চীনে করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট: দ্রুত সংক্রমণ, বিপজ্জনক উপসর্গ

চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আগের তুলনায় নতুন ও বিপজ্জনক উপসর্গ নিয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাষ্ট্র-পরিচালিত টিভিতে চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাসটির প্রথম দিককার ভ্যারিয়েন্ট বা প্রকরণের তুলনায় এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট উপসর্গগুলো অত্যধিক বিপজ্জনক ও ভিন্ন। সর্বপ্রথম ভারতে শনাক্ত হওয়া ভ্যারিয়েন্টটি আক্রান্ত ব্যক্তিদের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি অসুস্থ করে তুলছে। তাদের অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে। এ খবর দিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
চীনা চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চার-পঞ্চমাংশই জ্বরে ভোগেন। তবে প্রাথমিক ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের তুলনায় এর তীব্রটা কতটুকু তা জানা যায়নি। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে ও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এর মাত্রা হ্রাস পায়।
চীনে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে গুয়াংঝো শহরে। শহরটির সান ইয়াট-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুতর সেবা বিভাগের পরিচালক গুয়ান শিয়াংডং বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ১২ শতাংশ রোগী প্রথম উপসর্গ দেখা দেওয়ার তিন থেকে চার দিনের মধ্যে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পূর্বে, সাধারণত ২ থেকে ৩ শতাংশ এমনভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তো। অবশ্য মাঝে মাঝে গুরুতর অসুস্থদের হার ১০ শতাংশ অবধি হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বৃটেন ও ব্রাজিলের চিকিৎসকরাও দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ভ্যারিয়েন্টগুলোয় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে একই হারে অসুস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে সেগুলোর তীব্রতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন থাকা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে পাওয়া তথ্যগুলো এই ভ্যারিয়েন্টের ঝুঁকিগুলো তুলে ধরছে। গত মাসে ভ্যারিয়েন্টটিকে উদ্বেগজনক হিসেবে বর্ণনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভারতে ইতিমধ্যে এর প্রভাবে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এখন বৃটেনেও এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। জানিয়েছেন, অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটি অধিক সংক্রামক। এমনকি করোনা টিকার উভয় ডোজ পাননি এমন ব্যক্তিরাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এদিকে, চীনে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ দেশটিতে উৎপাদিত করোনা টিকার সক্ষমতার প্রতি বিশ্বের নজর টেনে এনেছে। চীনা টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কতজন নতুন ভ্যারিয়েন্টটিতে আক্রান্ত হয়েছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে সিচিলিস ও মঙ্গোলিয়ার মতো চীনা টিকা দেওয়া অন্যান্য দেশগুলোয় টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যেও সংক্রমণ বাড়ছে। যদিও তাদের মধ্যে গুরুতরভাবে অসুস্থ হওয়ার হার খুবই কম।
বিশ্বের অন্যান্য অংশ যখন বড় পরিসরে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন চীন স্থানীয়ভাবে সরঞ্জাম উৎপাদন করে বহুল পরিমাণে পরীক্ষা চালাচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা গুয়াংঝোর ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের শহরে এখন অবধি ৩ কোটি ২০ লাখ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ফোশান শহরে ১ কোটি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।
এছাড়া, গুয়াংঝোতে হাজারো মানুষকে আইসোলেট ও কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপে সংক্রমণের হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে তবে পুরোপুরি থামেনি। শুক্রবার এক ঘোষণায় চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশোন জানিএয়চেহ যে, গুয়াংঝোতে বৃহস্পতিবার নতুন নয়টি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী শেনঝেন শহরেও গত সপ্তাহে আলফা ভ্যারিয়েন্টের বেশকিছু সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্টটি সর্বপ্রথম বৃটেনে শনাক্ত হয়েছিল।