চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের (সিজিপিওয়াই) কবরস্থান, মসজিদ, মাজার ও জলাভূমিতে সাইফ পাওয়ারটেককে আইন অমান্য করে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে জমি বরাদ্দের প্রতিবাদ এবং চুক্তি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রেলকর্মী ও এলাকাবাসী।
সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে হালিশহর সিজিপিওয়াই (পোর্ট কলোনি ১৩ নম্বর রোড) গেটে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী দল, পোর্ট কলোনি রেলওয়ে সমাজ কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের ব্যানারে রেলকর্মীদের সঙ্গে এলাকাবাসীও অংশ নেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রেলের পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে রাজস্ব আয়ের প্রধান মাধ্যম হলো সিজিপিওয়াই। এখানে চট্টগ্রাম বন্দরের সব কনটেইনারবাহী ট্রেন ও বিপিসির জ্বালানি তেল পণ্যবাহী ট্রেন ও ট্যাংকার ওয়াগনের মাধ্যমে সারাদেশে পরিচালিত হয়। বন্দর-হালিশহর সিজিপিওয়াই এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে সিআরবি-সহ বিভিন্ন দপ্তরের হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজের সুবাদে চট্টগ্রাম বন্দর উত্তর আবাসিক, হালিশহর ও আশেপাশের এলাকায় যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। এই এলাকাতেই রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি। শুধুমাত্র বন্দর উত্তর আবাসিক এলাকাতেই রয়েছে রেলওয়েতে কর্মরত প্রায় এক হাজার পরিবার। তাদের জন্য রয়েছে ছোট হাসপাতাল, রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ ও কবরস্থান।
তারা বলেন, ১৯৯৫ সালে সিজিপিওয়াইতে এক রেলওয়ে কর্মচারি মারা গেলে তাকে ‘বহিরাগত’ বলে চট্টগ্রাম বন্দর কবরস্থানে দাফন করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। তখন বাধ্য হয়ে রেলওয়ের কর্মচারীরা সিজিপিওয়াই মসজিদ এবং শতবর্ষী হযরত কুতুব বিল্লাহ শাহ মাজারের পাশে সিজিপিওয়াই কবরস্থান স্থাপন করেন। সে সময় দাফন করা জমিটি ছিল একটি জঙ্গল ও পরিত্যক্ত জলাভূমি। রেলওয়ে কর্মচারীরা ধীরে ধীরে এটি কবরস্থানে রূপান্তর করেন এবং আপনজনদের এখানে শায়িত করতে থাকেন। প্রায় ৪৫০ এর মতো কবর রয়েছে এখানে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- রেলওয়ের কিছু সুবিধাভোগী কর্মকর্তা গোপনে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে সাইফ পাওয়ার টেক নামক কোম্পানির কাছে মসজিদ ও কবরস্থানের জমিসহ রেলওয়ের জমি লিজ দিয়েছে।
তারা দাবি করেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম ভেঙ্গে সিজিপিওয়াই এলাকায় ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সাইফ পাওয়ারটেককে ২১ দশমিক ২৯ একর জমি লিজ দিয়েছে। রেলওয়ে কর্মচারীদের বিরোধিতা স্বত্ত্বেও সাইফ লজিস্টিকস এলায়েন্স এবং কনটেইনার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের মধ্যে এই চুক্তি সই হয়। লিজের জমিটিতে কবরস্থান, মসজিদ এবং মাজার আছে। মধ্যম হালিশহর মৌজায় ২১ দশমিক ২৯ একর জমির মধ্যে দশমিক ৬২৫০ একর জায়গায় কবরস্থান ও দশমিক ৩৪২৫ একর জায়গায় মসজিদ রয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারের ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭’ এর ১৩ ধারায় বলা আছে ‘সাধারণভাবে ধর্মীয় উপাসনালয়, কবরস্থান এবং শ্মশান হিসেবে ব্যবহৃত বনভূমি অধিগ্রহণ করা যাবে না’। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী, কোনো অবস্থাতেই কোনো স্থানের পুকুর, দীঘি ভরাট করা যাবে না। সিজিপিওয়াই গুডস ইয়ার্ড দিয়ে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ যেমন- ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, কেরোসিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মালামাল পরিবহণ হয়। এখানে যদি কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটে তাহলে পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই। মসজিদের যে পুকুরটি রয়েছে সেটিও অবৈধ লিজের আওতায় আনা হয়েছে। এসব বিষয়ে বার বার বলার পরও রেলওয়ে থেকে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।
গণমানুষের স্বার্থবিরোধী এ চুক্তি বাতিল না হলে ঈদের পর কঠোর কর্মসূচি পালনের হুশিয়ারি দেন তারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সিজিপিওয়াই এর চিফ ইয়ার্ড মাস্টার মো. আবদুল মালেক, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন সিজিপিওয়াই শাখার সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ রেলওয়ে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ও কর্মচারী দল জেটি শাখার সভাপতি মো. সাবের আহমেদ, বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগ জেটি শাখার সভাপতি মো. আজিদ উদ্দিন ও রেলওয়ে সমাজকল্যাণ পরিষদ বন্দর পোর্ট কলোনির সভাপতি মো. আমিন প্রমুখ।