আজ নাগরিক কবি শহীদ কাদরীর প্রয়াণ দিবস

‘রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো?/পররাষ্ট্রনীতির বদলে প্রেম, মন্ত্রীর বদলে কবি/মাইক্রোফোনের বদলে বিহ্বল বকুলের ঘ্রাণ?’ কবি শহীদ কাদরীর ‘রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন’ কবিতার কয়েকটি লাইন। কী সাংঘাতিক প্রস্তাব! কোনো নাগরিক কবির রাষ্ট্রের কাছে এই প্রস্তাব কেন? হয়তো কবির কাছে পররাষ্ট্রনীতির চেয়ে মানবিকতা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। একজন তথাকথিত মন্ত্রীর চেয়ে কবির গুরুত্ব বেশি। কবির কাছে মাইক্রোফোনের মিথ্যা কথামালার চেয়ে বকুলের ঘ্রাণ বেশি প্রতিশ্রুতিময়।

পাঠককে ভাবনা ও বোধের গভীরে নিয়ে যাওয়া বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরীর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা কবি ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট নিউইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন কবি শহীদ কাদরী। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার কবিতা প্রথম ছাপা হয় কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত একটি সংকলনে। কলকাতায় জন্ম হলেও দেশভাগের পরপরই ঢাকায় চলে আসেন শহীদ কাদরী। প্রায় তিন দশক এ শহরে অবস্থানের পর নাগরিক এই কবি পাড়ি জমান বিদেশে। বার্লিন, লন্ডন, বোস্টন ঘুরে থিতু হন নিউইয়র্কে।

শহীদ কাদরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তরাধিকার’ প্রকাশ পায় ১৯৬৭ সালে। এটি প্রকাশের মধ্যদিয়েই তিনি আধুনিক কবিতায় নিজস্ব অবস্থান সৃষ্টি করেন। এরপর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘তামাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকাশ পায় ‘ প্রেম বিরহ ভালোবাসার কবিতা ’, ‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ এবং প্রবাসে লেখা কবিতা নিয়ে প্রকাশ পায় ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দিও।’

শহীদ কাদরীর প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা চারটি এবং এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত কবিতার সংখ্যা ১২২টি। পরবর্তীতে তিনি আরও চারটি কবিতা লিখেন যার তিনটি ছাপা হয় কালি ও কলম সাহত্যি পত্রিকায় আর একটি প্রথম আলো ঈদ সংখ্যায়। সব মিলিয়ে তার কবিতা সংখ্যা ১২৬টি।কাব্যসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য শহীদ কাদরী ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০১১ সালে তাকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক প্রদান করা হয়।