মুখরিত মহামুনি বৌদ্ধ মন্দির

 শফিউল আলম, রাউজান ঃচট্টগ্রামে রাউজানে প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মুহামুনিতে বৈশাখী মেলা প্রতি বৎসরের মতো চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের মহামুনি মন্দিরে বাংলার প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী মহামুনি মেলায় হাজার হাজার মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে। নতুন বর্ষ কে বরণ করে ও পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে আদিবাসীরা রাউজানে প্রাচীন ঐতিহাসিক মহামুনি বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গনে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করে এই মেলা এবং তাদের উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি। ১৩ এপ্রিল শনিবার থেকে মহামুনি মেলা শুরু হয়। ১৪ এপ্রিল রবিবার মহামুনি মেলায় তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জীপ,কার, হাইস, বাস, পিকআপ সিএনজি অটোরিক্সা করে হাজার হাজার উপজাতীয় সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ কিশোর কিশোরী দল বেধে মহামুনি মেলায় আসতে দেখা যায় । পুরাতন বৎসরকে বিদায় নতুন বৎসরকে স্বাগত জানিয়ে মহামুনি মেলায় ধর্মীয় অনুষ্টান ও সাস্কৃতিক অনুষ্টানের আয়োজন করেন মেলা উদযাপন কমিটি । প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এ মেলা প্রতি বছর চৈত্র্য সংক্রান্তির শেষ দিন থেকে শুরু করে তিনদিনব্যাপী চলতে থাকে। ঐতিহাসিক এ মেলা চট্টগ্রাম জেলার এবং পার্বত্য আদিবাসী এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক মিলনমেলায় পরিনিত হয়। রাউজানে মহামুনি মেলাকে ঘিরে প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড় জমে থাকে। এই মেলার প্রধান আর্কষণ হলো পানি খেলা। পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী মেয়েরা বিভিন্ন রকম রং পানি একে অন্যের দিকে ছুড়ে মারে। বর্ষবরণ উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে আলেচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটকসহ গ্রামের মেয়েদের নৃত্যানুষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও ব্যাপক আয়োজন করতো।কিন্তু এবার এ মেলা বন্ধ রাখার কারণে স্থানটি তে তেমন কোনো আয়োজন নেই। চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানাধীন পাহাড়তলী ইউনিয়নের পাহাড়তলী গ্রামের ঠিক মধ্যস্থলে একটি অনুচ্চ টিলার উপর বিহারটি অবস্থিত। এ বিহারটি প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে মতবিরোধ আছে।কারও ধারণা, ১৮১৩ সালে পুণ্যাত্মা ভিক্ষু চাইংগা ঠাকুর স্বগ্রামবাসীর সামগ্রিক সহায়তায় এ বিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু ড.রামচন্দ্র বড়ুয়ার মতে, মহামুনি মূর্তি ও মন্দির ১৮০৫ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছে “ ১২৬৭ মগাব্দের ১০০ বছর পূর্বে (১৮০৫ খ্রিঃ) মহামুনি মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে”( চট্টগ্রামের মগের ইতিহাস প্রাগুক্ত, পৃ, ১৬।) এমনতাবস্থায় নিঃসন্দেহে বলা যায় উনবিংশ শতকের প্রথম দুদশকের মধ্যেই এ বিহার ও মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে ১৮৪৩ সালে মং সার্কেল রাজা চৈত্র্যের শেষ তারিখে মেলার আয়োজন করেন। পরবর্তী সময়ে মেলাটি মহামুনি মেলা নামে পরিচিত লাভ করে। চৈত্র্য সংক্রান্তির দিন তিন পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পুণ্যার্থীরা সারাদিন অবস্থান শেষে সন্ধ্যায় বুদ্ধের পুণ্য লাভের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় নতুন বছরকে। একই সাথে তারা সেখানে রাত্রি যাপন করেন। মেলায় মন্দিরের বাইরে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর দোকান, হাতপাথা সহ খেলনার দোকান ও খাবারের দোকানের স্টল বসেছে । দোকান গুলোতে নারী পুরুষ কিশোর কিশোরি সহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন কেনাকাটা করতে ভীড় করছে । মেলায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সাস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পিরা গান, নৃত্য পরিবেশন করছেন । মন্দিরের উপরে বৌদ্ব ধর্মীয় অনুসারীরা মহামুনি বৌদ্ব মুর্তিকে সামনে রেখে ধর্মীয় প্রার্থনায় মেতেউঠেছে । চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের মহামুনি বৌদ্ব মন্দিরে জনপ্রিয় মহামুনি মেলায় হাজার হাজার নারী পুরুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে । মহামুনি মেলা উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তা দেবমিত্র বড়ুয়া মাইকেল বলেন, মেলার অনুষ্টানকে সুষ্ট ওশান্তির্পুণ ভাবে সম্পন্ন করতে মেলা উদযাপন কমিটির কমকর্তা ওসদস্যরা তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন । পাহাড়তলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রোকন উদ্দিন বলেন, মহামুৃনি মেলা প্রতি বৎসরের মতো এবার ও জাকঁজমক ভাবে অনুষ্টিত হচ্ছে । মহামুনি মেলা অনুষ্টানে স্থানীয় প্রশাসন সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করছে। মহামুনি মেলা প্রসঙ্গে রাউজান থানার ওসি জাহিদ হোসেনকে ফোন করে জানতে চাইলে, ওসি জাহিদ হোসেন বলেন, মহামুনি মেলায় রাউজান থানার পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে ।