সাম্প্রতিক ডিম ও মুরগীর উর্ধ্বগতির দাম ঠেকাতে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সোনালি ও ব্রয়লার মুরগি এবং ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। আর দাম বাজারের চেয়ে বেশি নির্ধারন করে দিয়ে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করার সুযোগ করে দেয়া, দাম নির্ধারনের প্রক্রিয়া ও কার্যকারিতা কতটা ফলপ্রসু তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন দেশের ক্রেতা ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি।
আজ বুধবার (১৮ই সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন সরকারি দফতরের এধরনের খামখেয়ালীপনায় বাজার আরও অস্তির হতে পারে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের প্রেসিডেন্ট জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা প্রেসিডিন্ট আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান প্রমুখ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ৫ই আগষ্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যত্থানের পর সপ্তাহ খানেক দাম কিছুটা সহনীয় থাকলেও নিত্যপণ্যের বাজারে সবগুলোর নিত্যপণ্যের দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী। মুরগির দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও ডিমের দাম ডজন ১৫০ টাকার নিচে নামেনি। ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে আমদানিও অব্যাহত রেখেছে সরকার; তারপরও বাজারে সুফল আসেনি।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা ঠেকাতে ক্যাব থেকে বারংবার প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হস্তক্ষেপ দাবি করে আসছিলাম। এ পরিস্থিতিতে ১৫ সেপ্টেম্বর’২৪ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ রেয়াজুল হক ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করার কথা জানান। ক্যাব থেকে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হলেও এই প্রক্রিয়ায় কৃষি বিপণন অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এবং পোল্ট্র্রি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সমন্বয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে ভোক্তা প্রতিনিধি না থাকায় হতাশ। তাহলে কি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষনে এই গ্রুপ গঠিত হয়েছে?
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ইতিপুর্বে কৃষি বিপণন অধিদফতর বেশ কয়েকবার কৃষি পণ্যের দামের সাথে মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারন করে দিলেও অনেকগুলি পণ্যের দাম নির্ধারিত দামের চেয়ে কম ছিলো। আবার বেঁধে দেয়া দামে কোন পণ্য বাজারে পাওয়া যায় নি। অন্যদিকে দাম বাজারের চেয়ে বেশি নির্ধারন করে দিয়ে ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ আমরা প্রতিনিয়তই দেখে আসছি, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর খবরটি জানেন দাম কমলে তখন ভিন্ন সুর।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা বারবার বলে আসছেন, বাজারে চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হবে। অসাধু মজুতদারীদের সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে দাম বেঁধে দিয়ে কখনোই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আর বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি দাম নির্ধারণ করে দিলে অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিবে। আর প্রাণিসম্পদ ও কৃষি বিপনন অধিদফতরসহ সংস্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষকে শুধুমাত্র দাম নির্ধারন করে দিয়ে বাজার তদারকি না করে বসে থাকলে বাজার আরও অস্থির হয়ে ওঠবে এবং করপোরেট গ্রুপগুলো এ সুযোগে আবারও আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠবে পারে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সরকারের দফতরগুলো বড় বড় করপোরেট গ্রুপগুলোকে সুযোগ করে দেয়ার কারণে সরকারের উদ্যোগ গুলোর সুফল প্রান্তিক পর্যায়ে পাওয়া যায় না। দাম নির্ধারন বা যে কোন সংকট হলেই শুধুমাত্র এখাতের বড় করপোরেট গ্রæপগুলোকেই ডাকা হয়। আর প্রান্তিক, ছোট ব্যবসায়ী ও খামারিদের ডাকা হয় না। দাম নির্ধারণ বা যে কোন সংকট সমাধানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, প্রান্তিক খামারি, ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও সংস্লিষ্ঠ সকল পক্ষকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সরকারি দফতরগুলো দাম নির্ধারণের সময় বাজার থেকে পর্যাপ্ত তথ্য না নিয়ে কোন বিশেষ গোষ্ঠির সরবরাহকৃত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষন ও যাচাই বাছাই ছাড়াই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। সরকার পরিবর্তন হলেও বিগত সরকারগুলো আমলের দাম নির্ধারণের প্রচলিত পদ্ধতিটা অনুসরন করেই সিদ্ধান্ত নেবার কারনে কোন সুফল আসছে না। আর শুধুমাত্র বাজারে দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, বাজারে সংস্লিষ্ঠ রেগুলেটরী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত বাজার তদারকি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রয়োজনে বাজার তদারকির পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমিয়ে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ বাড়াতে উদ্যাগী হতে হবে।