বিদেশ থেকে আনা এমপির বিলাসবহুল গাড়ি উঠছে নিলামে!

বিদেশ থেকে আনা ৩৯৯টি গাড়ি আমদানিকারক ছাড় না করায় শেষ পর্যন্ত নিলামে বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে হস্তান্তর করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে এমপি কোটায় আনা ২১ কোটি টাকা মূল্যের দুটি গাড়িও রয়েছে। তবে প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় মূল্যবান এসব গাড়ি স্ক্র্যাপ হওয়া থেকে বাঁচাতে নিলাম প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান ব্যবসায়ীদের।

প্রথম পর্যায়ে আগামী বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ১৬ কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের একটি মার্সিডিজ বেঞ্চ এবং ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা মূল্যের একটি ল্যান্ড ক্রুজার নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এর মধ্যে ল্যান্ড ক্রুজারটি কুমিল্লা-৭ আসনের সাবেক সংসদ আলী আশরাফের। ১৬ কোটি টাকা মূল্যের গাড়িটির আমদানিকারক হিসেবে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হলেও এটি এমপি সুবিধায় আনা হয়েছিলো বলে জানা যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানির পর ইয়ার্ডে রাখার নির্ধারিত সময়সীমা ৩০ দিনের বেশি অতিবাহিত হওয়ায় নিলামে বিক্রির জন্য এমপির দুটিসহ ৩৯৯টি গাড়ি কাস্টমসের কাছে বাইপেপার হস্তান্তর করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সাধারণ মানের মাইক্রোবাস কিংবা প্রাইভেটকার যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মার্সিডিজ বেঞ্জ, ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভার এবং বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের দামি গাড়িও। দীর্ঘদিন ধরে এসব গাড়ি বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রাখায় দ্রুত নিলামে বিক্রির তাগদা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরে যেসব গাড়ি আসে এগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অথাৎ ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারক ডেলিভারি না নিলে নিয়ম অনুযায়ী সেগুলো আমরা কাস্টমসের কাছে বাইপেপার হস্তান্তার করি। এরকম বিভিন্ন মাধমে আসা ৩৯৯টি গাড়ি আমাদের শেডে আছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় গাড়িগুলো রাখা হয়েছে। আমরা চাই জরুরি ভিত্তিতে গাড়িগুলো নেয়া হোক। আমাদের জায়গাটা খালি করা হোক।’

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপ কমিশনার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষ যে গাড়িগুলো নিলামের নির্দেশ দিয়েছে সেগুলো সিডিউলভুক্ত হয়ে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যে কেউ সিডিউল জমা দিতে পারবেন ই-টেন্ডারের মাধ্যমে। প্রথম পর্যায়ে ১৬ কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ এবং ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা মূল্যের একটি ল্যান্ড ক্রুজার নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।’

তিনি আরও বলেন, ল্যান্ড ক্রুজারটি ২০২২ সালে একজন সংসদ সদস্য আমদানি করেছিলেন। মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িটি জেসিট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকার গুলশানের কার আমদানিকারণের নামে আসে। গাড়িটি কুমিল্লা-৭ আসনের সাবেক সংসদের নামে আসে বলে জানান তিনি।

এ দিকে কঠোর নিয়ম এবং দীর্ঘসূত্রিতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে থাকা মূল্যবান বেশকিছু গাড়ি বার বার নিলাম ডেকেও বিক্রি করা যায়নি। নিলামের জন্য এনে রাখা অন্যান্য দামি গাড়ির সঙ্গে সাবেক সংসদ উপনেতা ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নামে আমদানি করা গাড়িও দেখা গেছে বন্দরের কারশেডে। বিক্রি না হওয়া অন্তত ৮০টি গাড়ি সম্প্রতি কেটে টুকরো করে স্ক্র্যাপ করা হয়েছিলো। এ ধরনের দামি গাড়ির ক্ষেত্রে স্ক্র্যাপের মতো অপচয় প্রতিরোধে নিলাম প্রক্রিয়া সহজীকরণের কথা জানান শিল্প মালিকরা।

পিএইচপি অটোমোবাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আকতার পারভেজ বলেন, ‘আগে টেন্ডার প্রসেসে একটা জিনিস দেখা গেছে যে, গাড়ি টেন্ডারে যারা ওপরে থাকবেন, তারা সেটা পাবেন। কিন্তু পাওয়ার পরে যে প্রক্রিয়া থাকবে সেগুলো তাকে দেখতে হবে। তবে এটা পুরো একটা প্যাকেজ হওয়া দরকার। যেমন আমি টেন্ডার জিতবো এবং গাড়ি পাওয়ার পর সেটা চালানো বা বিক্রিও করতে পারি। এ রকম একটা প্রক্রিয়ায় আসতে হবে। আর আমি টেন্ডার জিতলাম, পরে বিক্রি করতে পারলাম না বা নিজে চালাতে পারলাম না, তাহলে তো এটার কোনো ভ্যালু থাকলো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই যে ৩৯৯টি গাড়ি নতুনভাবে নিলাম করা হচ্ছে। নিলাম করে এই গাড়িগুলো বাজারে অথবা পোর্ট থেকে বের করে দেয়া হয়; তাহলে অনুরোধ থাকবে এর নিয়মটা সহজ করার। কারণ আগে দেখেছি অনেকবার অনেক গাড়ি নিলাম হয়েছে, তবে পরবর্তীতে কড়া নিয়মের কারণে টেন্ডার জিতেও গাড়ি নিতে অক্ষম হন মালিক। রুলসগুলো শিথিল করা না হলে নিলামের পর নিলাম হবে, তবে মানুষ সেটা নিতে পারবে না।’

বিশ্ববাজারে অভিজাত ব্র্যান্ডের এসব গাড়ির দাম এক থেকে দুই কোটি টাকা হলেও আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশে ৮১০ শতাংশ শুল্ক আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে এমপি কোটায় আনা গাড়িগুলোর শুল্ক মওকুফের বিধান রয়েছে।