করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষায় আশাপ্রদ ফলাফল

করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলোর ট্রায়ালের প্রাথমিক ফলাফলকে আশাপ্রদ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে কার্যকর করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে করা পরীক্ষায় দেখা গেছে বেশ কয়েকটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্ত ইমিউন রেসপন্স গড়ে তোলে কোনো ধরণের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। প্রায় ২ ডজন ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে। এছাড়া ১৪০টি ভ্যাকসিন নিয়ে সারাবিশ্বে কাজ চলছে।
এদিকে কিছু বিজ্ঞানী ভাইরাসের সংস্পর্শে আসতে ইচ্ছুক এমন স্বেচ্ছাসেবী খুঁজছেন যেন গবেষণার গতি বৃদ্ধি পায়। এদের মধ্যে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীরাও রয়েছেন। তারা বলছেন, আগে যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা যখন ভাইরাসের সংস্পর্শে আসবেন, তখন তাদের কী অবস্থা হয় সেটা দেখেই বোঝা যাবে তারা সুরক্ষিত কিনা। এ নিয়ে মার্কিন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অব হেলথের প্রধানকে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন বিজ্ঞানীরা।

তাদের মত, এতে ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।
করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতা দিনকে দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ফার্মা জায়ান্ট ফিজার ও বায়োটেক কোম্পানি মডার্নার ভ্যাকসিনের দু’টি ট্রায়ালের প্রাথমিক ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, উভয় ভ্যাকসিনই স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলছে। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন পরীক্ষার ফলাফল বের হবে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে দুই ধরণের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করার কথা। এটি শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি ও টি-সেল উৎপাদন করবে। যেকোনো ভাইরাল সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি ও টি-সেলের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ধরেই নেয়া হচ্ছে যে এই ভ্যাকসিনও মানুষের শরীরে শক্ত ইমিউন রেসপন্স গড়ে তুলবে।
কিন্তু এসব ভ্যাকসিন শেষ পর্যন্ত কাজ করবে কিনা, তা এই পরীক্ষা থেকেই বোঝা যাবে না। প্রশ্ন হলো, এসব ভ্যাকসিন শরীরে যেই প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করবে, তা কি সংক্রমণ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবে? নাকি এর ফলে হয়তো ভ্যাকসিন-গ্রহীতা ব্যক্তি হয়তো সুস্থ থাকবেন, কিন্তু তারপরও তার কাছ থেকে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চালানো হবে আরও পরীক্ষা। নিশ্চিত উত্তর জানতে আগামী বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
এখন সম্ভবত ভ্যাকসিন নিয়েছেন এমন স্বেচ্ছাসেবীদের ভাইরাসের সংস্পর্শে আসতে বলা হবে। এতে করে বোঝা যাবে বাস্তবে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসলে তাদের শরীরে ভ্যাকসিনের কারণে সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা কার্যকরি। এ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। স্বেচ্ছাসেবীদের রোগের ঝুঁকিতে ফেলা কতটা নৈতিক তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ ধরণের গবেষণাকে চ্যালেঞ্জ স্টাডিজ বলা হয়।
তবে ইতিহাসে এই ধরণের নজির আছে অনেক। ১৮ শতকের শেষ নাগাদ বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার দেখতে পেলেন যে গোয়ালয়ে কাজ করেন এমন ব্যাক্তি স্মলপক্সে আক্রান্ত হন না। তিনি বুঝতে পারলেন যে এই ব্যাক্তি ইতিমধ্যেই কাউপক্সে আক্রান্ত হয়ে গেছেন। কাউপক্সে মৃদু অসুস্থ হয় মানুষ। আর স্মলপক্স মানুষকে অনেক ভোগায়। কিন্তু কেউ কাউপক্সে আক্রান্ত হলে তার আর স্মলপক্স হয় না। এই তত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তিনি ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে প্রথমে কাউপক্সে আক্রান্ত করান। এরপর তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই তাকে স্মলপক্সের আক্রান্ত করান। পরে দেখা যায় ওই শিশুর আর স্মলপক্স হয়নি।
এছাড়াও কলেরা, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড ও ডেঙ্গু রোগের ভ্যাকসিন পরীক্ষায়ও এই ধরণের চ্যালেঞ্জ স্টাডিজ হয়েছে। কিন্তু পার্থক্য হলো, সেসব ক্ষেত্রে ওই রোগগুলোর কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল। ফলে ভ্যাকসিন যদি অকার্যকরও হতো আর স্বেচ্ছাসেবীরা যদি রোগে অসুস্থ হয়ে যেতেন, তাহলে পৃথক চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। কভিড-১৯ তো সেরকম রোগ নয়।
(ফার্গাস ওয়ালশ বিবিসির মেডিকেল সংবাদদাতা। তার মন্তব্য প্রতিবেদনটি বিবিসি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। পরিমার্জিত।)