নাজিরহাট মাদ্রাসা সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতির উপর হামলা, এলাকায় উত্তেজনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়িঃ

ফটিকছড়িতে অবস্থিত দেশের প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল জামেয়াতুল আরবিয়া নছিরুল ইসলাম নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় মুহতামিম নিয়োগ নিয়ে চলমান সংকট দিনদিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এ নিয়ে প্রায়ই ঘটছে বাদ-বিবাদসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। রবিবার সকালে পুলিশের সামনেই মাদ্রাসার নব নিযুক্ত মুহতামিম দাবীদার মাওলানা সলিমুল্লাহ’র অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছেন মাদ্রাসা সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি, প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য, সত্তর বছরের বয়োবৃদ্ধ মুহাম্মদ ইউসুফ আনসারী। ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাদ্রাসায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাদ্রাসার প্রধান ফটকের পাশে অফিস কক্ষের সামনে বসে মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মোহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে আলাপ করছিলেন দাতা পরিবারের সদস্য ইউসূফ আনসারী। এমন সময় আকস্মিকভাবে মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক ও মুহতামিম দাবিদার মাওলানা সলিমুল্লাহ গালিগালাজ করতে করতে এসে ইউসুফ আনসারীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাঁর পাঞ্জাবির কলার ধরে টানা হেঁচড়া শুরু করে এবং উপর্যুপরি কিলঘুষি মারতে থাকে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম হাবিবুর রহমান বাঁধা দিলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাঁর দিকেও তেড়ে আসে সলিমুল্লাহ। পরে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা সলিমুল্লাহ’র হাত থেকে ইউসুফ আনাসারীকে রক্ষা করেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী বলেন, সলিমুল্লাহ মাদ্রাসায় নানা ভাবে বেয়াদবী করছে। সে শনিবার দীর্ঘদিনের মুহতামিম কার্যালয়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে বৈদ্যুতিক পাকাসহ আসবাবপত্র নিয়ে যায়। এ নিয়ে আমি থানায় অভিযোগ করেছি। গতকাল সোমবার সকালে মাদ্রাসার দাতা পরিবারের সদস্য ইউসূফ আনসারীর সাথে কথা বলছিলাম। এ সময় হঠাৎ সলিমুল্লাহ মারমুখী হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে এসে ওই মুরব্বীর উপর হামলে পড়ে। সন্ত্রাসীস্টাইলে তার পাঞ্জাবী ধরে টানা হেঁচড়া করে মাটিতে ফেলে দেয়। বাঁধা দিলে সে আমাকেও অশ্রাব্য গালিগালাজ করে এবং আমার দিকে তেড়ে আসে। পরে, পুলিশ এসে তাকে শান্ত করে। তিনি আরো বলেন, যা ঘটেছে তা খুবই নিন্দনীয়। ক্ষমতার জন্য সলিমুল্লাহ’র এমন নিন্দনীয় কর্মকাণ্ডে আজ আমরা লজ্জিত, পুরো আলেম সমাজ প্রশ্নবিদ্ধ। হামলার কথা অস্বীকার করে মাওলানা সলিমুল্লাহ বলেন, আমি অন্যয়ভাবে কখনো কোন কিছুতে হস্তক্ষেপ করি না। নতুন মুহতামিমের কক্ষের জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা আসবাবপত্র এক রুম থেকে অন্য রুমে এনেছে। গত প্রায় ১মাস ধরে মাদ্রাসার নিরাপত্তার খাতিরে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ আছে। গতকাল সকালে দেখলাম মাদ্রাসার অফিস কক্ষের সামনে বহিরাগত ইউসূফ আনসারী বসে কথা বলছে। তার কাছে জানতে চেয়েছি, সে কেন আমার পিছু নিয়েছে, সংবাদ সম্মেলন করে কেন আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছে। তাকে সামনে পেয়েছি বলে জানতে চেয়েছি। এর বেশী আর কিছুই হয়নি। মাওলানা সলিমুল্লাহ’র শাস্তি দাবী করে ইউসুফ আনসারীর ছেলে হাসান চৌধুরী দিপু বলেন- প্রতিদিনের মতো বাবা মাদ্রাসায় গিয়ে হুজুরদের সাথে কথা বলছিলেন। এক পর্যায়ে মাওলানা সলিমুল্লাহ বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং মারধর করে। টেনে হেঁচড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। তিনি বুকে আঘাত পেয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি, থানায় অভিযোগ করেছি। প্রশাসনের নিকট এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। এ বিষয়ে ঘটনার সময় মাদ্রাসায় দায়িত্বরত থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল হোসেন বলেন, মাওলানা সলিমুল্লাহর সাথে এক ব্যক্তির বাকবিতন্ডা হয়েছিল। উপস্থিত পুলিশ তাদের নিভৃত করেছে। কাউকে টানা হেঁচড়া করতে আমি দেখিনি। কারণ ওই সময় আমি বাহিরে ছিলাম। এদিকে, এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে। মাওলানা সলিমুল্লাহ আলেম হয়ে বিনা উস্কানিতে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বীর গায়ে হাত তোলাটা ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয় আখ্যায়িত করেন সবাই। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। মাদ্রাসার চলমান সংকট দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান করা না হলে সামনে পরিস্থিতি আরো অবনতি হবে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।