ঈদগাঁওয়ে দু’শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রশি টানাটানিতে জীবন মৃত্যুর ঝুঁকিতে শিক্ষার্থী!

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও: কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ধর্মের ছড়া নূরানী আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের ৪ শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী চরম জীবন মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের জীবন ঝুঁকিমুক্ত করতে এবং শ্রেণিকক্ষে স্বাভাবিক পড়ালেখার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ কেটে ফেলেছে বেশকটি বড় বড় গাছ। আর এতে বাঁধা দিয়েছে পার্শ্ববর্তী দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চলছে রশি টানাটানি।

আদর্শ নূরানী শিক্ষা নিকেতন কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের ক্রয়কৃত জমির উপর নির্মিত। এর ভবনের উপর রয়েছে অনেক বড় বড় গাছ। যেগুলো হালকা বাতাসেও প্রতিষ্ঠানের চালের উপর ভেঙ্গে পড়ে। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জীবন ছিল চরম ঝুঁকিতে। বিষয়টি বিবেচনা করে বন্ধ থাকাকালীন স্থানীয় বনবিভাগকে অবহিত করে গাছগুলি কেটে ফেলে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ।

এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির কজন সদস্য জানান, গাছগুলো এত বড় ছিল যে, সেগুলোর শাখা, প্রশাখাও বড় বড় গাছের ন্যায়। বিভিন্ন ঝড়, তুফানে উক্ত গাছ থেকে ডালপালা ভেঙ্গে প্রতিষ্ঠানের টিনের ঘরের ক্ষতিসহ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। যারকারনে ক্লাসে পাঠ দান করা অসম্ভব হয়ে উঠে।

পরিচালনা কমিটির সদস্যরা আরো জানান, কালবৈশাখী ঝড় এবং বর্ষাকালে হালকা বাতাস প্রবাহিত হলে গাছের বড় বড় শাখা- প্রশাখা পড়ে প্রতিষ্ঠানটির ভবন ভেঙ্গে সরাসরি ক্লাসরুমে চলে আসে। তাই বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ছাত্র-ছাত্রীরা ছুটিতে থাকায় তারা প্রতিষ্ঠানের চালের উপরে থাকা গাছগুলো অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি পরিচালনা কমিটির সদস্যরা লিখিতভাবে ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অবহিত করেন।

নূরানী আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের প্রধান নজির আহমদ জানান, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ ২১ বছর যাবত সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে কর্মরত ৮ জন শিক্ষক প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থীকে আধুনিক ও দ্বীনি শিক্ষা প্রদান করে আসছেন।

পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের মাস্টার জানান, প্রতিষ্ঠানের জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা চলমান রয়েছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ কোন বৈঠকে অংশ নেয় না। তারা নানা তালবাহানা করে সময় ক্ষেপণ করছে। সর্বশেষ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অছিয়র রহমানের নেতৃত্বে একটি কমিটি হয় উভয় পক্ষের সদস্যদের নিয়ে। তার আহ্বানেও প্রতিপক্ষরা কোনরূপ সাড়া দেয়নি। সমস্যাটি তারাই জিইয়ে রেখেছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ জিল্লুর রহমান ১৮/০৬/২৩ ইংরেজি এক লিখিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, বিরোধীয় বি, এস ১৬৪৪ নং দাগের আংশিক জমিতে নূরানী আদর্শ শিক্ষা নিকেতন নামক প্রতিষ্ঠানটি স্থিত আছে এবং বিরোধীয় আংশিক জমিতে কবরস্থানও রয়েছে। বিরোধীয় জমিটি নূরানী আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের দখলে রয়েছে। বিগত ২২-১২- ২৪ ইংরেজি তারিখে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী সার্বিক পর্যালোচনায় প্রতিপক্ষের দায়েরকৃত এম, আর মামলা নম্বর- ৫৮৭/ ২০২৩ খারিজ করে দেন।

ইসলামপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার কর্মরত শিক্ষকরা বলেছেন, তাদের মাদ্রাসাটি ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কর্তনকৃত গাছগুলি তাদের রোপন করা। আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হলেও তারা জোরপূর্বক পুরনো এ গাছগুলো কেটে ফেলেছে।

এতে তাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মরত কজন কর্মরত শিক্ষক ওই গাছগুলো তাদের নিজ হাতে রোপন করেছেন বলে দাবী করেন।