শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর থেকেঃ দিনাজপুরে ঘোড়াঘাট উপজেলার ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় আটক যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম নেশাগ্রস্থ অবস্থায় টালমাতাল অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় জনতার সামনে আটক জাহাঙ্গীরকে পুলিশ শাসনবানী দিচ্ছেন। তাকে মাদক সেবন আর না করার জন্য বলছেন।
শুধু এটাই নয়, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম এর আগে সংখ্যবার মাদকসহ পুলিশের হাতে ধরা খেয়েছেন। এ সংক্রান্ত থানায় মামলাও রয়েছে,তার বিরুদ্ধে।ঘোড়াঘাট কাছিগাড়ি গ্রামের সাবেক পুলিশ সদস্য আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর।
এ সব ঘটনার প্রতিবাদ করায় এর আগে যুবলীগ নেতা স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের উপরও হামলা করেছেন,বলে জানিয়েছেন,স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুবলীগ নেতা নামধারী সন্ত্রাসী ও মাদক পাচারকারী জাহাঙ্গীর,আসাদুল এবং মাসুদকে এর আগেই দল থেকে বহিস্কারের চিঠিও জেলা এবং কেন্দ্রীয় কমিটিকে দিয়েছেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় দু’চারজন নেতা এবং পুলিশ প্রশাসনের কতিপয় দূনীর্তিবাজ কর্মকর্তার সাথেও রয়েছে তার ভালো সম্পর্ক। এ কারণে অপরাধ করেও তিনি বারবার ছাড় পেয়ে গেছেন। এমন মন্তব্য ঘোড়াঘাট উপজেলার অসংখ্য প্রতিবাদি মানুষের।
এদিকে ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহŸায়ক জাহাঙ্গীর হোসেনের ছত্রছায়ায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার সব কর্মলকান্ড পরিচালিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর,নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর) আসনের এমপি শিবলী সাদিক।
তিনি জানিয়েছেন, ‘আসাদুল, জাহাঙ্গীর ও মাসুদ গ্রেফতার হয়েছে। তাদের (আসাদুল,জাহাঙ্গীর ও মাসুদ) বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদকের বিস্তারের একাধিক মামলা রয়েছে। এ কারণে তাদের দল থেকে বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি আড়াই থেকে তিন মাস আগে যুবলীগকে জানাই। স্থানীয় নেতাদের ও সেন্ট্রাল একাধিকবার জানাই। স্থানীয় পর্যায় থেকেও জেলা কমিটিকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত চিঠির কোনও রিপ্লাই আসেনি। এদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, দেশবাসীসহ সেটা আমারও প্রশ্ন, আমিও জানতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘এরা মাদকাসক্ত। একাধিক মামলার আসামি। জাহাঙ্গীর, আসাদুল, মাসুদ,নান্নু এরা একই গ্রæপে চলাচল করে। জমিজমা কেনা সংক্রান্ত, বিশেষ করে ওসমানপুর কেন্দ্রীয় বিষয়ে এদের অনেক দৌরাত্ম। আমি এই সব কাজ পছন্দ করি না। সেকারণে আমার কোনও কার্যক্রমে অংশ নিতে দেই না। একারণে এরা আমাকে নিয়ে অশালীন কথাবার্তাও লিখেছে। আমি একাধিকবার তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়ে কোনও জবাব পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউএন’ও ওপর হামলার ঘটনায় এই যে আওয়ামী লীগ পরিবারের ওপর কাঁদা লেগে গেলো, এর জবাব দেবে কে ? যারা দায়িত্বে আছেন, তদেরই দিতে হবে বলে আমি মনে করি।’
এবিষয়ে দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের দেয়া অভিযুক্ত যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ডিও লেটারটি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু;এ পর্যন্ত কোন উল্টর পাওয়া যায়নি। তাদের (জাহাঙ্গীর) আহবায়ক কমিটি ২০১৭ সালে গঠন করা হয়।সাধারণতঃ আহবায়ক কমিটি ৩ মাসের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু,সেটি চলছে,তিন বছর ধরে। এটি কোন ভাবেই হতে পারেনা। আমরা দায়িত্ব নেয়ার আগেই হয়েছে এ কমিটি।
যুবলীগ নেতা রাশেদ পারভেজ পূর্বের জেলা কমিটি’কে এর দায়-দায়িত্ব বহন করতে বলেও জানান।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,এলাকার বিভিন্ন জনের কোন জমি সংক্রান্ত বিবাদ,চাকুরি প্রদান,দখল,পাচার,মামলা থেকে রেহাই,বিরোধের সমাধান দেখার জন্য কন্ট্রাক (ঠিকা) নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই যুব লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে।
জাহাঙ্গীর আলম ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক।ওই উপজেলার কাছিগাড়ি গ্রামের আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর। সন্দেহভাজন প্রধান আসামী আসাদুল হক (৩২)কে আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় র্যাব আটক করে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি সীমান্তের কালীগঞ্জ এলাকায়। তার বাড়ি ঘোড়ঘাট উপজেলার ৪ নং ঘোড়াঘাট ইউপি’র সাগরপুর গ্রামে।তার বাবার নাম আমজাদ হোসেন।
এর আগে দেশের বর্তমানে আলোচিত ঘোড়াঘাট উপজেলার ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় ঘোড়াঘাট থেকে জাহাঙ্গীর (৩৬) ও মাসুদ রানা (৩৪) দু’জনকে আটক করে আইন শৃংখলা বাহিনী। জাহাঙ্গীর ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক এবং মাসুদ ঘোড়াঘাট সিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা। ঘোড়াঘাট কাছিগাড়ি গ্রামের আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর এবং মাসুদ ঘোড়াঘাট উপজেলার দক্ষিণ দেবিপুর গ্রামের আদু মিয়ার ছেলে।