চট্টগ্রামে ‘বিদ্রোহী নজরুল মঞ্চ’ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

“নজরুলের সাহিত্য ও মননচর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়”
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধুমাত্র বিদ্রোহের কবি নন, তিনি প্রেম, মানবতা, সাম্য ও স্বাধীনতার কবি। তাঁর সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং মননচর্চা ছাড়া সমাজ ও দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। এই উপলব্ধি থেকেই চট্টগ্রামে গঠিত হলো “চট্টগ্রাম বিদ্রোহী নজরুল মঞ্চ”। সংগঠনটি নজরুল গবেষণা, সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রসার এবং আগামী প্রজন্মের কাছে নজরুলের আদর্শ তুলে ধরতে কাজ করবে।

গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় বঙ্গবন্ধু ভবনে এক আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে সংগঠনের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী ও চট্টগ্রাম নজরুল একাডেমির সাবেক সভাপতি ফরিদা করিম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন লেখক, সাংবাদিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক মোঃ কামাল উদ্দিন। সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ও নেতৃত্ব আলোচনার শেষে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে “চট্টগ্রাম বিদ্রোহী নজরুল মঞ্চ” নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন ফরিদা করিম এবং সাধারণ সম্পাদক হন মোঃ কামাল উদ্দিন।

এছাড়া ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়, যারা সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সভায় বক্তারা যা বললেন সভায় বক্তারা বলেন, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম শুধু সাহিত্যিক নন, তিনি ছিলেন শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। তাঁর কবিতা, গান, প্রবন্ধ ও উপন্যাস বাঙালি জাতির চেতনা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নজরুল শুধুমাত্র বিদ্রোহী কবি নন, তিনি প্রেমের, মানবতার ও ধর্মীয় সম্প্রীতিরও কবি। বক্তারা আরও বলেন, নজরুলের সাহিত্য ও মননচর্চা ছাড়া সমাজের প্রকৃত বিকাশ সম্ভব নয়। তাঁর আদর্শকে ধারণ করে সমাজে শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কবির জীবন, সাহিত্য ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এ সংগঠন কাজ করবে। আলোচনায় অংশ নেন: কাজী মুহাম্মদ সুজাউদ্দিন আহমেদ, কাজী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ড. শিব প্রসাদ শূর, কবি সঞ্জয় কুমার দাশ, মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন সোহেল, ফারুক জাহাঙ্গীর, সাংবাদিক আশিফ ইকবাল, এস এম নুরন নবী জনি, রোখন উদ্দিন আহমেদ, দিল আফরোজ নবী, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আলম উজ্জ্বল, এ কে এম ওসমান গনি, নুরুজ্জামান চৌধুরী, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সংগঠনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা সংগঠনটি “বিদ্রোহী কবি” নজরুলের সাহিত্য ও মননচর্চার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, আলোচনা সভা, গবেষণা কার্যক্রম ও সাহিত্যচর্চার আয়োজন করবে। কবি নজরুলের সৃজনশীল কর্মকে ছড়িয়ে দিতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার, সাহিত্য প্রতিযোগিতা ও নজরুল সংগীত কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে। জাতীয় কবি ঘোষণার জন্য কৃতজ্ঞতা সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণার গেজেট প্রকাশ করায় বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। এটি নজরুল প্রেমীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপূর্ণ স্বীকৃতি বলেও বক্তারা মত প্রকাশ করেন। সংগঠনের অঙ্গীকার নজরুলের সাহিত্য ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া। নজরুল গবেষণার জন্য উদ্যোগ নেওয়া নজরুল সংগীত, কবিতা ও নাটকের প্রচার ও প্রসার ঘটানো নিয়মিত সাহিত্য আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গবেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা। নজরুল-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিবস পালন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, “আমরা নজরুলকে শুধু স্মরণ করতে চাই না, আমরা তাঁর আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে চাই। নজরুলের শিক্ষা আমাদের সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা যোগায়। আমরা নতুন প্রজন্মকে নজরুলের দর্শন ও চেতনায় উজ্জীবিত করতে চাই।” সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে নজরুল গবেষণা ও সাহিত্যচর্চার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপস্থিত নজরুলপ্রেমীরা।