সতর্কতার সঙ্গে ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিলের ঘোষণা যুক্তরাজ্যে

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশজুড়ে বাসিন্দাদের ঘরে থাকার যে নির্দেশনা ব্রিটিশ সরকার দিয়েছিল তা শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। আজ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি কিছু মানুষকে তাদের কর্মস্থলে যোগ দেওয়ারও অনুমতি দিয়েছেন। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ান।

বরিস জনসন ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ রয়েছে এমন মানুষদের ঘরে থাকতে বলেছেন। যাদের ঘরে বসে কাজ সম্ভব হচ্ছে না তারা সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত বিধি মেনে কর্মস্থলে যাবেন। তবে গণপরিবহন ব্যবহার করা যাবে না। বুধবার থেকে মানুষকে আরও বেশি বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

সতর্কতার সঙ্গে ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিলের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তারই অংশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জুন থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা স্কুলে যাওয়ার অনুমতি পাবে। এছাড়া একই সময় থেকে আংশিকভাবে দোকান ও নার্সারিও পুনরায় চালুর অনুমতি দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘আগামী বুধবার থেকে আমরা মানুষকে আরও বেশি করে বাড়ির বাইরে বের হতে দিতে চাই, এমনকি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। স্থানীয় পার্কসহ আপনি এখন অন্যত্র যেতে পারবেন। খেলাধুলাও করতে পারবেন, তবে তা পরিবারের লোকজনের সঙ্গে।’

তবে নিকট ভবিষ্যতে লকডাউন প্রত্যাহার হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেছেন, মানুষকে দিনের বেশিরভাগ সময় ঘরেই থাকতে হবে। বাড়ির বাইরে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে দেখা করতে পারবে। তাদের সঙ্গে বসে গল্পও করতে পারবে, তবে একে অপরের মধ্যে থাকতে হবে দুই মিটারের দূরত্ব।

জনসন আরও বলেন, ‘পারলে ঘরে বসেই কাজ করুন, কিন্তু যদি না পারেন তাহলে আপনাকে কাজে যেতে হবে। আর এক্ষেত্রে গণপরিবহন থাকবে না ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কর্মস্থলে যেতে হবে। তবে হেঁটে কিংবা সাইকেলে করে এই যাতায়াত করতে পারলে তা আরও ভালো হবে।’

করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে জনগণকে সর্তক করতে ‘অ্যালার্ট’ পদ্ধতি চালুর ঘোষণাও দিয়েছেন জনসন। করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত উপাত্তের ভিত্তিতে নতুন অ্যালার্ট বা সতর্কতা পদ্ধতিতে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত মাত্রা নির্ধারণ করা থাকবে। আর এখানে ঝুঁকি কোন পর্যায়ে আছে, তা জনগণকে জানানো হবে।

নতুন পদ্ধতি অনুসারে, সতর্কসংকেতটি অবস্থাভেদে ধাপ–১ থেকে ধাপ–৫ পর্যন্ত যাবে। ধাপ–১ থাকবে সবুজ রঙের। ধাপ–৫ থাকবে লাল রঙের। রঙের পার্থক্য অনুসারে জনগণকে ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে। জনসন বলেছেন, যুক্তরাজ্য বর্তমানে ৩ নম্বর ধাপে রয়েছে।

প্রাদুর্ভাব শুরুর পর যুক্তরাজ্যে গত ২৩ মার্চ থেকে লকডাউন কার্যকর হয়। জনসনের এই ভাষণের আগে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ কমিটি কোবরা (কেবিনেট অফিস ব্রিফিং রুম) জরুরি কমিটির বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ, উন্নয়ন সংস্থা এবং মেয়র অব লন্ডনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে ৩১ হাজার ৯৩০ জন মারা গেছে। যা মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ হাজারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গত মঙ্গলবার মৃত্যুতে ইতালিকে টপকে যায় যুক্তরাজ্য।