টেকনাফ নাফ নদীতে ধরা পড়া ভোল মাছটি কেটে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি

কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদীর মোহনায় ধরা পড়া সেই ১৯৫ কেজি ওজনের ভোল মাছটি কেটে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। মাছটির পাখনা ও রক্ত চলে যাওয়ার ওজন কমপক্ষে ২৫ কেজি কম যায়। তারপরও মাছটি ১৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখায় খুশি মাছ বিক্রেতা জাফর আলম।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ৯টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার বাজারে মাছটি কেটে বিক্রি করা হয়। মাছটি মাত্র ২ ঘণ্টায় বিক্রি শেষ হয়ে যায়। অনেক ক্রেতা ইচ্ছা থাকার পরও মাছটি ক্রয় করতে পারেননি। তবে ঘটনাস্থলে মাছটি দেখার এবং ক্রয় করার জন্য উৎসুক জনতার ভিড় দেখা যায়।

সকালে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যান গাড়িতে করে মাছটি বাজারে আনা হয়। চার শ্রমিক মাছটি কেটে টুকরা টুকরা করেন। ক্রেতারা সাধ্যমত দুই, তিন, পাঁচ, দশ ও বিশ কেজি পর্যন্ত কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি বিক্রি করা হয়েছে এক হাজার ৭০০ টাকায়।

মাছ ক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এক হাজার ৭০০ টাকা দরে ১০ কেজি মাছ কিনেছি। দাম একটু বেশি হলেও পরিবারে ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও মাছ পাঠাব। তবে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মাইকিং করা হয়েছিল প্রতি কেজি এক হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি করা হবে। তারা ১০০ টাকা অতিরিক্ত নিয়েছে।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘মাছ না পেয়েও অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। তবে বিক্রেতা এক কেজি ও দুই কেজি ওজনের কাটা মাছ বিক্রি করেননি। মাইকিং করে দাম হাঁকানো হয়েছিল কেজি ১৬০০ টাকা, কিন্তু বিক্রি করা হয়েছে ১৭০০ টাকায়। বাজার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ভোক্তাদের জিম্মি করে এভাবে বিক্রি করা হয়েছে।’

মাছ বিক্রেতা জাফর আলম বলেন, ‘বিশাল বড় আকারের মাছটি কেটে বিক্রয় করতে গিয়ে তেমন লাভ হয়নি। পাখনা ও রক্ত চলে যাওয়ার ওজন কমপক্ষে ২৫ কেজি কম হয়েছে। ব্যবসার জন্য মাছটি কিনে কেটে বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। পরিবহনসহ নানা ধরনের খরচ বাদ দিয়ে সামান্য কিছু টাকা লাভ হতে পারে।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘ভোক্তাদের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হতো। তবে বিশাল একটি মাছ কেটে বিক্রি করেছে সেটা শুনেছি। এই মাছ কেনার জন্য প্রচুর লোকজনের সমাগম হয়েছে।’

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদীর গোলারচর এলাকায় এ মাছ ধরা পড়েছে। শাহপরীর দ্বীপ কোনারপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা ফয়েজ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ কালু ফকিরের মালিকানাধীন টানা জালে ভোল মাছটি ধরা পড়েছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়া মৎস্যঘাটে এনে মাছটির দাম হাঁকানো হয়েছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা। পরে টেকনাফ জালিয়াপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী জাফর আলম দুই লাখ ৬০ হাজার টাকায় মাছটি কিনে নেন। পরে তিনি মাছটি টেকনাফে কেটে বিক্রি করেছেন।’

টেকনাফ উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপের এক জেলের টানা জালে একটি বিশাল ভোল মাছ ধরা পড়ার খবর শুনেছি। শীত মৌসুমে ৫ থেকে ১৫ কেজি ওজন পর্যন্ত ভোল মাছ জেলেদের জালে আটকা পড়ে। এই মাছ সাধারণত ৪০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাগরে মাছ ধরার ওপর বিভিন্ন ধরনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে পালন হওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। জেলেরাও ভালো দাম পাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় ভাষায় এটিকে ভোল মাছ বলা হলেও এর বৈজ্ঞানিক নাম রেইয়ামেস বলেই (raiamas-bola)। বিরল প্রজাতির এ মাছটি সব সময় পাওয়া যায় না।’