‘শরীর ভালো থাকলে ভাগ্যও খোলে’

ব্যাটে-বলে চৌকস নৈপুণ্য দেখালেন আন্দ্রে রাসেল। বল হাতে তিন উইকেট নেয়ার পর দেখালেন বিধ্বংসী ব্যাটিং। আর ম্যাচসেরা নৈপুণ্য প্রদর্শন শেষে ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার বলেন, ‘আজ শরীর ভালো ছিল। শরীর ভালো থাকলে কখনো কখনো ভাগ্যকেও পাশে পাওয়া যায়।’ মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ম্যাচে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দল রংপুর রাইডার্সকে ৬ উইকেটে হারায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। রংপুরের দেয়া ১৫২ রানের টার্গেটে ১৪ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় গত টানা দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী ইনিংসে মাত্র ১২ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন রাসেল। তিনি হাঁকান সমান চারটি করে চার-ছয়। আগের ম্যাচে সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে সম্ভাবনা জাগিয়ে হেরে যায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। চলতি আসরে ওদিনই প্রথমবার খেলতে নামেন আন্দ্রে রাসেল। সেদিন ম্যাচ শেষে আন্দ্রে রাসেলকে নিয়ে অধিনায়ক লিটন কুমার দাস বলেছিলেন, ‘আজকে পারেনি, পরের ম্যাচ জেতাবে।’ পরদিন ঠিকই চেনা বিধ্বংসী চেহারায় ফিরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে জেতালেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার।

আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে তার যা পারফরম্যান্স ছিল, সেটিকে মোটা দাগে ব্যর্থতা বলার জো নেই। তবে তার কাছে তো দাবি একটু বেশিই থাকে! যখন ক্রিজে গিয়েছিলেন, জয়ের জন্য দলের লাগত ২০ বলে ৫১ রান।
সেই অবস্থায় ১৪ বলে ২৩ রান করেন রাসেল। বিশেষ করে, অন্য প্রান্তে তখন দারুণ খেলছিলেন লিটন। কিন্তু তার পরও রাসেলের ওপর ভরসা করে তাকেই বেশি স্ট্রাইক দিচ্ছিলেন কুমিল্লা অধিনায়ক। তাতে লাভ হয়নি সেদিন। তলানির দিকের দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের কাছে ১২ রানে হেরে যায় ফেভারিট কুমিল্লা। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করাতেই কিছুটা বিরক্তি নিয়ে লিটন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, রাসেলের ওপর ভরসা তার আছে। সেই ভরসার প্রতিদান ২৪ ঘণ্টা পরই মিলেছে। মঙ্গলবার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচে সমীকরণ অবশ্য একটু সহজ ছিল। রাসেল ক্রিজে যাওয়ার সময় কুমিল্লার প্রয়োজন ছিল ৩৩ বলে ৪৮ রানের। তবে সেই রান করতে লেগেছে তাদের স্রেফ ১৯ বল। এর মধ্যে রাসেল ১২ বল খেলে করেন অপরাজিত ৪৩ রান। এদিন লিটনও ফর্ম দেখাচ্ছিলেন। ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারতেন তিনিও।

আর ম্যাচের পর চওড়া হাসিতে লিটন বলেন, ‘দর্শকের জন্য খুব ভালো হয়েছে, অনেক বড় বড় ছয় মেরেছে। আমি ব্যাটিং করলে হয়তো এত বড় ছয় মারতে নাও পারতাম (হাসি)।’ কুমিল্লার কোচ সালাউদ্দিন অবশ্য খুব একটা উচ্ছ্বাস দেখালেন না। বরং মনে করিয়ে দিলেন, রাসেলের কাছ থেকে এরকম কিছু প্রত্যাশিতই। তিনি বলেন ‘স্বাভাবিক, সবাই প্রত্যাশা করে সে এই ধরনের খেলা খেলবে। এই কারণেই সেরা ফিনিশারদের একজন সে।’ রাসেল নিজে আগে বললেন দলের জয়ের কথা। আগের ম্যাচে হারার পর নিজেদের মধ্যে যে কথা হয়েছিল তাদের, সেসবের বাস্তবায়ন করতে পারায় খুশি তিনি। রাসেল বলেন, ‘আমাদের জন্য ম্যাচটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গতকালকে হেরেছি, আমরা জানতাম ভুলগুলোয় কোথায় ছিল।

হোটেলে ফিরে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে আমাদের। বোলার ও ব্যাটাররা একসঙ্গে খুব ভালো পরিকল্পনা করেছি আমরা। খুব ভালো দলীয় প্রচেষ্টা ছিল এই ম্যাচে। দলের জয়ে আমি খুশি।’ শুধু ব্যাটিংই নয়, রাসেল এ দিন বল হাতেও ছিলেন কার্যকর। আগের ম্যাচে ৩৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। এই ম্যাচে প্রথম বলেই বিদায় করেন তিনি প্রতিপক্ষ অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানকে। পরে ত্রয়োদশ ওভারে ফিরে আউট করেন রংপুরের ইংলিশ ব্যাটসম্যান টম মুরসকে। শেষ ওভারে নেন ইমরান তাহিরের উইকেট। ব্যাটে-বলে পরিপূর্ণ পারফরম্যান্স দেখাতে পেরে তৃপ্তি তার কণ্ঠে। রাসেল বলেন, “প্রথম ওভার করার পরই অনুভব করি, আমার শরীর ভালো লাগছে আজকে। অধিনায়ককে বলি, ‘তোমার যখনই মনে হয়, আমি প্রস্তুত আছি (বোলিং করতে)।’ আজকে আমি বোলিং করতে মুখিয়ে ছিলাম। যখনই শরীর ভালো থাকে এবং বোলিংয়ের তাড়না থাকে, কখনও কখনও ভাগ্যকেও পাশে পাওয়া যায়। আমি খুশি যে তিন উইকেট নিয়ে দলে অবদান রাখতে পেরেছি এবং ব্যাট হাতেও পরে খেলা শেষ করতে পেরেছি। আমার মনে হয়, আমার যা কাজ, আজকে তা করতে পেরেছি। অলরাউন্ডার হিসেবে এটির জন্যই পরিচিতি আমার।”