বড় অঘটনের জন্ম দিতে বসেছিল আফগানিস্তান

বিশ্বকাপ জমে গেছে আগের দিনই। হেডিংলিতে উড়তে থাকা ইংল্যান্ডকে মাটিতে নামিয়ে কাজটি করেছে শ্রীলঙ্কা। গতকাল সাউদাম্পটনে তার চেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিতে বসেছিল আফগানিস্তান। নবী, রশীদ, মুজিবুরের স্পিন জাদুতে ২২৪ রানেই আটকে দেয় ভারতকে। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও মন্দ হয়নি। এক পর্যায়ে মনেই হয়েছিল ভারতকে বুঝি রুখে দিয়ে বিশ্বকাপে নতুন রং যোগ করতে যাচ্ছে আফগানিস্তান! কিন্তু না, ব্যাটসম্যানদের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করতে না পারার খেসারত দিয়েই আফগানরা ম্যাচটি হারে ১১ রানে। আফগানদের ভুলে পাওয়া জয়ে তিনে চলে এসেছে ভারত। পাঁচ ম্যাচে চার জয় নিয়ে তাদের সংগ্রহ এখন নয় পয়েন্ট।

হেডেংলিতে ধীর গতির উইকেটের পূর্ণ সুযোগ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা।
এ ধরনের উইকেটে ব্যাটিং করতে অনভ্যস্ত ইংল্যান্ড রান তাড়ার পরিকল্পনাই সাজাতে পারেনি। গতকাল সাউদাম্পটনে ধীর গতির উইকেট কাজে লাগিয়ে ভারতের রানবন্যা আটকে দিয়েছে আফগানিস্তান। কিন্তু ২২৫ রানের লক্ষ্যে নেমে বোলিংয়ে দেখানো বুদ্ধির প্রয়োগ দেখাতে পারেনি ব্যাটসম্যানরা। মোহাম্মদ নবী চেষ্টা করেছেন। তবে তার চেষ্টাটা হয়েছে বড্ড দেরিতে। এক পর্যায়ে তিন ওভারে ২৪ রানের প্রয়োজন ছিল আফগানিস্তানের। নবীর পরিকল্পনার ঘাটতির কারণে ১৬ রানের সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ ওভারে। মোহাম্মদ শামির করা শেষ ওভারের প্রথম বলে চারও মেরেছিলেন। কিন্তু তৃতীয় বলে লং অনের লম্বা বাউন্ডারি দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে ফিরেছেন নবী (৫২)। পরের বলে আফতাব এবং পঞ্চম বলে মুজিব-উর রহমানকেও বোল্ড করে ভারতকে ১১ রানে জয় এনে দেয়ার পাশাপাশি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন শামি। এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে দশম ও এই বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক। এর আগে ১৯৮৭ সালে প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেন চেতন শর্মা।

এদিন ইনিংসের শুরুতে হযরত উল্লাহ জাজাই ফিরে গেলেও পথ হারায়নি আফগানিস্তান। গুলবদিন নাইব ও রহমত শাহ দলকে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন। দলীয় ৬৪ রানে ধৈর্য হারালেন নাইব। পান্ডিয়াকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন সবাইকে বিস্মিত করে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা নাইব (২৭)। আফগানিস্তান তাদের ইনিংসের অন্যতম সেরা সময় কাটিয়েছে এরপর। দলের সবচেয়ে ঠান্ডা মাথার দুজন রহমত ও হাশমতউল্লাহ শহীদি দারুণভাবে সামাল দিয়েছেন ভারতের দুই রিস্ট স্পিনারকে। কিন্তু ম্যাচটা এক ওভারেই ভারতের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। ৪২ রানের জুটির দুই ব্যাটসম্যানকে তিন বলের মধ্যে ফেরত পাঠিয়েছেন বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে। শেষ ওভারে হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট পেয়েও তাই ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি বুমরার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারেননি মোহাম্মদ শামি। শামি গতকাল প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়ে প্রথম স্পেলে দুর্দান্ত বল করেছেন। শামি দলে ঢুকেছেন ভুবনেশ্বর কুমার চোটে পড়েছেন বলেই।

পাঁচটি ম্যাচই হেরে ১০ দলের মেগা টুর্নামেন্টে ‘লাস্ট বয়’ আফগানরা। এমন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কিন্তু শুরু থেকেই আফগান স্পিনারদের সামনে সুবিধা করতে পারেনি ভারতের ব্যাটসম্যানরা। স্পিন খেলতে পারে বলে সুনাম আছে যাদের, সেই ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপই আফগান স্পিনের সামনে কী অসহায় দেখাচ্ছিল! চার স্পিনার মুজিব উর রেহমান, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান ও রহমত শাহর ৩৪ ওভার থেকে ভারত তুলতে পেরেছে মাত্র ১১৯ রান! একের পর এক ডট বল খেলে চাপ তৈরি করেছে নিজেদের ওপর। শুধু যে রান আটকেছে তাই নয়, ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মেরুদ-টাও ভেঙেছেন স্পিনাররাই। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকেই উইকেট দিয়ে এসেছেন স্পিনারদের। আফগান স্পিনারদের সামনে কতটা অসহায় দেখিয়েছে ভারতকে, তার আদর্শ উদাহরণ মহেন্দ্র সিং ধোনির ইনিংস। ৫২ বলে মাত্র ২৮ রান তুলতে পারা ধোনি রানের জন্য রীতিমত হাঁসফাঁস করতে করতে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন রশিদ খানকে। শুধু ধোনি কেন, কোহলি বাদে সব ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা রানের জন্য হাঁসহাঁফ করেছেন। লোকেশ রাহুল করেছেন ৫৩ বলে ৩০, বিজয় শংকর ৪১ বলে ২৯। কেদার যাদব ৫২ করেছেন বটে, তবে প্রতিটি রান তুলতে ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। রশিদ খানের করা ৪৭তম ওভারে তো এক রানও বের করতে পারেননি কেদার। পুরো ১০ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৬ রানের খরচায় নিয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪০ করা রোহিত শর্মার উইকেট নিয়েছেন মুজিব উর রহমান। মুজিবের তৈরি করা চাপ মাঝের ওভারগুলোতে ধরে রেখেছেন দলের অন্যতম সিনিয়র বোলার নবী। ৯ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৩৩ রান, তুলে নিয়েছেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলির মহামূল্যবান উইকেট দুটি। বাকিরা হাত খুলতে না পারলেও কোহলি ঠিকই খেলেছেন নিজের মতো। ৬৩ বলে ৬৭ করা কোহলিকে ফিরিয়ে আফগানদের সবচেয়ে বড় উপহারটা দিয়েছেন নবীই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেদম মার খেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করা রশিদ গতকাল ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১টি, তবে ১০ ওভারে রানও দিয়েছেন মাত্র ৩৮। তিন মূল স্পিনারের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েই কি না, অনিয়মিত স্পিনার রহমত শাহও দারুণ বল করেছেন। লেগ স্পিনে ফিরিয়েছেন বিজয় শংকরকে, ৫ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২২ রান।