বিপিএল আইপিএলে যেখানে মিল খুঁজে পান শেফার্ড

ভারতের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আইপিএলের পরেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) অবস্থান! এমন দাবি ছিল এক সময় বিপিএলের আয়োজকদেরও। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা সেই দাবি থেকে সরে এসেছেন। দুই টুর্নামেন্টের মধ্যে যে আকাশ-পাতালের পার্থক্য তা এখন আর বলে বোঝানোর কিছু নেই। তবে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার রোমারিও শেফার্ড দুই টুর্নামেন্টর মধ্যে একটি দারুণ মিল খুঁজে পান। তিনি আইপিএলে খেলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। এবার বিপিএলে প্রথমবারের মতো খেলতে এসেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন আইপিএল ও বিপিএলের অভিজ্ঞতার কথা। জানিয়েছেন নিজের লক্ষ্য ও টি-টোয়েন্টি নিয়ে ভাবনার গল্প। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

আইপিএল ও বিপিএল এর মধ্যে পার্থক্য কোথায় দেখেন?
শেফার্ড: দুই জায়গার ভক্তরাই অনেক প্যাশনেট। দুই জায়গাতেই দারুণ আতিথেয়তা পাওয়া যায়।

কন্ডিশনও এক রকম। বাংলাদেশের উইকেট অনেকটা ভারতের মতোই। তাই আমার মনে হয় ভেরি সিমিলার।
বিপিএলে কোথায় উন্নতির প্রয়োজন বলে মনে করেন?
শেফার্ড: বিপিএল পরিবর্তন (এই প্রশ্ন-উত্তর না রাখলেই ভালো) মাত্র কয়েকটি ম্যাচ খেললাম, আমার কোনো অভিযোগ নেই। আরও অনেক ম্যাচ খেলতে হবে। পিচ নিয়েও এখন কিছু বলার নেই। তাই কোথায় কোথায় উন্নতি দরকার বলতে পারবো না।

বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে?
শেফার্ড: খুব ভালো লাগছে, দারুণ একটা ফ্র্যাঞ্চাইজিকে প্রতিনিধিত্ব করছি। এটা দারুণ একটা জায়গা। সবমিলিয়ে ভালো লাগছে, স্বাচ্ছন্দ্যে আছি।
হ্যাঁ আমি শুনেছি, দর্শকরা আমার নাম ধরে উল্লাস করছিল। আমি এমন কেউ যাকে দর্শকরা মাঠে দেখতে চায়, বাংলাদেশে আমার সমর্থক আছে, এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমি তাদের বিনোদন দিতে চাই। খুবই ভালো লাগছিল। তবে নিজের কাজের দিকে মনোযোগ রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করলেন কোথা থেকে?
শেফার্ড: ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা থেকেই শুরু। এক সময় এটা আমার পেশা হয়ে গেল। প্রথমে মজা পেতাম বলে খেলতাম। এরপর অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ দল হয়ে খেললাম। এরপর আশা পূরণ হলো, জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেলাম। আমি খেলতে ভালোবাসতাম, এ কারণেই হয়তো ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। ছোটবেলা টিভিতে খেলা দেখতাম। তখন তো আর জানতাম না এটা আমার পেশা হয়ে উঠবে। তবে এটা হয়ে গেল এবং আমি খুবই খুশি।

বিপিএল নিয়ে খেলতে আসার আগে কথা হয়েছে কারও সঙ্গে?
শেফার্ড: খুব ভালো লাগছে, দারুণ একটা ফ্র্যাঞ্চাইজিকে প্রতিনিধিত্ব করছি। এটা দারুণ একটা জায়গা। সবমিলিয়ে ভালো লাগছে, স্বাচ্ছন্দ্যে আছি।
হ্যাঁ কয়েকজনকে কিছু প্রশ্ন করেছিলাম। যারা আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে এসে বিপিএল খেলে গেছে। উইকেট কেমন, খেলোয়াড়রা কেমন, দর্শক কেমন। খাবারের স্বাদ কেমন, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। ওশান থমাস ও শাই হোপ ও ব্রেন্ডন কিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের কন্ডিশন এসব নিয়ে কথা হয়েছে।

আপনার অলরাউন্ডার আইডল কে?
শেফার্ড: ছোটবেলা থেকেই আইডল ডোয়াইন ব্রাভো। সে এমন কেউ যে সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা দু’জন একসঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছি। সে আমাকে টি-২০ ক্যাপটাও পরিয়ে দিয়েছিল। নিজের আইডলের কাছ থেকে অভিষেক ক্যাপ নেয়া, এরপর একই দলে খেলা, অসাধারণ অনুভূতি।

বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে কীভাবে দেখেন?
শেফার্ড: সাকিবের সঙ্গে সিপিএল খেলেছি। আমার ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়েই খেলেছিল। গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স। ২০২১ সালে সম্ভবত। সে কুল ডুড। সাকিব আমাকে একটা জার্সি দিয়েছিল। সাকিবকে অনেক বছর ধরে দেখছি খেলছে। তার দেশের জন্য সে যা করেছে, দারুণ। এটা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। সে বড় নাম। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে যখন কথা বলবেন, সাকিবকে নিয়ে আপনাকে কথা বলতেই হবে।

পাওয়ার হিটিং উইদাউট মাসল পাওয়ার বেশি কাজে আসে?
শেফার্ড: যদি আপনি অনেক বিগ অ্যান্ড স্ট্রং না হন, আপনাকে ভালো টাইমিং করতে হবে। আমাদের জন্য হয়তো ব্যাপারটা মাসল পাওয়ার। তবে মাসল পাওয়ার ছাড়াও অনেকে ছক্কা হাঁকাচ্ছে। সেজন্য টাইমিং নিয়ে কাজ করতে হবে, উন্নতির পথ খুঁজতে হবে। মাসল আছে এমন কারও চাইতে ভালো টাইমিং করা ব্যাটার আরও বড় শট হাঁকাতে পারবে। তাই টাইমিং খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরুর গল্পটা আপনার সুখকর ছিল না। এখন কি মনে হয়?
শেফার্ড: হ্যাঁ, আমাকে আমার পাওয়ার হিটিং স্কিল উন্নতি করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমি উঠে এসেছি যেখান থেকে, সেখানে মাঠটা ছোট আর খুব ব্যস্ত এলাকা। স্কুল, হস্পিটাল হাই ট্রাফিক এরিয়া। তাই চাইলেই জোরে মারা যায় না। রাস্তা দিয়ে মানুষ হেঁটে যায়, ছোট ছোট বাচ্চারা হেঁটে যায়। তাই আপনি চাইলেই জোরে ছক্কা হাঁকাতে পারবেন না। অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে আমি হিটিং স্কিল উন্নতির জন্য কাজ করা শুরু করি। আমি এখনো উন্নতির চেষ্টা করছি। পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য আপনাকে নিয়মিত প্র্যাকটিস করে যেতে হবে।

বিপিএল ও আইপিএল দিয়ে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি কেমন হবে বলে মনে করেন?
শেফার্ড: হ্যাঁ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কন্ডিশন এমনই। উইকেট স্লো ও লো। টপ কোয়ালিটি স্পিনারদের বিপক্ষে খেলে ভালো প্রস্তুতি হয়ে যায়। এদের বিপক্ষেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লড়তে হয়। তাই আমার জন্য এটা দারুণ প্রস্তুতি। লীগের এসব অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রয়োগ করা যায়। উইকেট একই, বোলার একই তাই অবশ্যই ভালো প্রস্তুতি।