রাউজানে সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলন: ২৭ মেট্রিক টন তেল উৎপাদনের সম্ভাবনা

শফিউল আলম, রাউজানঃ রাউজান উপজেলায় সূর্যমুখী চাষে বিপ্লব ঘটতে চলেছে। কৃষকের আগ্রহ আর কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বছর বছর বাড়ছে সূর্যমুখীর চাষ। এবার বাম্পার ফলন পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। উপজেলার অনেক মাঠ যেন হলুদগালিচা, সেখানে মৌমাছির গুঞ্জরণে মোহিত মানুষ। সূর্যমুখী ক্ষেত দেখতে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন, তারা ছবি তুলে ফেসবুকে দেন।

রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের জানিপাথর, বৃকবানুপুর, এয়াসিন নগর, উত্তর সর্তা, হ্চ্ছার ঘাট, গর্জনিয়া, ডাবুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ডাবুয়া, কেউকদাইর, পুর্ব ডাবুয়া, হাসান খীল, হিংগলা, কলমপতি, চিকদাইর ইউনিয়নের দক্ষিন সর্তা, পাঠান পাড়া, সন্দীপ পাড়া, রাউজান পৌরসভার পশ্চিম সুলতানপুর, সরতের দোকান, পুর্ব গহিরা, সুলতানপুর কাজী পাড়া, সুলতানপুর ছিটিয়া পাড়[, শরীফ পাড়া, হাজী পাড়া, ঢেউয়্ াপাড়া, পশ্চিম রাউজান, গহিরা ইউনিয়নের দলই নগর, কোতয়ালী ঘোনা, কাজী পাড়া. নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের ফতেহ নগর. নদীম পুর পশ্চিম ফতেহ নগর, বিনাজুরী ইউনিয়নের ইদিল পুর, পশ্চিম ইদিল পুর, পশ্চিম বিনাজুরী, লেলাঙ্গারা, জাম্বইন, রাউজান ইউরিয়নের রশিদর পাড়া, জয় নগর , কেউটিয়া, পুর্ব রাউজান, খলিলাবাদ, পশ্চিম রাউজান বড়ুয়া পাড়া, কদলপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কদলপুর, কালকাতর পাড়া, শমশের পাড়া, দক্ষিন শমমের পাড়া, ভোমর পাড়া, দক্ষিন জয়নগর, পাহাড়তলী ইউনিয়নের শাহেদুল্ল্রাহ কাজী পাড়া, উনসত্তর পাড়া, শেখ পাড়া মহামুনি, বহলপুর, বদু পাড়া, দেওয়ান পুর এলাকায় ফসলী জমিতে সুর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করেছে কৃষকরা ।

চলতি মৌসুমে রাউজানে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। ১শত ২০ জন কৃষক সুর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করেছে রাউজানে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রায় ২৭ মেট্রিক টন তৈল উৎপাদন হবে এবার। বাজারে প্রতি লিটার সূর্যমুখী তেল বিক্রি হয় ৪৫০ টাকায়। সে হিসাবে এবার উপজেলায় ১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকার তেল উৎপাদিত হবে। এতে কয়েক হাজার পরিবারে সচ্ছলতার সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে।‘সূর্যমুখী গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত পৌরসভার কাঁশখালী কূলে কথা হয় কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সূর্যমুখীর ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে সঠিকভাবে সার, ওষুধ ও কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছি। বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা থাকায় লাভ নিয়ে আমি চিন্তিত নই।’

চিকদাইর ইউনিয়নের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন কয়েকজন কৃষক। সূর্যমুখী ক্ষেতের অপরূপ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থী। তারা ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন। দর্শনার্থীদের ফসল নষ্ট না করার অনুরোধ জানাতে মাঠে থাকতে হয় আমাদের।’ হলদিয়া ইউনিয়নের কৃষক আলী আহম্মদ বলেন, ‘দিনদিন বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বাড়ছে। এই চাষাবাদে খরচ কম, লাভ বেশি। কৃষি অফিস সহযোগিতা ও প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করছে।’উপজেলার চিকদাইর, ডাবুয়া, সদর, বাগোয়ান ইউনিয়নের সূর্যমুখী ক্ষেতে কৃষকরা এখন পরিচর্যায় ব্যস্ত। ভালো ফলন ঘরে তোলার আশায় ক্ষেতের সর্বোচ্চ পরিচর্যা করছেন তারা। হলুদ রঙের ফুলের ঘ্রাণে ম-ম করছে সূর্যমুখী ক্ষেত। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন, ‘উপজেলায় এবার প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। প্রায় ২৭ মেট্রিক টন তেল পাওয়া আশা করছি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৬৪০ জন কৃষকের মধ্যে সরকারি প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ, সার ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় কমবেশি সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। বাজারে সূর্যমুখী তেলের দামও ভালো। প্রতি লিটার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তেল উৎপাদনের পাশাপাশি খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়, যা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় হয় কৃষকের।