দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ জেলার নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

ঝড়ে মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতির পাশাপাশি বিদ্যুত্ বিচ্ছিন্ন থাকায় টাওয়ারগুলোর ব্যাটারি বা জেনারেটরের ব্যাকআপ বন্ধ হয়ে গেছে।

ফলে গতকাল সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও অনেকে খোঁজখবর নিতে পারেননি। দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুত্ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেকের মোবাইলের ব্যাটারিও চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

মোবাইল অপারেটররা বলছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে এক-তৃতীয়াংশ টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পুনঃসংযোগের চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন—এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এস এম ফরহাদ বলেন, ‘সাইক্লোন আম্ফান দেশের টেলিকম নেটওয়ার্ক অবকাঠামোয় অনেক ক্ষতি করেছে।

খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহীর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মোবাইল সাইট এই দানবীয় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে টেলিকম সেবা দারুণভাবে বিঘ্নিত হয় ঐ এলাকাগুলোতে।’

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত টাওয়ারের প্রায় ৩০ শতাংশ বা ১৩ হাজার সাইট জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুত্ পাচ্ছিল না। বর্তমানে দেশে মোবাইল কোম্পানিগুলোর টাওয়ারের সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার।’

ঘূর্ণিঝড়টি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে অনেক অঞ্চলে বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে অপারেটররা ব্যাটারির সাহায্যে মোবাইল টাওয়ার চালু রাখেন। ব্যাটারির ক্ষমতা শেষ হয়ে গেলে অপারেটররা জেনারেটরের সাহায্য নেন। এক পর্যায়ে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে বিদ্যুত্ সরবরাহ পুনরুদ্ধার করতে বিদ্যুত্ কর্তৃপক্ষ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এ ক্ষতিগ্রস্ত টাওয়ারগুলো বেশির ভাগ পল্লি অঞ্চলে, তাই প্রান্তিক অঞ্চলে সেবা পুনরুদ্ধারে বিদ্যুত্ সংযোগ জরুরি।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলবর্তী ও সংলগ্ন এলাকায় রবির প্রায় ২ হাজার ৫০০ সাইট সংযোগ বিছিন্ন রয়েছে। এগুলো পুনরায় চালু করতে টেকনোলজি টিম কাজ করছে। তবে জরুরি পরিষেবা হিসেবে উপকূলবর্তী এলাকায় মোবাইল সেবা চালু করার জন্য বিদ্যুত্ বিভাগ বিশেষ করে পল্লি বিদ্যুতের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনস মুহাম্মদ হাসান বলেছেন, ‘নেটওয়ার্ক চালু রাখতে গ্রামীণফোন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ফাইবার ও বৈদ্যুতিক সংযোগে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’

টেলিটকের এমডি সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে টেলিটকের ৫৩৪টি টাওয়ারের মধ্যে বিদ্যুত্ সংযোগ না থাকায় ৪০৯টি টাওয়ার বন্ধ রয়েছে। জেনারেটর ও ব্যাটারি দিয়ে সীমিত পরিসরে কিছু টাওয়ার চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সুন্দরবনের মধ্যে টেলিটকের যে চারটি টাওয়ার রয়েছে সেগুলো পুরোপুরি চালু আছে। ঐ টাওয়ারগুলো জেনারেটর দিয়ে পরিচালিত হয়।’

বাংলালিংকের হেড অফ করপোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সাস্টেনিবিলিটি আংকিত সুরেকা বলেন, ‘বিদ্যুত্ বিভ্রাটের কারণে সেবাতে বিঘ্ন ঘটছে। জেনারেটারের ব্যাকআপ সক্ষমতা সর্বোচ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। ফলে যত দ্রুত বিদ্যুত্ সংযোগ পাওয়া যাবে তত দ্রুত টাওয়ারগুলো চালু হবে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত বাংলালিংকের প্রায় ৩ হাজার টাওয়ারে বিদ্যুত্ সংযোগ ছিল না।’