লালদিয়ার চরে মায়ের্স্কের টার্মিনাল নির্মাণ প্রস্তাব

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তীরে পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ শিপিং কোম্পানি ডেনমার্কের এপি-মোলার মায়ের্স্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম কে কন্টেইনার  টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাবে মৌখিকভাবে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  প্রায় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাবিত প্রকল্পটি স্বল্প সময়ের মধ্যে  বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

সোমবার ( ২৮ আগষ্ট )  সকালে এপি-মোলার মায়ের্স্ক গ্রুপের গ্রুপ চেয়ারম্যান রবার্ট মার্সক উগলার প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে টার্মিনাল নির্মাণে সরকারের সম্মতির কথা জানান। এ  টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে।
এপিএম এর  এ বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের লজিস্টিক্স সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর প্রতিষ্ঠানটি দ্রুততম সময়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করবে বলে জানিয়েছে। এ  সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

বিদেশি এই প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ ও বিনিয়োগের বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল  বলেন সব মিলিয়ে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে বন্দরকেন্দ্রিক ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হতে পারে। বন্দরকেন্দ্রিক বিনিয়োগ দিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত শক্তিশালী করা যাবে। এতে একদিকে যেমন দেশের লজিস্টিক্স সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী হবে, তেমনি মায়ের্স্কের পথ অনুসরণ করে বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানিও এখানে বিনিয়োগ করবে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে এ খাতে প্রযুক্তিনির্ভর বিনিয়োগ মাইফলক হিসেবে কাজ করবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে তারা ২১টি কনটেইনার জাহাজ পরিচালনা করছে। এ ছাড়া কনটেইনার পরিবহন, গুদাম ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিংসহ লজিস্টিকস খাতে ব্যবসা করছে। বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানির কম-বেশি ৩০ শতাংশ কনটেইনার একাই আনা-নেওয়া করছে কোম্পানিটি। বাংলাদেশে শিপিং ও লজিস্টিকস খাতে ব্যবসা থাকলেও টার্মিনাল পরিচালনার ব্যবসা নেই তাদের। এপিএম টার্মিনালের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৩৭টি দেশে ৬৫টি টার্মিনাল ও বন্দর পরিচালনা করছে তারা। বাংলাদেশে লালদিয়া টার্মিনালের প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হতে পারে তাদের। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও স্বয়ংক্রিয় টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় গ্রুপটি।

উল্লেখ্য ২০২১ সালের ১ মার্চ অবৈধভাবে দখলে থাকা ২৩শ পরিবারকে উচ্ছেদ করে লালদিয়ার চর দখলমুক্ত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর সেখানে বালি-মাটি ফেলে পুরো ভূমি সমতল করা হয়। ৫২ একর জমির চারপাশে দেওয়া হয় সীমানা প্রাচীর। এর আগে ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর চৌধুরী লালদিয়ার চরের একাংশ থেকে ৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করেছিলেন। উদ্ধারকৃত জায়গাটি তুলে দেওয়া হয়েছিল দেশের এক শীর্ষ ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানকে। ইনকনট্রেড নামে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো নির্মাণ করে বন্দরের সেই জায়গায় এক যুগ ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই জায়গাটিও বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণের জন্য একাধিকবার বিভিন্ন সভায় প্রস্তাব দিয়েছিলেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।