পিঠে-পুলি, উৎসব, পালা-পার্বণ এর মাস পৌষ এলো

    মির্জা ইমতিয়াজ শাওন, প্রিয় চট্টগ্রাম: “পউষ এলো গো!/ পউষ এলো অশ্রু—পাথার হিম পারাবার পারায়ে/ ঐ যে এলো গো—কুজঝটিকার ঘোম্‌টা—পরা দিগন্ত—রে দাঁড়ায়ে।।/ সে এলো আর পাতায় পাতায় হায়/ বিদায়—ব্যথা যায় গো কেঁদে যায়,/অস্ত—বধূ (আ—হা) মলিন চোখে চায়/পথ—চাওয়া দীপ সন্ধ্যা—তারায় হারায়ে।। ”
    আজ ১ পৌষ শীত ঋতুর প্রথম দিন। পৌষকে বলা হয় শীতের মাস। পৌষে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দুতে সূর্যের হাসি প্রকৃতির নিয়মিত ছবি হয়ে থাকে। পৌষ আর মাঘ মাস শীতকাল। পৌষের শুরু থেকেই কুয়াশার হালকা স্তর গভীর ও ধূমায়িত হয়ে আচ্ছন্ন করে তোলে দিক চক্রবাল। রাতভর ঝরে শিশির, ভিজে ওঠে ঘাস, লতাপাতা, ঘরবাড়ির টিনের ছাউনি। ঘাসের ডগায়, পাতার কিনারে জমে থাকা শিশির বিন্দুতে ভোরের সোনালি রোদের স্পর্শ ছড়িয়ে দেয় বড়ই মনোহর দ্যুতি। বহুকাল থেকে মুক্তোদানা বা হীরার কুচির সাথে লোকে তার শোভার তুলনা করে আসছে। শীতের এই রোদ কতই না আদরণীয়। ‘মিঠে রোদ’, ‘সোনা রোদ’ ভালবেসে দেয়া এমন সব তার নাম।
    পঞ্জিকার হিসেবে, আজ শীতের শুরু হলেও গত কয়েকদিন ধরেই হিমেল হাওয়ার ঝাপটা ও ঘন কুয়াশা জানান দিচ্ছিল শীতের আগমনী বার্তা। তারও আগে থেকে প্রবল শীত থেকে জীবন বাঁচাতে অতিথি পাখিরা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। বাংলা সাহিত্যে শীত নিয়ে নানা বন্দনা রয়েছে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আম্লকির এই ডালে ডালে, পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে আয় আয় আয়’।
    শীতকালে ফোটে বহু বাহারি ফুল। শীতের বিবর্ণ পরিবেশে এসব ফুল বর্ণিল রঙ ছড়িয়ে মানুষের কাছ থেকে বিশেষ সমাদর আদায় করে নেয়। এ সময় মাঠের পর মাঠ ভরা শিম, কপি, গাজর, টমেটো, মটরশুঁটি, বরবটি, বেগুন, টমেটো প্রভৃতির আবাদ। সরিষার কথা বলতে হবে আলাদা করেই। এছাড়া পিঠাপুলি, অতিথি আপ্যায়ন ও যাত্রাপালায় গ্রামীণ জনপদে নির্ভার আনন্দের তরঙ্গ বয়ে যায়। আমাদের দেশে তুষার না পড়লেও শীতের শুষ্ক রুক্ষতা দেখার মতো। গাছে গাছে মলিন ও বিবর্ণ হয়ে আসে পাতা, ফেটে ঝরে পড়ে বাকল। এ রুক্ষ প্রকৃতিই আবার ফুটিয়ে তোলে রক্তলাল গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, মল্লিকাদের। পৌষের প্রথম দিনে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে দেশের উত্তরাঞ্চল।