আগামী বাজেটের আকার হবে ৮ লাখ কোটি টাকা: প্রতিমন্ত্রী

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেছেন, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৮ লাখ কোটি টাকা হবে। আসন্ন বাজেটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিফলন ঘটবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ১১টি বিষয় বাজেটে প্রতিফলিত হয়। এর বাইরেও কিছু বিষয় আছে, সেগুলোও রেখে বাজেট করা হবে।’

মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) আয়োজিত আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা ও আর্থিকখাতের বিশেষজ্ঞরা বলেন, নির্বাচন পরবর্তী নতুন সরকারের প্রথম দিকে বাজেট সংস্কারের জন্য এখন উপযুক্ত সময়। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পথ নানা প্রতিকূলতা ও সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে গুণগত মানের সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা, স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ও ব্যাংক খাতের দুরবস্থা দূর করতে হবে। এ সবই এখন বাজেট সংস্কারের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাপিড চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।

বাজেট ও সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটের আকার হবে ৮ লাখ কোটি টাকার। নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তৈরি করার কাজ শুরু করেছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, পঞ্চবার্ষিকীসহ অন্যান্য পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করা হয়।

এছাড়া মূল্যস্ফীতি কমানোর প্রক্রিয়া সুদহার বাড়ানো হয়েছে। সরকার কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, আমরা প্রকৃত অর্থে মুক্ত অর্থনীতির অনুসারী না, আমরা কল্যাণকর অর্থনীতির অনুসারী। কল্যাণ অর্থনীতিতে চলছে বাংলাদেশ। আসন্ন বাজেটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলন ঘটবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ১১টি বিষয় বাজেটে প্রতিফলিত হয়। এর বাইরেও সরকারের কিছু বিষয় আছে সেগুলো মাথায় রেখে বাজেট করা হবে।

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে ভূমির খাজনা আদায়ে তহসিল অফিস আছে। আর জেলা পর্যায়ে পর্যন্ত কর কর্মকতা আছে। উপজেলা পর্যায়েও মানুষের আয় বেড়েছে, করদাতা বাড়েনি। কর খেলাপিদের বা দুর্নীতিগ্রস্তদের বাড়তি সুযোগ দেয়া সাধারণ করদাতারা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যা করার আছে তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নজর দিতে হবে।

উচ্চ প্রবৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা অর্জনের টানা বাজেট ঘাটতি মেটাতে এতদিন সক্ষম হয়েছে সরকার। তবে আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানো ও সরকারি ব্যয় কমানো মুখোমুখি অবস্থানে থাকবে বলে মনে করেন রাপিড চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, আগামী বাজেটে সম্প্রসারণমূলক নীতি থাকলে মূল্যস্ফীতি কমানো চ্যালেঞ্জ হবে। আগামী বাজেটে বড় সংস্কার প্রয়োজন। নির্বাচনের আগে সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন ছিল। তবে নির্বাচনের পরে এখন সংস্কার করার উপযুক্ত সময়। যাতে বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হয়।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাজেট প্রণয়নে সংখ্যার বাইরে বেরিয়ে গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে যাতে বাজেট ব্যয় বাড়ানো যায়। বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট ব্যয় ব্যবস্থাপনা আরও বাড়ানোর জন্য সংস্কারের প্রস্তাব দেন এই অর্থনীতিবিদ।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‍্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, দেশে এখনও পরোক্ষ কর অনেক বেশি। অথচ উন্নত বিশ্বে প্রত্যক্ষ কর বেশি। এতদিন এসব জায়গায় সংস্কার আনা যায়নি। এখন নির্বাচনের পরে সংস্কার করার সুযোগ অনেক বেশি। তিনি বলেন, ১২০টি দেশে উন্মুক্ত বাজেট ইনডেক্স হয়। তবে বাংলাদেশে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের সঙ্গে অনেক বেশি প্রাক-বাজেট আলোচনা হয়। কিন্তু বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে বাজেট ফলোআপ থাকলে কাজে আসত। ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় এখন বাজেটের আকার ৮ গুন বেড়েছে কিন্তু সেই হারে রাজস্ব আয় বাড়েনি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন নিয়েও উদ্বিগ্ন। বছরের শেষ সময়ে তড়িঘড়ি না করে বছরজুড়ে এডিপি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া উচিত। এছাড়া আগামী দুই বছর পরে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ধারাবাহিকতার বিবেচনায় বাজেটে নগদ সহায়তা ও ভর্তুকির বিষয়ে এখন নজর দেয়া প্রয়োজন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, বাজেটে অনেক বেশি সংস্কার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংসদীয় কমিটির সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে হবে। যাতে বাজেট বাস্তবায়নের সময় ধরতে পারে। তিনি বলেন, এনবিআরের কর আদায় প্রক্রিয়া অনলাইন করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে এনফোর্সমেন্ট বাড়াতে হবে।

আলোচনায় ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগামী বাজেটে বেশ সংস্কারের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে আমরা ব্যবসা করতে পারি। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারলে কর দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাবে। তিনি বলেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি কর বাড়ানোর জন্য যথার্থ হবে না। এ অবস্থায় আগামী বাজেটে কার্যকর কর হার কমানো গেলে অনেকটা ভালো হবে। তার মতে, ব্যবসার উপর করের চাপ বাড়লে অর্থনীতি নিতে পারবে না। এ বছর ব্যবসা করতে না পারলে রাজস্ব আয় ও কর্মসংস্থান কমবে।

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম বাংলাদেশে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া এবং লম্বা বাজেট বক্তৃতার সমালোচনা করেন। তিনি বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের দাবি জানান। আর মূল্যস্ফীতি কমাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর শুল্ক কমানোর দাবি জানান ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধা।