কক্সবাজার: কঠিন চ্যালেঞ্জে দলীয় এমপিরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি:: ৭ জানুয়ারি বহুল প্রতীক্ষিত ভোট। সারাদেশের মতো সমুদ্র জনপদ কক্সবাজারেও লেগেছে ভোটের হাওয়া। কক্সবাজারে নৌকার প্রতিপক্ষরাই মাঠ গরম করে রেখেছেন। চলছে কথার লড়াই। প্রতিপক্ষকে কথাঘাতে জর্জরিত করা বাংলাদেশের ভোটযুদ্ধের পুরনো সংস্কৃতি। হয় ব্যক্তির চরিত্র নিয়ে চলে কথার ঠেস, নয়তো প্রতীক নিয়ে চলে কথার রেশ। নয়া কথা, নয়া ডায়লগ ডেলিভারি দিয়েও অনেক ভোটার দলে ভিড়ায় প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা।

এবার কক্সবাজারের চারটি আসনের মধ্যে কক্সবাজার-১ আসনে নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম। কক্সবাজার-২ আসনে নৌকার প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিকের শক্ত প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের প্রার্থী শরিফ বাদশাহ। কক্সবাজার-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে সরব স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। এছাড়া কল্যাণ পার্টির আবদুল আউয়াল মামুনও আছেন আলোচনায়। কক্সবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহিন আক্তারের শক্ত প্রতিপক্ষ টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর। কক্সবাজার-২ ও ৪ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় এমপিরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। তবে তাদের বিজয় ঠেকানো যাবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে হাতঘড়িতে ধরাশীয় হতে পারেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম। ঋণ খেলাপির অভিযোগে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় নৌকার কোন প্রার্থী নেই। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম এবং হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং গেল পাঁচ বছর এমপি থাকায় এলাকায় নিজস্ব অবস্থান রয়েছে জাফর আলমের। একই সঙ্গে নানা অভিযোগ ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন বারবার। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ গেল ৫ বছর ধরে এমপি জাফর আলম সন্ত্রাস, দখলবাজি, দুর্নীতিসহ নানা অপকর্ম করেছেন। তার হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মী। বেড়েছে দলীয় কোন্দলও। আওয়ামী লীগের ত্যাগী এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে সন্ত্রাস, চোরদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট।

অপরদিকে নিজের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর সালাউদ্দিন আহমেদ তার অনুসারীদের নিয়ে কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে সমর্থন দেন। একই সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে সভা আহবান করে হাতঘড়ি প্রতীককে বিজয়ী করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি। এরপর থেকে বদলে যেতে থাকে চকরিয়া-পেকুয়ায় ভোটের হিসাব। দিন দিন কল্যাণ পার্টির হাতঘড়ির সমর্থন বাড়তে থাকে। অনেকে মনে করছেন হাড্ডাহাড্ডি লাড়াই হবে এই আসনে।

হাতঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল ইব্রাহিম বলেন, এই আসনের মানুষ একটি নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা চায়। গেল পাঁচ বছর যে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি হয়েছিলো এবার মানুষ ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, চোর ও ডাকাতের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ ন্যায়ের পক্ষে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম বলেন, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভোট হলে চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ ঘরের ছেলে জাফরকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের শক্ত প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ন্যাশনাল মুভমেন্টের (বিএনএম) প্রার্থী স্বল্প শিক্ষিত শরীফ বাদশাহ। শিক্ষাগত যোগ্যতায় আশেক উল্লাহর দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি থাকলেও মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শরিফ বাদশাহ। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহর বিরুদ্ধে বিতর্কিত অভিযোগ না থাকলেও দলের ভেতরে শক্ত প্রতিপক্ষ তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশার ছেলের বিরোধিতা করেন এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। সেই সময়কার মধুর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী। মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ এমপির সঙ্গে বছর দশেক থেকে রয়েছে দ্বন্দ্ব। তিনিও গোপনে শরীফ বাদশার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা পরিবেশ বিজ্ঞানী আনছারুল করিম, উপজেলা যুবলীগ নেতা শাহজাহানসহ বিশাল একটি গ্রুপ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যে অংশটি শরিফ বাদশাহর হয়ে ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় আশেক উল্লাহ রফিকের ভাল অবস্থান থাকলেও শরিফ বাদশাহর সেই অবস্থান নেই ।