দেখি। তবে সরকার দুটি স্বর্ণের বার নিয়ে আসার বৈধতা দেয়ায় সরকার ভালই রাজস্ব পাচ্ছে। এর আগে যেসব স্বর্ণ অবৈধভাবে যাত্রীরা আনতেন। সেটি এখন বৈধভাবে আনছেন।

সূত্রমতে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এসেছে ৮২৯০ গ্রাম স্বর্ণ, ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছে ৬৬৭ গ্রাম, মার্চে ৭২৪ গ্রাম। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। পরে ফ্লাইট পুনরায় চালুর সাথে সাথে অনেকটা ঝড়ের বেগে স্বর্ণ ঢুকতে শুরু করে বাংলাদেশে।

এর আগে ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে মাত্র ১৯৩ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার হয়, যা পাচার করা স্বর্ণের তুলনায় অতি নগণ্য। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফ্লাইট চালুর পর থেকে গত চার মাসে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ২৬৭৫ কেজি ঘোষণা দিয়ে আনা হয়েছে। ৪১ কেজি স্বর্ণ ডিটেকশন মেমো (ডিএম) এর মাধ্যমে আনা হয়েছে।